আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের যথার্থই সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার দরুন একদিকে যেমন হয়ে ওঠে পরিবারের জন্য বোঝা অন্যদিকে সামাজিকভাবেও নানা হেওপ্রতিপন্নতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতেও কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা অন্তশক্তিকে তাদের অদম্য ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হন তারা।
এরকমই একজন মানুষ আফজাল হোসাইন, যিনি তার বিকলাঙ্গ একটিমাত্র হাত নিয়েই সমাজের শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন অনন্য উদাহরণ। বেঁচে থাকার জন্য, সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য শৈশবে পিতৃহারা আফজাল যেনো কল্পকাহিনিকেও হার মানিয়েছে। চলার পথে মেনে নিতে হয়েছে নিদারুন অবহেলা, বাধাবিপত্তি, তবু হার মানেননি তিনি। সমাজের বোঝা হয়ে নয় বরং উচ্চশিক্ষিত হয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের।
আফজাল হোসাইন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউরা উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্টাই গ্রামে ১ লা মার্চ ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত আব্দুল লতিফ আর মাতা মোছাম্মৎ ফজিরুন বেগম। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আফজাল তৃতীয়।
প্রতিবন্ধী হওয়ার দরুন তাকে সহ্য করতে হয়েছে নিদারুন কষ্ট, শিকার হতে হয়েছে নানাবিধ অবহেলার, তবু থেমে থাকেননি তিনি। জামেয়া ইসলামিয়া কর্মধা টাইটেল মাদরাসায় ১০ শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর মা ফজিরুন বেগমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিলেট বিশ্বনাথের জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদরাসা থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। এসময় তাকে পড়াশুনা চালানোর জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। পড়াতে হয়েছে লজিং শিক্ষক হিসেবেও।
অতঃপর মাস্টার্স পাশ করার পর কম্পিউটার ও ফার্মেসীর উপর ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। মায়ের অনুরোধ রাখতে মাত্র ২৩০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে এলাকার বাজারে ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করেন ২০১০ সালে। পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্টের ব্যবসাও চালিয়ে যান। কর্মক্ষেত্রে কর্মঠ ও সৎ থাকার দরুন এখন মাসে আয় হয় ১৫০০০ টাকার বেশি।
যেকোনো প্রয়োজনে এলাকার মানুষের পাশে দাড়ান তিনি। একই সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে ২৪ ঘন্টাই তিনি প্রস্তুত থাকেন। এলাকার সাধারন মানুষ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য সাধারন পরীক্ষার জন্য তার কাছে আসেন। তাকে একজন সৎ ব্যবসায়ী হিসেবেই যানেন সবাই। তিনি দুই বছর পর্যন্ত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আফজাল হোসাইন মূলত তার প্রচেষ্টা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করেন এবং সফল হন, সফল হন একজন প্রতিবন্ধী, যেনো একটি অবহেলিত সমাজ।
শারীরিক প্রতিবন্ধীত্ব আমাদের সমাজে একধরনের প্রতিবন্ধকতা। আর এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সফল হয়েছেন আফজাল হোসাইন। এ যেনো সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে প্রতিবন্ধীত্ব কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সৎ আর কর্মঠ থাকলে যেকোনো কাজকেই সম্ভবপর করা যার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। আমাদের উচিত এরকম আফজাল হোসাইনদের অনুপ্রেরণা দেওয়া, চলার পথের বাধা না হয়ে তাদের সাফল্যের অংশীদার হওয়া।
এরকম সফল ব্যক্তিদের সফলতার গল্প জানতে এখানে ক্লিক করুন
এস এম শাহীন আহমেদ নাজীম
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট