কনজাংটিভাইটিস বা ‘পিঙ্ক আই’ চোখের মারাত্মক কোন সমস্যা না হলেও অত্যন্ত অস্বস্তিকর। চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠা, চোখে অস্বস্তি হওয়া ও সামান্য ব্যথা, জ্বালা করা, চোখ কটকট করা(চোখে বালি পড়েছে এমন অনুভূতি), চোখ থেকে জল পড়া (স্বাভাবিক বা আঠালো), চোখের কোণে পিচুটি (শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ) জমা, ঘুম থেকে উঠার পর চোখে আঠালো পদার্থের উপস্থিতি, শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি ইত্যাদি কনজাংটিভাইটিস এর অন্যতম লক্ষণ যদিও এর প্রত্যেকটি লক্ষণ একত্রে প্রকাশ নাও পেতে পারে।
মূলত চোখের কনজাংটিভায় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে যে প্রদাহের সৃষ্টি হয় তাই কনজাংটিভাইটিস। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যামিবা দিয়ে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাসজনিত কনজাংটিভাইটিস এর ক্ষেত্রে চোখে ময়লা কম হয় এবং তা নিজে নিজে সেরে যেতে পারে আবার কম্প্লিকেশনও হতে পারে। তবে ব্যাকটেরিয়া জনিত কনজাংটিভাইটিস এর ক্ষেত্রে চোখে প্রচুর ময়লা হয় এবং চোখে মেমব্রেন সৃষ্টি হতে পারে এমনকি তার থেকে রক্তপাত পর্যন্ত হতে পারে।
কনজাংটিভাইটিস চোখের কোনো মারাত্মক রোগ না হলেও, জ্বর, শুষ্ক কাশি ছাড়াও কোভিড-১৯ এর অন্যতম লক্ষণ হিসেবে কনজাংটিভাইটিস সনাক্ত করা হয়েছে।
বেশ কিছুদিন আগে কনজাংটিভাইটিস এর উপসর্গ নিয়ে মায়ের সঙ্গে চেম্বার এসেছিল বছর তেরোর এক কিশোর।
চেনা সংক্রমণ কনজাংটিভাইটিস মনে করেই প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। তবে তার ছ’দিন পরে ফোনে কিশোরের মা জানান, ছেলের দুটো চোখই লাল হয়ে গিয়েছে সঙ্গে হাল্কা জ্বরও। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে ওই কিশোরের।
স্বনামধন্য চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত এর মতে, এক বছর সময়কালের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সর্বোচ্চ পাঁচজনের ক্ষেত্রে অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি কনজাংটিভাইটিস দেখা দিয়েছে। তবে শুধু কনজাংটিভাইটিস নিয়ে আসা কোভিড রোগী এই প্রথম যার ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গের লক্ষণ পরে প্রকাশ পেয়েছে যা বর্তমানে এক বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ।
তবে কি কনজাংটিভাইটিস হলেই সতর্ক থাকতে হবে রোগীকে?
তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত তারা অনেকেই করোনার একমাত্র উপসর্গ হিসেবে কনজাংটিভাইটিসকে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, কোভিড ১৯-এর প্রথম পর্বে অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে এই উপসর্গ নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে প্রকাশিত হয়নি।
চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, প্রতি বছরের মতোই কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ নিয়ে বেশকিছু রোগী তার শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস এর সাধারণ চিকিৎসা চললেও বেশ কিছুদিন পর জানা যায় এদের কয়েক জন কোভিডে আক্রান্ত এবং এক জনের মৃত্যুও ঘটে।
একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালের কর্ণধার দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান কেবলমাত্র কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগী না পাওয়া গেলেও কোভিডের অন্য উপসর্গের পাশাপাশি কনজাংটিভাইটিসের প্রভাব লক্ষণীয়।
বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান কনজাংটিভাইটিসকে কোভিডের একমাত্র লক্ষণ হিসেবে মানতে নারাজ হলেও জ্বর, সর্দি-কাশি, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার মতো সাধারণ উপসর্গের বাইরে আরও যে লক্ষণ এখন সামনে আসছে, তারই একটি কনজাংটিভাইটিস।
করোনা-পর্বের ন’মাসের মাথায় ইউরোপিয়ান জার্নাল অব অপথ্যালমোলজি তাদের গবেষণাপত্রে কোভিডের একক উপসর্গ হিসেবে কনজাংটিভাইটিসের পক্ষে তুরস্কের বাস্কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি বিভাগের এক স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য তুলে ধরেছিলেন যিনি কিনা কনজাংটিভাইটিস ও ফটোফোবিয়ায় ভুগছিলেন।
কোন উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও এক কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসায় তার করোনা পরীক্ষা হয়েছিল। প্রথমবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসা সত্ত্বেও, তার মা সংক্রমিত হলে তার দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হলো। এক্ষেত্রে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, চিকিৎসকেরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তাঁর ক্ষেত্রে কোভিডের একমাত্র উপসর্গ ছিল কনজাংটিভাইটিস। বছর তেরোর ওই কিশোরের ক্ষেত্রেও কি এমনটাই ঘটেছে?
কনজাংটিভাইটিসকে আদৌ করোনার একমাত্র লক্ষণ বলা যায় কিনা তা সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা চলছে। তবে যেহেতু কোভিড ১৯ এর বিস্তারিত তথ্য এখনো আমাদের অজানা তাই কোনো সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
SYEDA FAIRUZ NOSHIN
Content Writing Intern
YSSE
আমাদের অন্যান্য ব্লগ গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন।