গত ৩ই জুন ২০২১সালে YSSE আয়োজিত তরুণদের দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা মূলক অনুষ্ঠান “আজকের তারুণ্য” এর ৪৯ তম পর্বের অতিথি হিসেবে ছিলেন “মিনার আহমেদ নিলয়”। YSSE এর কনটেন্ট রাইটিং বিভাগের ইন্টার্ন নুজহাত সাবাবা তিয়াস এবং বিসনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ইন্টার্ন মোঃ মাহমুদুল আলম এর যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল YSSE এর ফেসবুক পেজ থেকে।
মিনার আহমেদ নিলয় বর্তমানে M.A.N Officials এর সংগীত প্রযোজক। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে, তিনি একজন ফ্রিল্যান্স প্রোফেশনাল DJ । তিনি রোবোটিক্স এবং বিজ্ঞান প্রকল্প আবিষ্কারের জন্য অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছেন।
বর্তমানে তিনি State university of Bangladesh এর CSE ডিপার্টমেন্ট এর চতুর্থ সেমিস্টারে এ পড়াশুনা করছেন। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আগে থেকেই রোবোটিক্স সম্পর্কিত প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করতেন এবং বিভিন্ন সাইন্স ফেয়ার এ অংশগ্রহণ করতেন। ৯ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে রানার্স আপ হন তিনি। এরপর Hsc এর পর নিজের শখ থেকে মিউজিক এর ক্যারিয়ার শুরু করা। তার জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে CSE নিয়ে আগানো। তিনি নিজে একজন টেকনোলজি প্রিয়, যেকোনো জিনিস নিয়ে ইনভেন্ট, আপডেট, রিসার্চ করতে অনেক পছন্দ করেন। বর্তমানে দুইটি ক্যারিয়ার একসাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শুরুতে কীভাবে ভাবলেন যে মিউজিক কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিবেন জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “এটার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমি যখন ক্লাস ৭-৮ এ ছিলাম তখন ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতাম। তো সেজন্য আমার ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে অনেক কাজ করতে হতো। আর যখন সাউন্ড ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে কাজ করলাম তখন হঠাত মাথায় আসে যে সাউন্ড বক্স বানাবো, সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে কাজ করব। আর সেই ভাবনা থেকেই আস্তে আস্তে মিউজিক ও আসা।”
DJ ক্যারিয়ার এ আসার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে বা কী ছিল জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমি আসলে সবকিছু ইনস্ট্যান্টলি চিন্তা করি। অনলাইনের এক পেজে DJ সম্পর্কীয় একটা কন্ট্রোলার টাইপ জিনিস দেখায় অনেক ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। তারপর সেটা নিয়ে অনেক রিসার্চ করলাম যে জিনিসটা কী এবং কী কী কাজে লাগে। তখন সেই জিনিসটা কেনার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিলনা। Hsc এর পর পড়াশুনার পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং করা শুরু করি । আর সেই ফ্রিলান্সিং থেকে আয় করা টাকা দিয়ে DJ ক্যারিয়ার এ ইনভেস্ট করি।”
বর্তমানে CSE থেকে DJ ক্যারিয়ার জিনিসটা অনেক বিরল। আজকে তার এই পজিশনে আসতে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং সেগুলো মোকাবেলা কীভাবে করেছেন জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “যেহেতু আমি ইউনিভার্সিটি শুরু হওয়ার আগেই DJ ক্যারিয়ার শুরু করি, সেই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যে DJ এর পাশাপাশি পড়াশুনাটা কে কীভাবে ম্যানেজ করব। State university এর আগে আমি Daffodil university তে ছিলাম। DJ এর কারণে আমি নিয়মিত ক্লাস, ল্যাব করতে না পারায় আমার রেজাল্ট অনেক খারাপ হয় যার কারণে আমি Daffodil ছেড়ে দেই। তারপর ৬মাস পড়াশুনা থেকে ব্রেক নিয়ে State university তে ভর্তি হয়ে সবকিছু একসাথে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তার মধ্যে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে টাইম মেইনটেইন করে পড়াশুনা আর DJ টা কে একসাথে চালানো।”
