করোনা কালীন সময়ে জনগণের মধ্যে অনলাইন থেকে পণ্য কেনার একটা ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। লকডাউন, গাড়ি ঘোরার সংকট, স্বাস্থ্যবিধি মানা ইত্যাদি নানা কারনে মানুষের ঘরের বাইরে যাওয়া হয়ে উঠে নি। আর এই সুযোগে আমাদের পূর্বের ই-কমার্স ব্যবসার সাথে সাথে এই পণ্য ডেলিভারি ভিত্তিক লজিস্টিক্স ব্যবসাও দিন দিন উন্নত হয়েছে। দেশের বাজারে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে ই-কমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক্স ব্যবসা। ই-কমার্সে অর্ডার করা পণ্য গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে এই খাতের। এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেব মতে, বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে লজিস্টিক্স খাতের।
দেশে পণ্য পরিবহন তথা লজিস্টিক্স খাতে সুন্দরবন, এস এ পরিবহনসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই ডেলিভারির কাজটি অনেকদিন থেকেই করে আসছে। তবে, ই-কমার্সের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্স বান্ধব লজিস্টিক্স সেবার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ভারতের ‘পেপারফ্লাই’ ভারতের বাইরে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশে। দেশীয় লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার ২০১৯ সালে হংকং ভিত্তিক লগ্নিকারী একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পেয়েছে। নিজেদের লজিস্টিক খাত আরও সম্প্রসারণ করার জন্য আলিবাবার কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে আরেক ইকমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ।
দেশে প্রথম যখন ই-কমার্সের ব্যবসা বড় হতে শুরু করলো তখন গতানুগতিক লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠানগুলো সার্ভিস দিতে পারছিলো না। তখন ই-কমার্স সাইটগুলো নিজেদের উদ্যোগে তারা লজিস্টিক ব্যবস্থা শুরু করে দেয়। আবার বাজার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এই খাতে এসেছে যেমন ই-কুরিয়ার, রেডেক্স, পেপারফ্লাই ইত্যাদি। বর্তমানে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোও এই খাতে বেশ ভুমিকা পালন করে আসেছে, যেমন- পাঠাও, উবার ইত্যাদি। এছাড়াও আরও ছোটখাট কিছু সংস্থা হয়ে উঠেছে যারা কিনা এই ডেলিভারি বা লজিস্টিক ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
গতানুগতিক লজিস্টিক্স প্ল্যাটফর্মের তুলনায় ই-লজিস্টিক্স খাতের প্ল্যাটফর্মগুলো অধিক প্রযুক্তি এবং ই-কমার্স বান্ধব। সুন্দরবন, এস এ পরিবহন বা এই ধরনের ক্ল্যাসিকাল বা পুরনো আরও যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের থেকে ই-কমার্সের লজিস্টিক্সদের সঙ্গে কাজ করা অনেক বেশি সহজ। ই-লজিস্টিক্সগুলো খুব দ্রুত নতুন প্রযুক্তি বা সিস্টেম ধারণ করতে পারে। ফলে মার্চেন্ট ও গ্রাহক উভয়েই লাভবান হন এবং ভালো সেবা পান। ফলে এই খাতে নতুন কোম্পানিগুলো তাদের জায়গা করে নিতে পারছে।
ডাটা রিসার্চ বিডি’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালেই দেশে এই খাতের বাজার ছিল প্রায় এক দশমিক ছয় (১.৬) বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে যে এটা কমপক্ষে দুই বিলিয়ন সেটা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। ২০২৩ সাল নাগাদ এটা তিন দশমিক এক (৩.১) বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। এই খাতে প্রায় ১০ হাজার কর্মী স্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন। ২০২২ সাল নাগাদ ফুল টাইম, পার্ট টাইম এবং ফ্রিল্যান্সার মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
গত বছরেও ই-লজিস্টিক্স এতো পণ্য ডেলিভারি করত না। কিন্তু করোনা মহামারি এবং এইখাতে মানুষ এর ইন্টারেস্ট থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে একটা ভালো পজিশনে গিয়েছে এই খাত। বর্তমানে মানুষের চলাচলে আবারও কঠোরতা আরোপ করায় ই-লজিস্টিক্স খাতের চাহিদা আরও বাড়বে। আর তার জন্য এই খাত প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। চলাচলে কঠোরতা, মার্কেট শপিংমল বন্ধ বা লকডাউনের মতো সময়ে ডেলিভারির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন সবগুলো ই-লজিস্টিক্স পার্টনাররা মিলে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ পণ্য ডেলিভারি করছে। বর্তমান সময়ের মতো পরিস্থিতির জন্য ই-কমার্স ব্যবসার খাতে কর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। নতুন নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য সরবরাহ করতে পারে তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাগুলো। করোনার এই সময়ে তারা নিজেরাও একপ্রকার সম্মুখ যোদ্ধা। সবাই কিন্তু শুধু টাকার জন্য চাকরি করছে না এখানে। মানবিক দিক থেকেও চাকরি করছে। কোন গ্রাহক হয়তো বলছেন তিনি করোনা আক্রান্ত তবুও তার পণ্যটি তার দরজার গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে এইসব ই-লজিস্টিক্স কর্মীরা।
Tonmoy Dash/ YSSE intern