কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, তৎক্ষণাৎ আমাদের মস্তিষ্কে যে তথ্যগুলো সহজে চলে আসে এবং সেটিকে ঘিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতাকে অ্যাভেলেবিটি বায়াস বলা হয়।
এই বায়াস আপনাকে বাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে ঠেলে দিতে পারে। কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কেবলমাত্র একটি তথ্যের ওপর নির্ভর করা অনেকটাই অপর্যাপ্ত। কারণ আমাদের ভেতর বেশিরভাগই নেতিবাচক দিকগুলোর দিকে ফোকাস করার প্রবণতা বেশি।
১৯৭৩ সালে দুজন আচরণগত মনোবিজ্ঞানী অ্যামোস টিভার্স্কি এবং ড্যানিয়েল কাহনেমান, এর উপর একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘k’ বর্ণটি প্রথমে অবস্থান করে এমন শব্দসংখ্যা (kitchen, Kangaroo ইত্যাদি) বেশি? নাকি এটি তৃতীয় বর্ণ হিসেবে থাকে এমন শব্দসংখ্যা (Ask, Cake, Bike ইত্যাদি) বেশি?
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেকার প্রায় ৭০ শতাংশর উত্তর ছিল প্রথমে ‘k’ অবস্থান করে এমন শব্দ সংখ্যা বেশি। কিন্তু আসলে ‘k’ তৃতীয় বর্ণ হিসেবে থাকে এমন শব্দ দ্বিগুণ। হলে অংশগ্রহণকারীরা প্রথমটিকে কেন নির্বাচন করল? এর সহজ উত্তর হচ্ছে অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস । আমাদের মস্তিষ্ক স্বভাবতই অলস এবং সবসময় শর্টকাট খোঁজে । যেহেতু প্রথম অক্ষর ‘k’ দিয়ে শব্দ ভাবতে সহজ ছিল, তাই অংশগ্রহণকারীরা প্রথমটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
আমরা যারা সব ডেভলপমেন্ট বই পড়তে পছন্দ করি, তারা নিশ্চয়ই “Thinking, fast and slow” বইটির নাম শুনেছি। এই ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার বইটির লেখকও কিন্তু অ্যামোস টিভার্স্কি এবং ড্যানিয়েল কাহনেমান । এই বইটিতে দুটি সিস্টেম বা পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে।
সিস্টেম ১: দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং স্বয়ংক্রিয় কার্যপদ্ধতি।
সিস্টেম ২: সুচিন্তা এবং যৌক্তিক চিন্তা।
সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১নং সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। যেহেতু আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় কম এফোরট দিয়ে দ্রুত ঝমেলা মিটিয়ে ফেলতে চায়, তাই যেকোনো কিছু ঘটলেই, আমরা কেবল মাত্র একটি কারণকে দায়ী করি এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যে এর ফলে এটি ঘটেছে। তবে সিস্টেম-১ যে পুরোপুরি অকার্যকর, তা নয় কিন্তু। জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়। তাই আপনাকে বুঝতে হবে কখন সিস্টেম-১ এবং কখন সিস্টেম-২ মোতাবেক চলতে হবে ।
‘অ্যাভেলেবিটি বায়াস’ সম্পর্কে আরও জানতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গাইডলাইন্স পেতে এই অসাধারণ বইটি পড়ে ফেলতে পারেন । তবে বইটিতে থাকা ৩টি ভালো উপদেশ বা লেসন আমি এখনই আপনাদের জানিয়ে ব্লগটি শেষ করছি।
লেসনগুলো হচ্ছেঃ
১) যা পূর্বেই বলেছি, আমাদের মস্তিষ্ক দুটো সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে চলে। একটি হচ্ছে সচেতনতা এবং আরেকটি হচ্ছে অটোম্যাটিক মোড ।
২) আমাদের মস্তিষ্ক অলস এবং সবসময় চেষ্টা করে সম্পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে।
৩) অর্থকড়ি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমোশন বাসায় রেখে আসাই শ্রেয় ।
আমাদের আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
ফাহমিদা হামিদ দীপা
কনটেন্ট রাইটিং ইন্টার্ন
YSSE.