বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, অনলাইনে উপার্জন করতে আগ্রহী, ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছে এমন যেকোনো ব্যক্তির কাছেই একটি অতি পরিচিত শব্দ এই এফিলিয়েট মার্কেটিং।
শুধুমাত্র আমেরিকাতে ২০২০ সালে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাজার ছিল প্রায় ৬.৮ বিলিয়নের ও বেশি। সেই সাথে ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তার বেশি। গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত Affiliate Marketing নিয়ে সার্চ ইন্টারেস্ট বেড়েছে ২০০%। তাছাড়া আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরে এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে এবং সেই সাথে এর ব্যবহারও শুরু হয়েছে যার ফলাফল আশার আলো দেখাচ্ছে।
কী এই এফিলিয়েট মার্কেটিং? কীভাবে করে? কারা করে? উপরের এতো এতো হিসাব দেখে মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন অনেকবার আসার কথা।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এফিলিয়েট মার্কেটিং/Affiliate Marketing হল কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কোন প্রোডাক্ট অথবা কোন সেবা বিক্রি করে দেয়া, এবং প্রতিটি বিক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয়ের মূল্যের ওপর % হারে কমিশন নেয়া।
ধরুন, আমাজন এর কোনো একটি প্রোডাক্ট যদি আপনার প্রমোশনের মাধ্যমে আপনার এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে কেউ ক্রয় করে তাহলে ঐ প্রোডাক্টের উপর নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আপনি পাবেন আপনার উপার্জন হিসেবে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত করা হয়ে থাকে বিভিন্ন সোশিয়াল মিডিয়া, ওয়েবসাইট, ইউটিউব ও ব্লগিং সাইটের মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনি যদি এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আগ্রহী হন তাহলে আপনার উপরোক্ত প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের কন্টেন্ট এবং অডিয়েন্স থাকতে হবে।
বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা ই-কমার্স সাইটগুলোর সাথে মূলত এফিলিয়েট মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। তাদের পণ্যকে নিজের কন্টেন্টের মাধ্যমে নিজের অডিয়েন্সের কাছে প্রমোট করা এবং এফিলিএয়েট লিংকের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করাই হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার একটি আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে আপনি যতো বেশি খাটবেন আপনার উপার্জন সেই অনুপাতে বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি যত বেশি পণ্যের প্রচার করতে পারবেন, পণ্য বিক্রয়ের সম্ভাবনা ততো বাড়বে এবং সেই সাথে আপনার উপার্জনও।
কীভাবে শুরু করবেন?
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কীভাবে করা হয় তার একটি প্রাথমিক ধারণা আপনারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। কিন্তু একজন বিগিনার হিসেবে বা একদম প্রাথমিক পর্যায়ে কিভাবে করবেন এবং আপনার কি প্রয়োজন হবে সেই ব্যপারে এখন আলোচনা করা হবে।
- এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে হবে। আপনি যদি আগে থেকেই একজন পাবলিক ফিগার হন, কিংবা আপনার যথেষ্ট পরিমাণ ফলোয়ার থেকে থাকে তাহলেও হবে। মূলত আপনার অডিয়েন্সের প্রয়োজন হবে এবং প্রচারের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন হবে।
- মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত এবং ভালো সংখ্যক অডিয়েন্স আছে এমন ইউটিউব চ্যানেল, ফেইসবুক পেইজ, ব্লগ সাইট, ওয়েবসাইট ইত্যাদি মাধ্যমে নিজস্ব কন্টেন্ট প্রচারের সক্ষমতা থাকতে হবে।
- যেকোনো অনলাইন শপ বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যারা এফিলিয়েট প্রোগ্রাম অফার করে তাদের এফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন করে তাদের সাথে যুক্ত হতে হবে।
- এফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন করার পর আপনাকে তাদের পণ্য বা সেবা প্রচার করার অপশন দেওয়া হবে। সেখান থেকে কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের এফিলিয়েট লিংক তৈরি করে নিতে হবে।
- তৈরিকৃত এফিলিয়েট লিংকটি আপনার কন্টেন্ট এর মাধ্যমে আপনার নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করবেন। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে একেক মাধ্যমের জন্য এফিলিয়েট লিংক ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমনঃ ফেসবুকের জন্য একরকম, ইউটিউবের জন্য আরেকরকম।
- প্রতিষ্ঠানের পলিসি অনু্যায়ী এবং পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে আপনি আপনার একাউন্টে টাকা পেয়ে যাবেন এবং সেটি উইথড্র করতে পারবেন।
বাইরের দেশে কন্টেণ্ট ক্রিয়েটর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশিয়াল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রধান উপার্জন বর্তমানে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং স্পন্সরশীপ। কিন্তু আমাদের দেশের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের এখনও গুগল এ্যডসেন্স থেকে সামান্য উপার্জনই তাদের মুল উপার্জন। তবে বর্তমানে অনেকেই এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত হচ্ছে এবং খুব ভালো কাজ করছে। আশা করা যায় আগামী কয়েক বছরে আমাজনসহ আরো অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করলে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যবহার আরো বাড়বে এবং তরুণরা সফলতা অর্জন করবে।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
ধন্যবাদ
Sifat Ahmed Bijoy
Admin & HR Intern
YSSE