মানুষ পরিচিত হয় তার আপন সত্ত্বাগুনে আর নিজস্ব মহিমায়। কিন্তু প্রতিভাধর ও আপন গুণে গুণান্বিত ইয়াও মিংয়ের জনপ্রিয়তার গল্পটা একটু ভিন্ন আঙ্গিকেরই বটে। খুঁশি হবেন না-কি মুখ ভার, ভাবতে ভাবতেই অবসরে চলে যান এই প্রতিভাবান বাস্কেটবল খেলোয়াড়। ভাবতে পেরেছেন কি-না তা আমরা না জানলেও আমরা জানতে চাই তাকে, তার আপন ব্যক্তিসত্তাকে।
সদা হাস্যোজ্জ্বল এই বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের রহস্যময় হাসিমাখা ছবিটি আজ সবার কাছেই পরিচিত একটি মুখ। তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও ছবিতে চেনে না এরকম মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সময়টা ২০১০, বাস্কেটবল খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তোলা হয় তার হাসিমাখা একখানা ছবি। সাংবাদিক বন্ধুর তোলা ওই ছবিখানা পরবর্তীতে একজন চাইনিজ কার্টুনিষ্টের ছোঁয়ায় পায় ভিন্নতর এক রূপ। তার ওই ছবিখানা ফেসবুকে ভাইরাল হতে সময় লাগেনি, বরং ঝড়ের গতিতেই ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুক ফিডে। আর ঠিক এখান থেকেই শুরু তাঁর ওই হাসিমাখা ছবিখানা দিয়ে সবার কাছে পরিচিত হওয়ার গল্পটা।
বস্তুতপক্ষে তাঁর ওই হাসিমাখা ছবিটি আমাদের কাছে হাসির খোরাক হলেও ইয়াও মিং কিন্তু আপন আলোয় উদ্ভাসিত এক অনন্য প্রতিভা, নিজ ব্যক্তিসত্তায় এক আলোকিত নক্ষত্র, যার রয়েছে একাধারে যশ, খ্যাতি আর প্রতিপত্তি এবং সবচেয়ে বড় ব্যক্তিপরিচয় তার মানবিক গুণ।
৭ ফিট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই সফল চীনা অ্যাথলেট তাঁর শারীরিক গঠনের জন্যও বিখ্যাত। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড়। ১৯৮০ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর সাংহাইয়ে জন্ম নেওয়া বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ইয়াও মিং তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন ‘সাংহাই শার্কসের’ মাধ্যমে। এই ক্লাবের মাধ্যমেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তার টেকনিক্যাল প্লেয়িং, জাম্পিং আর গতির প্রমাণ দিয়ে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এনবিএতে(National Basketball Association) অভিষিক্ত হন ‘হাউষ্টন রকেটের’ জার্সিতে। আপনি জেনে অবাক হবেন, এই ইয়াওই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের একমাত্র প্লেয়ার যিনি পাঁচবার জায়গা করে নিয়েছিলেন এনবিএর অলস্টার টিমে। স্বীকৃতি পেয়েছেন এনবিএর ইতিহাসে তাঁর সময়ের সবচেয়ে লম্বা এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ উচ্চতার অধিকারী খেলোয়াড় হিসেবে। টানা ছয়বার জায়গা করে নিয়েছিলেন ফোর্বস সাময়িকীর করা চাইনিজ তারকাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। এছাড়াও চীনের বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন( Chinese Basketball Association) তাঁকে স্থান দিয়েছে তাদের হল অব ফ্রেমে(Hall of Fame)।
ইয়াও মিংয়ের ক্যারিয়ারে অর্জনের ঝুলিও কিন্তু বেশ সমৃদ্ধ। তন্মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বার দেশকে এশিয়ান বাস্কেটবলে স্বর্ণ জেতানোই কিন্তু তার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য বলা চলে। ওই টুর্নামেন্টে তিনি কিন্তু মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের খেতাব অর্জন করারও গৌরব অর্জন করেছিলেন।
একজন সফল খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ হতে পারত। কিন্তু গোড়ালির চোটের কারণে মাত্র ৩১ বছর বয়সেই অবসর নিতে বাধ্য হন। তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের মতামত অনুযায়ী বলা চলে, তার চরিত্রে মিশে আছে ব্যক্তিত্ব,পরিশ্রম,মেধা, ডেডিকেশন ও মানবিকতার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। তার সেন্স অব হিউমার চমৎকার। তাঁর অবসরের ঘোষণায় চীনা মিডিয়ায় আসা প্রায় দেড় মিলিয়ন মন্তব্যই প্রমাণ করে তার আবেদন ও জনপ্রিয়তা।
আমাদের অন্য ব্লগগুলো পড়ুন-এখানে
Sm. Shahin Ahmed Nazim
Intern
Content Writing Department
YSSE