তিনি যেহেতু রোবোটিক্স নিয়ে অনেক আগ্রহী, অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ভবিষ্যতে কী এটা নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা আছে কী না জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন,”আগে থেকেই যেহেতু রোবোটিক্স ও ইলেকট্রনিক্স এর প্রতি ঝুঁকি আছে, তাই আমার ইচ্ছা পড়াশুনা যখন শেষ হবে তখন NASA, Google এর মত বড় বড় প্রতিষ্ঠান যারা Artificial intelligence নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে কাজ করা।”
দুটি ক্যারিয়ার তিনি একসাথে চালিয়ে যাচ্ছেন আর এই ব্যাপারে তার পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “২০১৭সালের শেষের দিকে DJ ক্যারিয়ার শুরু করি। আর একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের জন্য ১লাখ টাকার মতো ইনভেস্ট করতে হয় তাকে এই DJ এর পিছনে, যার কারণে তার আম্মু প্রথমে সাপোর্ট করেননি। তাছাড়া প্রথমদিকে যখন নিজের ঐ মেশিন নিয়ে কাজ করতাম তখন নানান মানুষ নানান রকমের কথা বলতো। আর সে সবকিছু থেকে আমার আরো কনফিডেন্ট কাজ করে যে আমাকে করতেই হবে, সেই মনোভাব নিয়েই এই পর্যন্ত আসা।”
একজন ভালো DJ হয়ে উঠতে কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “আমি অনেক ইন্টারন্যাশনাল DJ দের কাজ অনুসরণ করার পর জানলাম যে, শুধু মিউজিক এর প্লে বাটন অন করে দিলেই DJ হওয়া যায়না। সেটার জন্য দরকার হয় নানান স্কিলস। যেমন – মিউজিক এর কম্পোজিশন স্কেল বুঝতে পারা, একটা গান কীভাবে তৈরী করা হয় সেটা জানা, ইনস্ট্যান্ট একটা গান এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টিউন টা কোন ভার্স এ যাচ্ছে সেটা বোঝার ক্ষমতা থাকা। এইসব গুন কারো মধ্যে থাকা মানে সে একজন পরিপূর্ণ মিউজিসিয়ান। আর এই মিউজিসিয়ান থেকে আস্তে আস্তে DJ এর দিকে এগোতে হয়। আমার দৃষ্টিতে একজন DJ হতে হলে আগে একজন মিউজিক প্রোডিউসার হতে হবে তাহলেই সে মিউজিক সম্পর্কে পুরোপরিভাবে জানতে পারবে।”
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যদি কেউ DJ কে নিজের পেশা হিসেবে নিতে চায় সেই ক্ষেত্রে তার মতামত কী জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “প্রথমত, এটাকে পেশা হিসেবে নিতে হলে মিউজিক এর বেসিক জানতে হবে, গান এর লিরিক্স বুঝা এবং লাইভ পারফরম্যান্স করার ক্ষমতা যদি একজনের মধ্যে থেকে থাকে সেক্ষেত্রে সে DJ কে পেশা হিসেবে নিতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে এবং সেই কাজের পিছনে লেগে থাকতে হবে।”
ভবিষ্যতে যারা DJ হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ” যারা এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান, তাদের নিজেদের আগে বুঝতে হবে যে কেন তারা এটি বেছে নিচ্ছেন ক্যারিয়ার হিসেবে, এই কাজের জন্য যে যে স্কিলস দরকার তা নিজেদের মধ্যে আছে কী না দেখতে হবে, অনেক রকম স্যাক্রিফাইস করার মেন্টালিটি এবং প্রচুর সময় নিয়ে নামতে হবে।”
এই লাইভ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, কীভাবে পড়াশুনার পাশাপাশি ও আমরা আমাদের শখগুলোকে পূরণ করতে পারি, কীভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারি।
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
ওয়াইএসএসই