কৃষ্ণগহ্বর বলতে আমরা বুঝি কোনো বিশাল জায়গাজুড়ে ঘুরন্ত কোনো বলয় আর ভিতরে একটা ফাঁকা কালো অংশ যা ঠিকমতো দেখাই যায় না। অর্থাৎ, কৃষ্ণগহ্বর এর কথা মাথায় আসলেই আমাদের মনে হয় অতিকায় বিশাল কিছু। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। কৃষ্ণগহ্বর হওয়ার মূল শর্ত হলো, বস্তুর ভরকে সংকুচিত করে এতটা ছোট বানিয়ে ফেলতে হবে যাতে এর মুক্তিবেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হয়। ভরকে যত অল্প জায়গায় আটকানো যায়, মুক্তিবেগ ততই বেশি হবে। ফলে একটা পর্যায়ে যখন সেই মুক্তিবেগ আলোর বেগের বেশি হয়ে যায়।
আলোর মতো ভরহীন তরঙ্গ কীভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, তা বোধগম্য ছিল না। ১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন, যার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে আলোর গতিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভাবিত করতে পারে। স্বাভাবিকভাবে কোনো একটি নক্ষত্র সংকুচিত হলে বা চুপসে গেলে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। নক্ষত্রগুলো অস্বাভাবিক ভরবিশিষ্ট হওয়ায় এগুলোর মাধ্যাকর্ষণও অনেক। কারণ আমরা জানি, মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে ভরের একটি অনন্য সম্পর্ক আছে। কৃষ্ণগহ্বরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আশেপাশের অঞ্চল থেকে সর্পিল পথে পদার্থ টেনে নেয়।
মানুষ সবসময়ই চেষ্টা করে আসছে প্রতিটি জিনিস জয়ের জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বিজ্ঞানীরা নিজেরা গবেষণাগারে কৃষ্ণগহ্বর তৈরির চেষ্টা করেছে এবং সফলও হয়েছে আণবিক কৃষ্ণগহ্বর তৈরিতে!
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্স–রে লেজার বিম ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে ছোট্ট আণুবীক্ষণীক কৃষ্ণগহ্বর। পরমাণু দিয়ে গড়া আমাদের পরিচিত বিভিন্ন বস্তুকে দেখতে শান্ত মনে হলেও আসলে পরমাণুর অভ্যন্তরে বিরাজ করছে এক তুমুল গতিময় অবস্থা। ওপরে উল্লিখিত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্স–রে লেজার বিম ব্যবহার করে আলোর উজ্জ্বল ও দ্রুতগামী ঝলক দিয়ে সেই গতিময় প্রক্রিয়ার পারমাণবিক স্তরের ছবি তোলা হয়েছে। এতে একটি পরমাণু থেকে অল্প কয়টি ছাড়া প্রায় সব ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে। সৃষ্টি হয় একটি শূন্যতা। যেটি অণুর বাকি অংশ থেকে ইলেকট্রনকে ভেতরের দিকে টানতে থাকে। ঠিক যেভাবে কৃষ্ণগহ্বর পেঁচিয়ে বস্তুকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এটাই রূপক কৃষ্ণগহ্বর।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সেবাশ্চিয়ান বুটেট বলেন, ‘ব্যবহৃত এক্স–রে ঝলকের শক্তি এত বেশি যে পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত সম্পূর্ণ সূর্যরশ্মিকে বুড়ো আঙ্গুলের নখাগ্রে নিয়ে এলে যতটা তেজস্বী হবে, এটা তার চেয়েও একশ গুণ শক্তিশালী।’ এর ফলে ৩০ ফেমটোসেকেন্ডের (১ সেকেন্ডের এক লক্ষ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ) মধ্যে অণুটি ৫০ টির বেশি ইলেকট্রন হারায়। আশা করা হচ্ছে এ কৌশল ব্যবহার করে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার আল্ট্রা–হাই রেজুলেশনের ছবি তোলা যাবে। তৈরি করা যাবে উন্নত ওষুধ। এর আগে আলোর পরিবর্তে শব্দকে নিয়ে এ ধরনের রূপক কৃষ্ণগহ্বর বানানো হয়েছিল।
২০১৭ সালের ৫ জুন নেচার সাময়িকীতে প্রথম আণবিক কৃষ্ণগহ্বর বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
কাজী রিয়াজুল হাসান
ইন্টার্ণ, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE