করোনাকালে নানারকম জটিলতার কারণে কৃষিপণ্য সরবরাহে ব্যপক টানাপোড়েন চলছে। অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে না পেরে অধিকাংশ খামারিরাই তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছে, যা একদিকে যেমন কৃষিপণ্যের ব্যপক ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ফেলছে বিরূপ প্রভাব। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষিত তরুণদের কৃষিকাজে এগিয়ে আসা সত্যিই আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় কৃষি কাজ করেই অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। সেই সাথে এ জাতীয় পণ্য উৎপাদন করে দেশের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হয়, যা জাতীয় অর্থনীতিকে স্বভাবতই চাঙ্গা রাখে।”
অতিমারির এই সময়টাতে তরুণদের ঘরে বসে অলস সময় না কাটিয়ে কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়া দেশের অর্থনীতিকে সমূহ অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়ারই ইঙ্গিত বহন করছে।
কৃষি কাজে শিক্ষিত তরুণদের জড়িয়ে পড়ার কারণ
মহামারির কবলে পড়ে মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। জীবন রক্ষার তাগিদে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। যেকারণে তরুণদের ঘরে একপ্রকার বন্দি সময় পাড় করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই জীবিকার তাগিদে নতুন নতুন কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়ছে। আবার আর্থিক টানাপোড়েনের হাত হতে মুক্তির উপায় হিসেবেও তরুণরা এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বলাবাহুল্য যে, এ কাজে তরুণরা আশানুরূপ ফলও পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে কৃষিখাতেও অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
এছাড়াও শিক্ষিত তরুণদের একটা অংশ কৃষিখাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের জন্য অর্থনীতিকে সচল রাখতে যা সত্যিকার অর্থেই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাত কেনো এত গুরুত্বপূর্ণ?
আগেই বলেছি বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। প্রায় ৫৫০০০ বর্গমাইলের ছোট্ট এই দেশটিতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি। এতো বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হলে কৃষিকাজের বিকল্প নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উৎপাদনক্ষম হওয়ায় সহজেই কৃষিকাজ করা যায়। এজন্য দেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যেই বড় একটি ধারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মহামারির এই সময়টাতেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার বড় একটি কারণই হলো কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন। উল্লিখিত সামগ্রিক দিকগুলো বিবেচনায় অর্থনীতিতে কৃষিখাতের গুরুত্ব আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি।
কৃষিখাতে শিক্ষিত তরুণরা যেসকল ভূমিকা রাখছে
পূর্বেই বলেছি করোনাকালে শিক্ষিত তরুণরা কৃষিকাজে নানাভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এ খাতে শিক্ষিত তরুণদের ভূমিকাগুলো-
১. তরুণরা তাদের মেধা ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কৃষিখাতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে, যা এই করোনাকালে গভীরভাবে লক্ষনীয় একটি বিষয়বস্তুতে ইতিমধ্যেই রূপ নিয়েছে।
২. তরুণরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হচ্ছে।
৩. তরুণরা তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকাজে মাঠপর্যায়ে লাভবান হচ্ছে।
৪. তরুণরা তাদের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ই-কৃষি নামক প্রযুক্তির আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে।
৫. কৃষিখাতে তরুণদের এগিয়ে আসার দরুন আবাদি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে।
৬. কৃষিখাতে তরুণদের এগিয়ে আসার কারণে অন্যান্য কৃষকরাও উৎসাহের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে যা এ খাতের প্রভূত উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
কৃষিখাতে তরুণদের এগিয়ে আসতে করণীয়
দেশের সিংহভাগ অর্থনীতিই কৃষিনির্ভর। তাই অন্যান্য খাতের মতো এ খাতকেও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। এজন্য সরকারকে নানামুখী কর্মসূচীর মাধ্যমে তরুণদের মাঝে উৎসাহের সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ খাতের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগীতায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
আবার একজন শিক্ষিত তরুণ হিসেবে আপনাকে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ভাবতে হবে। মনে রাখবেন, আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিই জীবনের প্রকৃত ছন্দ খুঁজে পায়।
নিজেকে এগিয়ে রাখতে আমাদের অন্য ব্লগগুলো পড়ুন।
Sm. Shahin Ahmed Nazim
Intern
Content Writing Department
YSSE