আমাদের সমাজে তরুণদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তথাকথিত একটি বিখ্যাত বাণী প্রচলিত আছে। বাণীটি ঠিক এরকম, “একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে গেলে তারপর যা ইচ্ছা তাই কইরো, তোমাকে কেউ কিছু বলবেনা, পুরো ফ্রিডম পাবা।”
বুকে অনেক আশা নিয়ে ছেলে মেয়েরা এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আর চিন্তা করে, তার যা যা করতে ইচ্ছা করে, যেগুলো এতদিন করতে পারেনাই সেগুলো সব কিছু অন্তত একবার হলেও ট্রাই করে দেখবে, তা যতই ডেয়ারিং হোক না কেন!
তাই ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর থেকেই তাদের টু-ডু-লিস্ট থেকে একটা একটা করে সেই ডেয়ারিং কাজগুলো করা শুরু করে। এসব ডেয়াড়িং কাজগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ সময় স্মোকিং দিয়েই তাদের হাতে খড়ি হয়।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, যেসব শিক্ষার্থীরা আগে কখনো ধূমপান করেনি তারা ক্যাম্পাসে এসে প্রথমেই ধূমপান করা শুরু করে, মনে করে একবার ই তো খাবো, আর খাবো না, এই শেষ। কিন্তু বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বা যে কোন অকেশনে একটা দুইটা করে খেতে খেতে দুর্ভাগ্যবশত তারা আসক্ত হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে যারা আগে থেকেই ধূমপান করতো তারা এখন নির্ভয়ে, স্বাধীনতা পেয়ে গর্বের সাথে করে। ইভেন এটা করার সময় তারা হরেক অ্যাঙ্গেলে ছবি উঠিয়ে সেগুলোকে এস্থেটিক বলে আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে।
যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কিছুটা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে ধূমপান করে না, তার দিকে সবাই এমন ভাবে তাকায় যেন সে-ই এলিয়েন। তার দিকে সবাই বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে বলে, “ওমা! তুই সিগারেট খাস না!” আর এদিকে সকলের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে নন-স্মোকার বেচারা নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়!

ক্যাম্পাসে ধূমপানের প্রাদুর্ভাব
বন্ধুদের মধ্যে এই প্রাদুর্ভাব কেমন প্রভাব ফেলেছে জানার জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, মো: নাজমুল ইসলাম আকাশ তার সহপাঠীদের উপর একটি খসড়া সার্ভে করেন।
তিনি জানতে পারেন যে, মোট ৫৪ জন ছেলের মধ্যে ৪৪ জন অর্থাৎ ৮১.৪৮ শতাংশ আর ৩০ জন মেয়ের মধ্যে ৫ জন অর্থাৎ ১৬.৬৭ শতাংশ ধূমপানে আসক্ত। তার মানে দাঁড়ায়, মোট ৮৪ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৪৯ জন অর্থাৎ ৫৮.৩৩% ই স্মোকিং করে, মানে অর্ধেকের বেশি পপুলেশন এই বদঅভ্যাসে আচ্ছন্ন! জানতে পারেন এই রেট মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অনেকাংশে বেশি।
তিনি আরো জানতে পারেন তার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে মাত্র গুটি কয়েক জনের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার আগে থেকেই ধূমপানের প্রতি আসক্তি ছিল। কিন্তু অধিকাংশই তাদের নতুন পরিবেশের আজাদী মনোভাব আর ওই গুটি কয়েকের উস্কানি মূলক কথা বার্তা থেকে ধূমপানের অনুপ্রেরণা পেয়ে আজ রেগুলার স্মোকারে পরিণত হয়েছে।
এগুলোর পাশাপাশি ধুমপানের উপর দুর্বলতার কারণ হিসেবে তিনি আরো কয়েকটি বিষয়ের ব্যাপারে জানতে পারেন। তিনি লক্ষ্য করেন তার বন্ধুবান্ধবরা যে কোনো কারণে ডিপ্রেসড হলে বা ফ্রাস্ট্রেটেড হলেই ধূমপান করে। যেমন, একাডেমিক কোনো পরীক্ষায় আশানুপাতিক ফল না পেলে, প্রেমে ব্যর্থ হলে বা প্রেমিকার সাথে কোনো ঝামেলা হলে, পারিবারিক কোনো অশান্তির কারণে ইভেন ফিউচারে সে কি করবে সেই ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত থাকার কারণেও তারা ধূমপান করে থাকে।
ধূমপানকে তারা সুখ দুঃখের সাথী হিসেবে আখ্যায়িত করে। কেননা কোনো সমস্যায় পড়লে সবার আগে তাদের মাথায় স্মোকিং করার চিন্তা আসে, আবার কোনো উৎসব হলেও তারা ঘটা করে স্মোকিং করে। বলে আরে আজকে তো বসন্ত একটা সিগারেট না খেলে হয় নাকি?
যাইহোক, ব্যাপারগুলো দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আজকাল সমাজের তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা স্মোকিং জিনিসটা একটা স্মার্ট পার্সোনালিটি হিসেবে উপস্থাপন করে। “আরে ও তো স্মোক করে না, অনেক আনকুল। ওর সাথে হ্যাঙ্গআউট এ যাওয়া যাবে না, ও অনেক বোরিং!” অন্যদিকে মেয়েরা বলে, “যেসব ছেলেরা স্মোকিং করেনা তাদের নাকি মেয়ে মেয়ে লাগে, ছেলেরা স্মোক না করলে নাকি মানায় না। আরে! ও স্মোক করে! আহা কি স্মার্ট!”
নিজের চারপাশে ধূমপানের প্রতি সবার এত পজিটিভিটি দেখে তার মানসিক চাপে বেচারা নন-স্মোকাররা বাধ্য হয় এই কালচার মেনে নিতে। ফলে তারাও এক একটা চিরস্থায়ী এবং নিয়মিত স্মোকারে রূপান্তরিত হয়। সেখানে বাধা দেওয়ার কেউ নেই, মানা করার কেউ নেই, দেখার কেউ নেই! বাবা-মা তো বলেছেই, “বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে যা ইচ্ছা তাই করিস, কেউ আটকাবে না!”
Author,
Mst. Suraia Khanam
Intern, Content Writing Department