যেকোনো দেশের উন্নয়নেই উদ্যোগী হয়ে ওঠা খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেক কারণেই তা হয়ে উঠে না। এই যেমন ধরুন ফিলিপাইনে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে যা উদ্যোগী বা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার ইচ্ছাকেই দমিয়ে দেয়। ইউরোপের একটি গোলটেবিল বৈঠকে “বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম” ৭টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করে যেখানে তরুণদের কাছে কীভাবে উদ্যোগী হয়ে ওঠাকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় এবং সেখানে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিজনেস সেক্টরগুলো কীভাবে ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করে। যদিও সেটি ইউরোপের সার্বিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তা গ্রহণযোগ্য।
“বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম” এর উল্লেখিত ৭টি বিষয় নিম্নরূপঃ
১/ শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন।
আমদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ যেখানে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং মূল ধারার বাইরে গিয়ে চিন্তা করে সমস্যার সমাধান করার জন্য উৎসাহিত করা হবে। উদ্যোগী এবং উদ্ভাবনী করে তুলতে বিভিন্ন ধরণের শাখার সংমিশ্রণ করা প্রয়োজন। এখনি সময় প্রতিটি স্তরে পুরোনো শিক্ষা ব্যবস্থাকে বদলে নতুন করে প্রণয়ন করার।
২/ শাসন-প্রক্রিয়ায় অঙ্গীকার গঠন।
সরকারকে উঠতি দক্ষতার অভাবকে উপলব্ধি করে স্বচ্ছ এবং সুসঙ্গত অঙ্গীকার করা প্রয়োজন এবং সেটি অবশ্যই সর্বোচ্চ পলিটিক্যাল স্তর থেকে। নীতি নির্ধারণীতে ব্যবসায়ী উদ্যোগকে শক্তিশালী সহযোগিতার অঙ্গীকার থাকতে হবে। এছাড়াও এমন কৌশলগত কাঠামো গঠন করতে হবে যেন স্কুল এবন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সম্পর্কিত প্রোগ্রাম এবং কার্যাবলী বাস্তবায়ন করে। আর এ সবকিছু করতে বৃহৎ পরিসরে সমন্বয় এবং প্রয়োগ প্রয়োজন; সরকারি, ধর্মীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে। । এছাড়াও স্কুল, ব্যবসা, এনজিও এবং কমিউনিটির স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩/ প্রাতষ্ঠানিক অঙ্গীকার উন্নয়ন।
একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রোগ্রামগুলো পুনর্গঠন করতে হবে ২১শতকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে। অঙ্গীকার প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর পর্যায় থেকে। এর সাথে আরও প্রয়োজন স্বচ্ছ কার্যকর পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা এ পথে আরও এগিয়ে যায়।
৪/ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন এবং অনুপ্রেরণা প্রদান।
উদ্যোগী হবার শিক্ষা দেবে এমন শিক্ষক গড়ে তোলা খুবই জরুরী। সেজন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তা অথবা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকেও এ বিষয়ে শিক্ষাদানে উৎসাহিত করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন তা নয়, শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্যোগী মনোভাবকে জাগিয়ে তুলে সেটিকে কাজে লাগাতে হবে।
৫/ অনুশীলনে উদ্দীপিত করা।
শিক্ষাব্যবস্থায় অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকা উচিত যেন ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রের জন্য দরকারি দক্ষতাগুলো নিশ্চিত হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগী হয়ে উঠতে পরীক্ষণ এবং অনুশীলনের সুযোগ দিতে হবে। তাদের সামনে সফলতার গল্পগুলোকে তুলে ধরতে হবে। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখাটা এক্ষেত্রে খুবই জরুরী।
৬/ কর্মপরিধি এবং অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি।
যদিও পূর্বের তুলনায় ব্যবসাশিক্ষার প্রোগ্রাম বেড়েছে, কিন্তু কর্মপরিধি এবং অনুপ্রবেশ এখনও একটা চ্যালেঞ্জ। বর্তমান যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে- শিক্ষা প্রদান এবং শিক্ষা উপকরণ এ দুটি হিসেবেই। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেকের কাছেই যেমন ব্যবসা শিক্ষাকে পৌঁছে দেয়া সম্ভম তেমন পারস্পারিক ক্রিয়াশীল এবং আঞ্চলিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রোগ্রাম এর আয়োজন করাও সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহারই এমন এক পন্থা সৃষ্টি করছে যাতে কর্মপরিধি এবং সর্বস্তরে অনুপ্রবেশ বাড়ানো যাবে।
৭/ কার্যকর ফলাফল এর জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং এর প্রভাবকে বাড়ানো।
মূল্যায়ন এবং নীতিনির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এগুলোকে হতে হবে বৃহৎ পরিসরে ঠিক নির্ধারিত ফলাফলের ভিত্তিতে। তবে অবশ্যই সংকীর্ণ উপায়ে নয়, যেমন- কয়টা স্টার্টআপ হলো শুধু তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন ইত্যাদি করা যাবে না। মূল্যায়ন হতে হবে সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ভিত্তিতে।
তরুণরাই দেশের হাল ধরবে। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। বেকারত্ব সমস্যা দূর করে দেশের উন্নয়নে তরুণদেরকে উদ্যোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা হোক একতাবদ্ধভাবে।
কানিজ ফাতেমা কলি