একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে কার না ভালো লাগে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চাহিদার কিংবা আকর্ষণের একটি কাজ হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ব্যবসা কিংবা চাকরি যেকোনো জায়গাতেই মানুষ চায় নিজেকে কিছুটা আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। আর এমনই একজন উদ্যোক্তা হলেন নাশিদ নিকিতা, যার উদ্যোগের নাম হচ্ছে “কাব্য কন্যা”। নিকিতা হলো যশোরের মেয়ে, তার ছোটবেলা ও সেখানেই কেটেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ , এমবিএ শেষ করে চাকরি জীবন শুরু করেন।
চাকরি-ব্যক্তিজীবন সবকিছু মিলিয়ে দিব্যি জীবন কেটে যাচ্ছিল তার। একদিন যুক্ত হলেন ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ওমেন্স অ্যান্ড ই- কমার্স ফোরাম এ । সেখানে তিনি দেখলেন এক অন্য দুনিয়া। কিন্তু তার এত সময় ছিলনা। তারপর তিনি অনেক প্র্যাকটিকালভাবে চিন্তা করার পর নিজের মতো একটা প্ল্যান সেট করে নিলেন, কি কি সমস্যা আসতে পারে তার লিস্ট বানিয়ে সে অনুযায়ী সময় ভাগ করে নিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অল্প টাকা ইনভেস্ট করবেন, তারপর মাত্র ৮ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করে দিলেন তার পথচলা।
সেই ৮ হাজার টাকার শাড়ি কিনে প্রথম পোস্ট ছিল তার উই গ্রুপেই, সেখানে সবার এত সাড়া পান আর অর্ডারের ঝড় ও বয়ে যায় যে মনে হচ্ছিলো সে কোনো স্বপ্ন দেখছে। তখন তিনি ভাবলেন এভাবে সে যদি কষ্ট করে লেগে থাকতে পারে তাহলে তার পরিচিতি অস্তে আস্তে বাড়বে। এভাবে আস্তে আস্তে তার সেল বাড়তে থাকে, প্রথম ২০ দিনে তার মোট ১ লক্ষ টাকার শাড়ি সেল হয়ে যায়, আরও পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতে থাকলো। আজকে সে যে অবস্থানে আছে সেখানে আসতে তার কষ্ট এবং পরিশ্রম করতে হয়েছে । কে কী বললো, কে কী করলো, কার কত সেল হলো এগুলো নিয়ে সে বিন্দুমাত্র ভাবেননি। তার মূল লক্ষ্য ছিল তার ব্র্যান্ডিং, তার শাড়ি, তার নিজের পরিচিতি তৈরি করা নিয়ে।
কি চিন্তা করে শুধু শাড়ী নিয়েই নিজের কাজ শুরু করলেন জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ” আমি মনে করি যে, যেটাতে কমফোর্টেবল, ভালো ধারণা আছে সেটা নিয়েই কাজ করা উচিৎ। আমি ছোটবেলা থেকেই শাড়ী অনেক পছন্দ করি এবং কেন জানি মেয়েদেরকে শাড়ীতেই সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে। আর এই ভালোলাগা থেকেই মূলত শাড়ীকে আমি বেছে নিয়েছি আমার কাব্য কন্যার পণ্য হিসেবে।”
উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে তার কি কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস ছেলে হোক মেয়ে হোক সবারই আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। যেমন পরিবারকে সাপোর্ট করা থেকে শুরু করে কিছু শপিং নিজের টাকায় করা এইটা আসলেই অনেক শান্তির। আর উদ্যোক্তা হওয়া মানে কারোর অধীনে না থেকে নিজে মাথা উঁচু করে কাজ করা। কারণ হাজার হলেও নিজের কাজ, নিজের স্বপ্নকে পূরণ হতে দেখা অনেক আনন্দের একটা বিষয়।”
একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে তার কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “যেহেতু আমি চাকরি ও বিজনেস একই সাথে করেছি শুরুতে , টাইম ম্যানেজমেন্টটা আমার জন্য খুব মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। সারাদিন অফিস করে অনেক ক্লান্ত থাকতাম, রাত জেগে শাড়ি পরে পরে ফটোশুট করতাম, কারণ এছাড়া সময় বের করতে পারছিলাম না। অফিস যে দুইদিন অফ থাকে, সেই দুদিন কারিগরদের পেমেন্ট, হিসাব, নতুন শাড়ি স্টক এগুলো করতেই পার হয়ে যেত, মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে যেতাম। কিন্তু যখন অর্ডার আসতে থাকলো, সব সিস্টেম বুঝতে পারলাম, তখন সমস্যা গুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।”
এখন পর্যন্ত তার আনুমানিক বিক্রি কত হয়েছে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “আমার বিজনেসের বয়স এখন ১১ মাস। আর এই ১১ মাসে আমার সেল হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার শাড়ী, এর মধ্যে দেশের বাইরের ও অনেক অর্ডার ছিল।”
তার এই উদ্যোগের পিছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কে কাজ করে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন,” আমি আমার শাশুড়িকে দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। উনি আমাকে শিখিয়েছেন কোনও কাজকে ভয় না পেয়ে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই।”
কাব্য কন্যা নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আমি আমার “কাব্য কন্যা”কে একটা ব্র্যান্ড হিসাবে দেখতে চাই। সবাই যেন সুন্দর আর মানসম্পন্ন শাড়ীর জন্য “কাব্য কন্যা”কে বেছে নেয়, ভরসা করতে পারে এটাই আমার স্বপ্ন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যেন একইভাবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়।”
নতুন যারা এই উদ্যোগ নিতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বলবো– কাজ করতে গেলে সমস্যা আসবেই। আপনি একাই এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, এরকম মোটেই ভাববেন না। প্রতিটা সফল মানুষই কষ্ট করে, অনেক সমস্যার মোকাবেলা করেই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পেরেছে। সুতরাং আপনার মনের কথা শুনুন, ছুটে চলুন স্বপ্ন পূরণের দিকে।”
অন্যান্য ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন:A session to boost up your CV and Interview Skill
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
ওয়াইএসএসই