বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি এখন ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি। প্রায়ই প্রতিটি দেশের মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী এবং জানতে আগ্রহী। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক একইভাবে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহের নতুন এই ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন নিয়ন্ত্রিত রাখতে তাই অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার কথা ভাবছে। কিন্তু কেনই বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহ হঠাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে?
তা জানতে হলে আমাদের বুঝতে হবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কিভাবে তা ব্যবহার হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল মূলত একটি বিনিময়যোগ্য ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ” কনভার্টিবল ভার্চুয়াল কারেন্সি”।বিশ্বে প্রায় হাজারের বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন চালু আছে, যার মধ্যে বিটকয়েন, এথেরিয়াম অন্যতম। এর আদান প্রদান হয় অনলাইনে এবং বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে। তথ্য গোপন রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে, ব্যবহারকারী ছাড়া অন্য কারও, কেনাকাটা বা তহবিল স্থানান্তরের কোনো প্রকার তথ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কেউ ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করতে পারে এবং তা লেনদেনও করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন সাধারণ মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করার এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই। নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই প্রায়ই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি।
তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার কথা ভাবছে বিভিন্ন দেশ। এবং নতুন এই ভার্চুয়াল কারেন্সির নাম দেয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি বা সিবিডিসি। কিন্তু এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল মুদ্রা তৈরিতে কতটুকু এগিয়েছে বিশ্ব? তা জানার আগে চলুন জেনে নিই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা আসলে কী
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা বা সিবিডিসি আসলে যাঃ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা হচ্ছে এমন একটি মুদ্রা যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত ডিজিটাল মুদ্রা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি এই ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেন তত্ত্বাবধান করবে। এছাড়া এটি একটি দেশের ফিয়াট কারেন্সিরও প্রতিনিধিত্ব করবে ডিজিটালি, তাই একে ডিজিটাল ফিয়াট মুদ্রা বা ডিজিটাল বেস মানিও বলা হচ্ছে। সিবিডিসি লেনদেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি লেনদেন এ তৃতীয় পক্ষের কোন ঝামেলা থাকবেনা। এছাড়া এটির আরো একটি সুবিধা হচ্ছে এটি আইনগত ভাবে বৈধ। যেহেতু অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনও বিভিন্ন দেশে অবৈধ তাই সিবিডিসির বৈধতা একে সবার কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রার পথে কতটুকু এগিয়েছে বিশ্বঃ
সম্প্রতি ফোর্বস ম্যাগাজিনের এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টস (বিআইএস) এর দেওয়া পৃথক তথ্যে একই চিত্র দেখা যায়। তাদের তথ্যমতে, বিশ্বের ৮০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা বা সিবিডিসি নিয়ে গবেষণা করছে। এবং এতে সবছেয়ে এগিয়ে আছে বর্তমান বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা বা সিবিডিসি চালুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন। সম্প্রতি চীন তাদের মুদ্রা ইউয়ানের ডিজিটাল সংস্করণ ডিসিইপি ( ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) চালু করেছে। ডিজিটাল এ মুদ্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘ই-সিএনওয়াই’। ধারণা করা হচ্ছে সিবিডিসি উদ্যেগগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে উন্নত।
ডিজিটাল মুদ্রা কার্যকর করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডেরাল রিজার্ভ এবং এমআইটি যৌথভাবে সিবিডিসি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সিবিডিসি নিয়ে কাজ করতে টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সিবিডিসি নিয়ে কাজ করছে এবং আগামী চার বছরে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।
এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ও ভারতও সিবিডিসি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। এমনকি একটি গবেষণা মতে সিবিডিসির প্রচলন ভারতের জিডিপিতে ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে, এ থেকে বোঝা যায় বিভিন্ন দেশের সিবিডিসি নিয়ে এই উৎসাহের যৌক্তিকতা অনেক।
এমন আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাহসিনা মারযান
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE