“গরু হাম্বা হাম্বা করে, ঈদের আনন্দ বাড়ে।”
বছর ঘুরে চলে এলো কুরবানীর ঈদ, তবে এবারের ঈদ অন্যবারের থেকে ভিন্ন। দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার প্রকোপ, তাই হাটে গিয়ে কুরবানীর পশু কেনার কথা চিন্তা করলেই বাড়ির কর্তার কপালে ফুটে ওঠে চিন্তার রেখা।
তবে বাড়ির কর্তা এই দুশ্চিন্তা দূর করতে উদ্যোক্তারা কুরবানীর পশুকে মাঠের হাট থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন ডিজিটাল হাটে।
যদিও ডিজিটাল হাট কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ চালু হয়েছে কিন্তু এবারই প্রথম সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে অনলাইনে এই কোরবানির পশুর হাট।
ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশে অনলাইনে ও ডিজিটাল পশুর হাট এরইমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে। অনলাইন ও ডিজিটাল হাটের আয়োজক এবং অংশীদাররা বলছেন, এরইমধ্যে দুই লাখের বেশি পশু অনলাইন ও ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে।
গত দোসরা জুলাই থেকে জেলাভিত্তিক অ্যাপ, ফেসবুক পাতা ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে পশু বিক্রি শুরুর উদ্যোগ নেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
আর চৌঠা জুলাই ডিজিটাল হাট নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্মও উদ্বোধন করা হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দোসরা জুলাই থেকে গত তেরোই জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিনাত সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত সপ্তাহ খানেক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হয়েছে। এর আগে বিক্রি খুব বেশি ছিল না।
বর্তমান বাংলাদেশে অনলাইনে পশুর হাট আছে প্রায় ১০০০ টি, এসব হাটে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৩০,০০০ এর মত পশু বিক্রি হচ্ছে। যার পরিমাণ প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
কোরবানি পশুর ভার্চুয়াল হাটের আয়োজন করেছে দেশীগরুবিডি ডট কম (http://deshigorubd.com)
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সম্পূর্ণ অর্গানিক গরু আমরা সংগ্রহ করছি। যারা বুকিং দিচ্ছেন, ঈদের দু’দিন আগে তাদের বাসায় গরু পৌঁছে দেওয়া হবে।
গ্রাহকদের সুবিধার্থে দেশীগরুবিডি ডট কমে গরুর দামের ৫০ ভাগ অগ্রীম দিয়ে বুকিং দিলে গরু ডেলিভারি দেওয়ার সময় অবশিষ্ট টাকা দিয়ে গরু বুঝে নিতে পারবেন।
করোনাকালে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য ‘খুলনা গরুর হাট’ নামের অনলাইন হাট চালু করেছে জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও জেলা প্রশাসন।
ছবিসহ গরু বিক্রেতাদের পোস্ট এবং ক্রেতাদের মন্তব্যে সরগরম এ অনলাইন হাট। তবে সেই তুলনায় বিক্রি কম। গত মঙ্গলবার থেকে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পৃথক আরেকটি অনলাইন হাট চালু করেছে।
উদ্যোক্তারা সমকাল প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কোরবানির এখনও ৭ দিন বাকি থাকায় বিক্রি কিছুটা কম। এছাড়া বেশিরভাগ গরুই গ্রামাঞ্চলে। অনলাইনে বেশিরভাগই শহুরে সৌখিন ক্রেতা। গ্রাম থেকে গরু নিয়ে আসার জটিলতায় অনেকে কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের মধ্যে ক্রেতা ও খামারিদের সুবিধার জন্য গত ১ জুলাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ‘খুলনা গরুর হাট’ নামের অনলাইন এ হাট শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ২ হাজার ৮০০ গরুর ছবি ও দাম, বিক্রেতাদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা উল্লেখ করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কেসিসির পক্ষ থেকেও ‘কেসিসি হাট’ নামের পৃথক ওয়েবপেজ খোলা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই কেসিসির এই পেজে পশু বিক্রি শুরু হবে।
খুলনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা রণজীতা চক্রবর্তী সমকালকে জানান, খুলনা জেলার ৫ হাজার ২১২ জন খামারির মোট ৪৭ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। হাট নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করায় অনলাইনে পশু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০টি গরুর ছবি ও দাম উল্লেখ করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। গত ১২ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৮০টি গরু প্রায় ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলে বিক্রি আরও বাড়বে। এছাড়া ১৫ জুলাই থেকে নগরী ও জেলা পশুর হাট শুরু হচ্ছে। যারা হাটে যাবেন না, তারা অনলাইন থেকে গরু কিনতে পারবেন।
MD. Towhidul Islam
Content Writing Department, Intern
YSSE