প্রতিদিন আমরা নানা রকম কর্মব্যস্ততায় জড়িয়ে থাকি এবং নিজের শরীর সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ি। নিজের সাস্থ্যের কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেও তেমন গুরুত্ব দেই না এবং অজান্তেই কিছু রোগের জন্ম হয়ে উঠে আমাদের দেহে। এরকম একটি রোগের নাম হলো হাইপারথাইরয়েডিজম। এই ব্লগটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন হাইপারথাইরয়েডিজম কি, কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও তার প্রতিরোধ সম্পর্কে।
থাইরয়েড সমস্যার কারণঃ
হাইপারথাইরয়েডিজমের ব্যপারে জানার পূর্বে থাইরয়েড সমস্যার কারণ গুলো জেনে নেই। জন্মের সময় থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকভাবে তৈরী হতে না পারলে অথবা সঠিক পরিমাণে হরমোন তৈরী করতে না পারলে বাচ্চাদের শারিরীক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এছাড়াও আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে যা একটি বিশেষ কারণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে আয়োডিন না থাকলে এ রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও জন্মলগ্ন ভাবে রোগী DNA এর মাধ্যমে কিছু True Disease বা প্রকৃত রোগ পেয়ে থাকে, থাইরয়েডের সমস্যার কারণ তার মধ্যে একটি। এই প্রকৃত রোগের মধ্যে যেগুলো প্রি-ডোমিন্যান্ট থাকে সেগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রকাশ পায় এবং সমস্যার সৃষ্টি করে৷ হাইপারথাইরয়েডিজম হলো প্রকৃত রোগ গুলোর মধ্যে একটি। এই প্রকৃত রোগ গুলো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে চিরতরে নির্মূল করা যায়।
হাইপারথাইরয়েডিজম কি?
থাইরয়েড হলো প্রজাপতি আকারের একটি গ্রন্থি যা প্রতিটি মানুষের গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয় থাইরক্সিন নামক হরমোন। এই হরমোনটি বিপাক কার্যে, দেহের শক্তি বাড়াতে ও আমাদের মেজাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এই থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমোন অতিরিক্ত পরিমাণে উৎপাদিত হওয়া হলো হাইপারথাইরয়েডিজম, যা দেহের জন্যে ক্ষতিকর।
হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ সমূহঃ
- অকারণে শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
- শরীর প্রচুর ঘামা এবং গরম সহ্য করতে না পারা।
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া।
- চোখে ঘোলা দেখা।
- কিছুক্ষণ পর পর হাতের তালু ঘামতে থাকা।
- ঘুমের সমস্যা হওয়া।
- হৃৎপিন্ডের দ্রুত সঞ্চালন হওয়া।
- বমির ভাব হতে পারে।
- মেজাজের পরিবর্তন এবং খিটখিটে ভাব দেখা যেতে পারে৷
- পেশির দুর্বলতা এবং হাত কাঁপা।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
হাইপারথাইরয়েডিজম হওয়ার কারণঃ
থাইরয়েড গ্রন্থিতে নিম্নোক্ত কিছু সমস্যা দেখা দিলে হাইপারথাইরয়েডিজম রোগটি হয়ে থাকে। যেমনঃ
- অটোইমিউনো ডিজিস ‘graves’ দেখা দিলে।
- থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বড় হলে।
- থাইরয়েড এ প্রদাহ হলে।
- থাইরয়েড নড্যুলের সৃষ্টি হলে।
- আয়োডিনসমৃদ্ধ ঔষধের কারণে।
প্রতিকারঃ
হাইপারথাইরয়েডিজম হলো একটি অটোইমিউন প্রক্রিয়া। এই রোগের নির্মূলের জন্যে তিন ধরণের চিকিৎসা রয়েছে। সেগুলো হলো –
- আ্যন্টিথাইরয়েড হরমোন
- সার্জারি
- রেডিও আয়োডিন
রোগীর বয়স এবং তার শারিরীক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই তিন ধরণের চিকিৎসা অবলম্বন করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আ্যন্টিথাইরয়েড হরমোন ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়৷ এই ওষুধ অনেক দিন ধরে সেবন করতে হয়। অনেক সময় এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত এই ওষুধ নেয়া লাগতে পারে৷ এছাড়া হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এই রোগ প্রতিকারে সহায়তা করে এবং পুরোপুরি সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজম রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার এবং ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার একজন ব্যক্তিকে থাইরয়েডজনিত সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত রোগীর নিয়মিত দেখা শুনা বা ফলো -আপ এর মাধ্যমে রোগীর যত্ন নেওয়া যেতে পারে। রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Mehzabin Sultana Rimon
Intern, Content Writing Department
YSSE