একটি কোম্পানি বা তার পণ্যগুলির সাথে মানুষের পরিচিতিকে ব্র্যান্ড সচেতনতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। সহজভাবে বললে, ব্র্যান্ড সচেতনতা বলতে বোঝায় যে কোন কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবা তার টার্গেট মার্কেটের মধ্যে কতটা বিস্তৃত এবং স্বীকৃত।
ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি কাস্টমারকে আপনার প্রোডাক্ট কেনো অন্য কম্পিটিটরদের প্রোডাক্টের চেয়ে আলাদা অর্থাৎ কেন মার্কেটে এত প্রোডাক্ট থাকার সত্ত্বেও আপনার পণ্যটিই তারা কিনবে তা সম্মন্ধে কাস্টমারদের এক বিস্তর ধারণা প্রদান করে। যেহেতু ব্র্যান্ড সচেতনতা বিজনেসকে আরো বৃহত্তর করে তুলে, তাই এটি অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিজনেস এনালিস্ট এবং সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে।
ব্র্যান্ড একটি ব্যবসার খ্যাতির ভিত্তি। আপনার যদি একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড নাম থাকে,তবে আপনার কোম্পানির পক্ষে সফল হওয়া সহজ হবে। ব্র্যান্ডের উপর ভিত্তি করে গ্রাহক এবং ক্লায়েন্ট আপনার ফার্ম থেকে অনেক কিছু আশা করতে পারে। এর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকে ব্যবসার উপর। আপনার ইতিবাচক গুণাবলীর উপর জোর দেওয়া এবং আপনি কেন সেরা তা পরিবেশন করাটা আপনার বিজনেসের গ্রোথের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
প্রভাবশালীদের সাথে কাজ করা এবং তাদেরকে আপনার নিজস্ব বিজনেসে যোগদান করানোর জন্য উৎসাহিত করা ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি বাড়ানোর এবং সম্ভবত রেভিনিউ আয় করার একটি চমৎকার কৌশল। প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ আপনার পণ্যটিকে তাদের কাছে পরিচিত করে এবং এতে আপনার বিজনেস সম্পর্কে আরও বেশি লোক জানতে পারবে।
কিছু সংস্থা প্রভাবশালীদের অর্থ প্রদান করে বা তাদের বিপণন কৌশলের অংশ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টের সময় তাদের ব্র্যান্ড এবং পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, নাইকির সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে সেরেনা উইলিয়ামস অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বিশ্বজুড়ে অনেক ক্রীড়াবিদকে অনুপ্রাণিত করেছেন, যা নাইকির পরিচিতি আরো বৃদ্ধি করেছে। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এবং একজন ইনফ্লুয়েন্সারের মাঝের যে সম্পর্ক, তা কাজে লাগানো একটা বড় ইমপ্যাক্ট ফেলবে আপনার বিজনেসের উপর । আর এটা হতে পারে কেবল ব্যবসায়িক কোলাবোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার মাধ্যমে
কাস্টম প্যাকেজিং:
কাস্টম-ব্র্যান্ডেড প্যাকেজিং ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারেন, যা কনজিউমারদের অভিজ্ঞতা বাড়ায়। প্যাকেজিংয়ে আপনার কোম্পানির প্রতীক থাকলে গ্রাহকরা আপনার ব্যবসার নাম মনে রাখার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
L’Oréal, RedBull, HP, এবং Shopify ইত্যাদি নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন প্যাকেজিং কোম্পানির সাথে কোলাবরেশনে কাস্টম প্যাকেজিং তৈরির জন্য কাজ করেছে। এই জাতীয় প্যাকেজগুলো মিডিয়ার সামনে কোম্পানির নাম বা লোগো প্রদর্শনের মাধ্যমে অডিয়েন্সের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মাঝে মাঝে ক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন গিভ-এওয়ে আয়োজন ক্রেতাদেরকে আরো আকৃষ্ট করে।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন:
যখন গুগল সার্চের ফলাফলের কথা আসে, তখন বেশিরভাগ মানুষ প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা দেখে এবং তারপর হাল ছেড়ে দেয়। SEO আপনার কোম্পানির নাম এবং পণ্যের লাইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনার কোম্পানীর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং:
