প্রায়ই ফেসবুকে অনেকেরই টাইমলাইনে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি হলুদ, সবুজ ও ধূসর রঙের বর্গাকার বক্স। প্রথম দেখায় ঠিক বোঝার উপায় নেই এর অর্থ কি বা সংখ্যাগুলো থেকে কি অর্থ দাঁড়ায়। আসলে এটি একটি অনলাইন গেমের ফলাফল যা শেয়ার করছেন ব্যবহারকারীরা।
সম্প্রতিকালে ভাইরাল হওয়া এই গেমটির নাম ওয়ার্ডল। রেডিটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জশ ওয়ার্ডল গেমটির নির্মাতা। এটি প্রথমে নিজের অবসর সময়ে খেলার জন্যই তৈরি করেছিলেন তিনি। বর্তমানে শব্দ ভাণ্ডারের কৌশল নিয়ে তৈরি হওয়া ফ্রি এই গেমটি ধীরে ধীরে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ভাইরাল একটি গেমে পরিণত হতে যাচ্ছে।
ফেসবুক, টুইটারের কারণে এটি ভাইরাল হলেও ফেসবুকে এই গেমটি খেলা যায় না। শুধু ফলাফল শেয়ার করা যায়। গেমটি খেলার জন্য ব্যবহারকারীকে স্মার্টফোন/ল্যাপটপ/ডেস্কটপের যেকোনো একটি ওয়েব ব্রাউজারে প্রবেশ করতে হবে। কোনো ধরনের অর্থ ব্যয় ছাড়াই যে কেউ
https://www.powerlanguage.co.uk/wordle/
এই ওয়েব সাইটে গিয়ে ওয়ার্ডল গেমটি খেলতে পারবেন।
খেলার নিয়মাবলি
“ওয়ার্ডল (Wordle)”- অনলাইন এই গেমটি এই নামে পুরো পৃথিবীর কাছে এখন বেশ পরিচিত। কয়েক মাস আগেও যে গেমটি সম্পর্কে কেউ জানতো না এখন এটি পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী। খেলার নিয়মটা একেবারেই সোজা। পাঁচ অক্ষরের একটা শব্দ, আপনার সামনে সুযোগ থাকবে ছয় বার। প্রতিবার শব্দ লেখার পর স্ক্রিনেই জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার দেওয়া শব্দের অক্ষরগুলো সঠিক নাকি ভুল। যদি অক্ষরগুলো শব্দের ঠিক অবস্থানে থাকে, তবে তা সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হবে। আর যদি শব্দের অক্ষরগুলো ভুল অবস্থানে থাকে তবে সে অক্ষরগুলোর রং হবে হলুদ। আর যদি অক্ষরগুলো শব্দে অনুপস্থিত থাকে, তবে তার রং হবে কালো। ছয়বারের মধ্যে শব্দ বের করতে না পারলে, সেদিন আর শব্দটি জানার উপায় নেই।
সরল ভাবনা থেকে ওয়ার্ডল উদ্ভাবন
ইন্টারনেটে প্রতিদিনই নিত্যনতুন জিনিসের আবির্ভাব হয়, আবার কিছু জিনিস হারিয়েও যায় এতসব নতুন উদ্ভাবনের মাঝে। জশ ওয়ার্ডল নিজের সহকর্মী ও সঙ্গী পলক শাহেরের শব্দ নিয়ে আগ্রহ দেখে শুরু করেছিলেন এই খেলাটি। খেলার ছলে তৈরি করা খেলার ওয়েবসাইটে সাধারণত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখা হঠাৎ স্ক্রিনের সামনে বিজ্ঞাপন, “Accept Cookies” এর মতো বিরক্তিকর নোটিফিকেশন, সাবস্ক্রিপশন করার নোটিফিকেশন নেই। না আছে কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন, না আছে অর্থের ঝামেলা। শুধু পাঁচ লেটারের একটা মজার ধাঁধা। প্রতিদিন নিত্যনতুন শব্দের আবির্ভাব হয় সেখানে। ওয়ার্ডল খেলতে কোনো ই–মেইল আইডি, ওয়েবসাইট একাউন্ট বা পাসওয়ার্ডে সেভ করার কোনো ঝামেলা নেই। অর্থাৎ এটি খেলতে কোনো অ্যাকাউন্টও খুলতে হয় না। ‘ওয়ার্ডল‘-এর উদ্ভাবক জশ ওয়ার্ডলের চিন্তাভাবনা বেশ সরল। তাঁর মতে
” ইন্টারনেট এমন একটা জায়গা, যেখানে মানুষ আসে আনন্দের জন্য। সব জায়গায় চটকদার বিজ্ঞাপন বা অর্থসাহায্য দিয়ে কাজ হয় না। বরং ইন্টারনেটের কিছু জায়গা সীমাবদ্ধ রাখা উচিত শুধু আনন্দের জন্য।”
জশ ওয়ার্ডল তা করতে পেরেছেন তাঁর ‘ওয়ার্ডল’ দিয়েই।
জনপ্রিয়তার কারণ
‘ওয়ার্ডল’–এর এত জনপ্রিয়তার পেছনে একটি বড় কারণ আছে। এই খেলা আপনি দিনে দ্বিতীয়বার খেলতে পারবেন না, একবার ই শুধু খেলতে পারবেন। আর এক বারের চেষ্টায় ভুল করে ফেললে পেছনে ফিরে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এখন সব অনলাইন গেম নির্মাতা চান, ব্যবহারকারীরা বারবার ফিরে আসুক তাদের প্ল্যাটফর্মে, ওয়ার্ডল চায় মাত্র ৩ মিনিট! জশ ওয়ার্ডলের মতে, পূর্ণ মনোযোগের তিন মিনিটই যথেষ্ট একজনকে আবার গেমটিতে ফেরত আনতে।
অবশ্য ইন্টারনেট জগতের লাইমলাইটে জশ ওয়ার্ডল যে এবারই প্রথম এলেন, তা নয়। এর আগে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন সামাজিক মাধ্যম রেডিটে। যেখানে তিনি ‘দ্য বাটন’ নামে এক ‘সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপেরিমেন্ট’ এবং ‘প্লেস’ নামের অনলাইন মেটা গেম দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। তবে সেবার তাঁর পেছনে ছিল পুরো একটা দল। এবার ‘ওয়ার্ডল’কে তিনি গড়ে তুলেছেন একাই।
ওয়ার্ডলে নতুন ফিচার!!
জানুয়ারি মাস থেকে যুক্ত হওয়া নতুন ফিচার নতুন গতি দিয়েছে ‘ওয়ার্ডল’-কে। আগে চাইলেও ‘ওয়ার্ডল’-এ কারও ফল শেয়ার করা যেত না। এখন এক চাপেই ফেসবুক-টুইটারে দিনের ‘ওয়ার্ডল’ ফলাফল শেয়ার করা যায়। কালো, হলুদ ও সবুজ—তিন রংয়ের মাধ্যমে স্পয়লার ছাড়াই সবাইকে জানিয়ে দেওয়া যায় দিনের ফল।
‘ওয়ার্ডল’-এর জনপ্রিয়তা দেখে নিউইয়র্ক টাইমস জশ ওয়ার্ডলের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিনে নিয়েছে অনলাইন গেমটি। তবে এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনেনি নিউইয়র্ক টাইমস। অ্যালগরিদম অনুযায়ী ইংরেজি শব্দভান্ডারে ৫ অক্ষরের শব্দ আছে মোট ১২ হাজার। এখান থেকে মাত্র আড়াই হাজার শব্দ বেছে নিয়েছেন জশ। সে অনুযায়ী আশা করা যায় আরও বেশ কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে ওয়ার্ডল।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে চাইলে, এখানে ক্লিক করুন
Writer
Most. Afrin Akter
Content Writing Intern
YSSE