সংকট শব্দটা শুনলেই কপালে চোখ ওঠার অবস্থা। করোনার সময় এই দুর্বিষহ জীবন পাড়ি দিতে দিতে মানুষ অনেক ক্লান্ত, তবে নতুন সমস্যা এসে জুড়ে বসার যেন কোনো অন্ত নেই। জেঁকে বসা নতুন সমস্যাগুলোর একটি হলো খাদ্য সংকট!
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিপর্যয় আসতে পারে জাতিসংঘের এমন সতর্কতা আর বৈশ্বিক ক্ষেত্রে খাদ্য পণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্য দিয়েই চলতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস (১৬ই অক্টোবর) পালিত হয়েছে।
একটু জেনে নেয়া যাক কিভাবে দেশগুলো এই সমস্যা নিয়ে কাজ করছে।
খাদ্য সংকট কেন হয়?
খাদ্যের হাহাকার দেখা দিলে জনগণের চাহিদামাফিক সরকার খাদ্য সরবরাহ করতে পারে না, অর্থের বিনিময়েও পর্যাপ্ত খাদ্য ক্রয় করতে হিমশিম খেয়ে বসে তখন। খাদ্য সংকট বিভিন্ন কারণে হতে পারে –
- প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে বিরূপ আবহাওয়া ফসলের ক্ষতি করে এবং পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনের পরিস্থিতি থাকে না।
- রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পরলে রাষ্ট্রের পক্ষে সকল মানুষের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া অসম্ভব হয়ে পরে।
- উঠতি অর্থনীতির বাজারে লেন দেনে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণে ব্যর্থ হলে খাদ্য কিংবা খাদ্য উৎপাদনের পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে চলা আবশ্যক। খাদ্য আমদানি, রপ্তানির সাথে অর্থনীতি জড়িত যা ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখতে হলে ক্ষমতাশীল দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রাখা আবশ্যক।
- যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা কোনো অন্তঃজাতীয় বা আন্তঃজাতীয় কলহের জের ধরে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতশীল হয়ে পরলে, সরকার বদল হলে খাদ্য সংকটে পরার সম্ভাবনা থাকে।
- করোনাকালীন সময়ে টিকে থাকার জন্য অনেক দেশ অনেক রকম পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বাজার ব্যবস্থার বদল ঘটায় অনেক দেশই খাদ্য সংকটে পরেছে।
ভুক্তভোগী দেশগুলো –
- খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে উত্তর কোরিয়ায়! তাই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন দেশের জনগণকে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত কম খাবার গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে অন্তত আগামী তিন বছর এই সংকট মোকাবিলা করতে কড়া নির্দেশনা জারি করছেন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা। দেশটির সাধারণ মানুষের অভিযোগ, শীতকালে তাদের পরিস্থিতি মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে পড়বে, সেক্ষেত্রে আগামী তিন বছরে খাদ্য সংকট কাটানো অনেকটাই অসম্ভব। উত্তর কোরিয়ার বিষয় নিয়ে আরো জানতে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
- ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে আছে।
- সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীও খাদ্য দুর্ভিক্ষে পড়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা দা হাঙ্গার প্রজেক্টের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ দরিদ্রতার সাথে বাস করছে, আর ৮৫ কোটি মানুষ দরিদ্রতার ঝুঁকিতে আছে কোভিডের কারণে। আবার এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী।
মহামারি করোনাভাইরাস সংকট যদি যথাযথ উপায়ে মোকাবিলা করা না যায় তবে গোটা বিশ্ব খাদ্য সংকটে পড়বে বলে জাতিসংঘের তিন অঙ্গসংগঠন সতর্ক করেছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএডব্লিউ) কু দোংগিউ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক (ডব্লিউএইচও) টেড্রোস আধানম গেব্রয়সেস এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পরিচালক রবার্টো আজেভেদো।
সমাধান হিসেবে যা ভাবা হয়েছে:
- উত্তর কোরিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, করোনা মহামারির কারণে চীনের সঙ্গে বন্ধ থাকা সীমান্ত পুনরায় চালু হলে খাদ্য সংকট কমে আসবে।
- রপ্তানির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার পরিমাণ কমলে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ে আশ্বাস রাখা যেতে পারে।
- বিশ্ব বাণিজ্য যতটা সম্ভব মুক্তভাবে চলার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের যে সংকট তৈরি হচ্ছে তা এড়ানোর জন্য হলেও এটা করতে হবে।
- এছাড়া আতঙ্কিত মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে মজুত করার প্রভাব কমাতে হবে, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি খাদ্য মজুদ করলে আইনের আওতায় আনতে হবে।
- এমন দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতিতে থাকা অন্তত ৪ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য দ্রুত তহবিল গঠনের আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
- ১০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে সরকার কিন্তু ৫ কোটি লোকের খাদ্য সংকট যা দেখা দিয়েছিলো তা থেকে বেড় হয়ে আসতে পেরেছে। বাংলাদেশ একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও খাদ্য সমস্যা মোকাবেলায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
এখানে আমরা দেখছি যে খাবারের উচ্চমূল্য বিশ্বব্যাপী এসব মানুষের জন্য কী অর্থ বহন করে এবং খাদ্য দরিদ্রতা কমাতে বিকল্প আর কী আছে। কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে খাদ্য সংকট নিরসনে দেশগুলোর নিরলস পথচলা অব্যহত রাখতে হবে।
আমার পূর্বের ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Writer
Nusanta Samayel Audri
Content Writing Intern
YSSE