প্রতিদিন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউজার সংখ্যা বাড়ছে। যদি আপনি চান যে ইউজাররা সহজে আপনার কোম্পানী যে খুঁজে পাক, তবে আপনার কোম্পানিকে অবশ্যই সর্বশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাই আপনার একটা লক্ষ্য থাকবে আপনার কোম্পানিকে একটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা, যাতে নতুন পণ্যের প্রচারণা খুব সহজে গ্রাহকদের চোখে পড়ে।
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং:
জনপ্রিয় ফটো-শেয়ারিং অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের উল্লেখযোগ্য মার্কেট প্লেস রয়েছে। এটিকে অন্যভাবে বলতে গেলে, ইনস্টাগ্রাম আপনাকে আপনার আপলোড করা ছবি এবং আপনার টাইপ করা টেক্সটের সাথে একটি গল্প বলার অনুমতি দেয়। এটি বন্ধু এবং পরিবারের জন্য যোগাযোগের একটি দুর্দান্ত উপায় এবং এটি তাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে এমন কোম্পানিগুলির জন্যও এটি কাজ করে।
ফেসবুক মার্কেটিং:
ফেসবুকের ফলে কোম্পানিগুলি তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে, এবং রিভিউ ও ফটোর মতো পণ্যের তথ্য শেয়ার করতে পারে। আপনার টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর এবং তাদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ফেসবুকের বৈশিষ্ট্যগুলি ইনস্টাগ্রামের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত।
টুইটার মার্কেটিং:
আপনার ব্যবসার কথা জানাতে টুইটার ব্যবহার করা খুবই জরুরি। কারণ এটি আপনাকে আপডেট পোস্ট করতে এবং ইতিমধ্যে আপনার সম্পর্কে কথা বলছে এমন গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়। পাশাপাশি টুইটার মার্কেট হলো একটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড মার্কেট। এখানে যদি অডিয়েন্স ক্যাচ করা যায়,তাহলে সেটা ব্যবসার বৃদ্ধিকে আরো ত্বরান্বিত করে।
পার্টনারশিপ গঠন:
বৃহত্তর ক্লায়েন্ট বেস, রিসোর্স এবং আরো প্রতিষ্ঠিত মার্কেটিং চ্যানেলগুলিতে অ্যাক্সেস পেতে, ছোট কোম্পানিগুলো তাদের সাথে এলায়েন্স বা সিস্টার কনসার্ন হিসেবে যোগ দিতে পারে। এটি একটি বৃহত্তর কোম্পানিকে একটি প্রাইমারি রিসিভার হতে সাহায্য করতে পারে, যা তাদের গ্রাহকদের মূল্য প্রদান করতে পারে। এমনকি একটি সম্ভাব্য অধিগ্রহণের জন্য একটি ট্রায়াল রান হিসেবেও কাজ করতে পারে। অন্যান্য ব্যবসার সাথে স্থানীয়, অনন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা আপনার ফার্মকে প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা হতে সাহায্য করতে পারে।
ফার্মের স্ট্রাকচার কেমন তার উপর নির্ভর করে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করার সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ফলস্বরূপ, শুধুমাত্র একটি ব্যবসার জন্য একটি চ্যানেল কার্যকর হওয়ায় এটি অন্যটির জন্য কার্যকর হবে এমন গ্যারান্টি দেয় না। মার্কেটপ্লেসগুলি এত বড় হওয়ায়, আপনি অনলাইনে টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে আপনার বার্তা তৈরি করতে পারবেন না।
দীর্ঘমেয়াদে, ব্র্যান্ড সচেতনতা একটি সমালোচনামূলক ধারণা, যা আপনার মার্কেট সেল, কাস্টমার অবজারভেশন এবং রেভিনিউ এর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। দক্ষ মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে আপনার কোম্পানি মার্কেটে একটি শক্তিশালী পরিচয় টিকিয়ে রাখতে পারে এবং ধীরে ধীরে সহজেই চেনা যায় এমন একটি ব্র্যান্ড এ পরিণত করতে পারে।
এরকম আরও ব্লগ পেতে এখানে ক্লিক করুন
মো: রাফিইউ হোসেন অর্নব,
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE