আমরা সবাই ই কমবেশি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক হলিউড মুভি দেখেছি অথবা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোন এস্টেরয়েড নিয়ে সাইন্স ফিকশন মুভি দেখেছি। তখন একবার হলেও কল্পনায় এটি অবশ্যই এসেছে যে সত্যিকারে যদি এরকম কিছু ঘটে তবে কি হবে এই সভ্যতার বা আমাদের অস্তিত্বের? আপনার এই কল্পনা কে চমকে দিতেই এবার খবর পাওয়া গেছে যে চীনা একটি রকেট এর কিছু অংশ ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে।
চীনা রকেট লং মার্চ 5B গত ২৮ এপ্রিল পৃথিবী থেকে মহাকাশে চীনা স্যাটেলাইট এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ২২.৫ মেট্রিক টনের কোর মডিউল টি অরবিটে স্থাপনের পর পর ই সমস্যা শুরু হয়। চীন গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের অংশ হিসেবে রকেট টিকে মহাকাশে পাঠিয়েছিলো। সম্প্রতি চীন পৃথিবীর কক্ষপথে নিজেদের “তিয়ানহে” নামক একটি মহাকাশ স্টেশন বানানোর কাজ শুরু করেছিলো যা আগামী ২০২২ এর মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিলো। এরই অংশ হিসেবে রকেট লং মার্চ কে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু মডিউল টি স্থাপন করেই এর ২১ টন ওজনের ৩০ মিটার উচ্চতার একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে মহাকাশে। কিছু সময় পর্যবেক্ষণের পর বোঝা যায় যে রকেটের এই অংশটি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।
আমেরিকান ডিফেন্স এর মুখপাত্র মাইক হাওয়ার্ড জানিয়েছেন যে, আমেরিকান স্পেস কমান্ড রকেটটির অবস্থান বের করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু ঠিক কোথায় গিয়ে রকেটটি পড়বে সে ব্যাপারে এটি ঢুকার কিছু ঘন্টা আগে বাদে আর জানা সম্ভব হবে না এবং তারিখটি ধারণা করা হচ্ছে ৮ মে। এখানে বিশেষজ্ঞদের ভয়ের বিষয় এটি যে লং মার্চ পৃথিবীর দিকে আসা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অনিয়ন্ত্রিত পুনরায় প্রবেশকারী রকেট। কারণ সর্বশেষ যেটি পৃথিবীতে প্রবেশ করে সেটির ওজন ছিলো ১০ টন।
আমেরিকান ম্যাগাজিন দ্যা গার্ডিয়ান এর প্রতিবেদনের মতে, গত মঙ্গলবার এই অংশবিশেষ টি কে ২৭৬০০কি.মি/ঘন্টায় পৃথিবী কে প্রায় ৯০ মিনিটে একবার প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। তখন এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০০ কি.মি উপরে ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে এটির পৃথিবী থেকে দুরত্ব এখন আরো ৮০ কি.মি কমে গেছে।
রকেটটির অনেকটুক অংশ ঘর্ষণের জন্য পুড়ে গেলেও প্রায় সবটুকু অংশই অক্ষত রয়েছে এবং এটি ৯ মে এর মধ্যে পৃথিবীর যেকোন স্থানে পড়তে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট জোনাথান ম্যাকডোয়েল সিএনএন কে জানান, যেই অংশটুক পৃথিবী তে পড়বে তা হবে প্রায় ১০০ মাইল জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ছোট একটি প্লেনের ধংসাবশেষ এর মতো। এখনো এটি ধারণা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে যে এটি কোন স্থানে আঘাত করবে। তবে ম্যাকডোয়েল এর মতে, এটি কোন জলযুক্ত স্থান যেমন নদী বা সমুদ্রে পড়তে পারে যেহেতু পৃথিবীর ৭১% অংশ পানি। কিন্তু পৃথিবীতে আঘাত হানার ৬ ঘন্টা আগে এই তথ্য জানানো যাবে বলে স্পেস নিউজ জানান।
চীনা কোন রকেটের পৃথিবীতে পড়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। অনেক বিশেষজ্ঞ এজন্য চীনের মহাকাশ গবেষণা ইন্সটিটিউট কে দোষারোপ করছে। গত বছর চীনা আরেকটি লং মার্চ রকেট উৎক্ষেপণের পর একই ভাবে পৃথিবীতে আঘাত হানে যখন আইভোরি কোস্টের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমেরিকান মিলিটারি রকেটটির নাম দিয়েছে 2021-035B এবং এর গতিপথ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সাইট উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
চীন ২০২২ এর মধ্যে তাদের মহাকাশ কেন্দ্র স্থাপণের পূর্বে এরকম আরো ১১টি মডিউল কক্ষপথে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এটি পৃথিবী তে কিভাবে প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিশ্বের এরকম আরো নতুন এবং অজানা খবর জানতে ক্লিক করুন এখানে
সাবিকুন্নাহার আফরা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE