বাংলাদেশের মানুষেরা খুবই কৌতুহলী । তারা নিজেদের দেশের সংস্কৃতির চেয়ে অন্য দেশগুলোর সংস্কৃতি নিয়ে বেশি কৌতূহল দেখায়। তেমনি বাঙ্গালীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার এর প্রতিও অনীহা দেখায়। আমরা আমাদের দেশের খাবার গুলো অন্যান্য দেশের খাবার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করছি। এখন প্রতিনিয়তই আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড শপের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর এর ফলে আমাদের দেশের প্রতিনিয়ত ক্ষতিও হচ্ছে।
আমি আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করতে অনেক উদাহরণ দিতে পারি কিন্তু এখানে আমি শুধু ৪ টি বিষয় উল্লেখ করবো।
ঐতিহ্যের ক্ষতি : প্রতিটি দেশে, প্রতিটি অঞ্চলে তাদের নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য আছে। বিভিন্ন রকম সংস্কৃতি ও আছে। তেমনি প্রতিটি দেশে তাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার ও আছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেই ঐতিহ্য টি ধরে রাখতে পারছে না। লোকজনের ফাস্টফুড এর খাবার এর প্রতি ঝোঁক বাড়ায় ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো তাৎপর্য হারাচ্ছে। মানুষ তাদের শিকড় ভুলে যাচ্ছে। এইভাবে আমাদের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ হারাতে প্রতিকূল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যকর ক্ষতি : প্রথমতই নিঃসন্দেহে বলতে পারবো, ফাস্টফুড ইতোমধ্যে অনেক দেশে স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ফাস্টফুড সাধারণত অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ, চর্বি এবং চিনি পাশাপাশি সামান্য ভিটামিন ও প্রোটিন পরিবেশন করে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য অস্বাস্থ্যকর। এটি স্থূল লোকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, অতিরিক্ত ওজন যুক্ত শিশু, কোলেস্টেরল উচ্চ মাত্রায়, কার্ডিওভাসকুলার রোগ হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, আমাদের দেশের ১৫ জনের মধ্যে প্রতিটি শিশু ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে এবং জানা গেছে যে ফাস্টফুডই এর একমাত্র কারণ। কিন্ত বাসায় রান্না করা দেশের খাবার গুলো স্বাস্থ্যকর হয় ও এই খাবারগুলো হাঁপানি, স্থুলতা, অ্যালার্জি, বদহজম এমনকি ডায়াবেটিস সহ আর অনেন সমস্যা এড়াতে সহায়তা করে।
পারিবারিক ক্ষতি : ফাস্টফুড বা রেস্টুরেন্ট পারিবারিক বন্ধনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। লোকেরা বাইরে খাওয়া অভ্যস্ত করে ফেলায় তারা পরিবার থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে। পরিবার এর সবাই মিলে খাবার তৈরি করা এবং একসাথে খাবার খাওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে যা এখন কমে গেছে।
জীবনযাত্রার ক্ষতি : ফাস্টফুড আমাদের জীবনযাত্রা, বিশেষ করে আমাদের অভ্যাসকে বদলে ফেলছে। ফাস্টফুড থেকে খাবার পাওয়া যাচ্ছে দ্রুত ও অনায়াসে। এটিই মূলত প্রধান কারণ মানুষের ফাস্টফুড এর প্রতি ঝুঁকে পড়ার। এত সহজ ভাবে খাবার পাওয়ার কারণে তারা নিজেরা রান্না করতে চায় না, পরিবেশন করতে চায় না। এই আচরণগুলো মানুষকে অলস করে তোলে।
সবশেষে বলবো যে, ফাস্টফুড ও আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। কারণ অনেক শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য রা তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রচুর সময় ব্যয় করেন এবং বাসায় সবার সাথে একত্রে খাবার খাওয়ার সময় পান না। তখন তারা ফাস্টফুড এর সুবিধা গ্রহণ করে। তবে প্রয়োজন না থাকলেও অন্যান্য লোকেরা খুব বেশি ফাস্টফুড এর খাবার খাচ্ছে যেটা আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন করছে।
অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া কেবল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ নয়, আমাদের ঐতিহ্য, সমাজ, পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সাইয়েদা পর্না
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE