শাড়ি প্রেমী সকল বাংলাদেশী নারীদের পছন্দ ও সংগ্রহের তালিকায় জামদানি শাড়ি থাকবে না, তা কি হয়!
জামদানির সঙ্গে ”আভিজাত্য এবং রুচিশীলতা” এই দুটি শব্দ জড়িয়ে গেছে শুধু এর অনন্য নান্দনিক নকশা ও দামের কারণে। অসাধারন নকশা ও বুননপদ্ধতির বিশেষত্বের কারণে জামদানি শাড়ি নিজেকে অনন্য করে প্রকাশ করেছে। শাড়িপ্রেমীদের কাছে এর কদর খুব বেশি। যদিও এই শিল্পের বিকাশ বা ব্যাপ্তি তত বেশি হয়ে উঠেনি। কিন্তু, বর্তমানে দেশের বাজারে ও পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও এর প্রসার ঘটছে। জামদানি নিয়ে কাজ করে এটিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন অনেকেই।
আর এই জামদানি নিয়েই সফলতার এক গল্প গড়েছেন একজন, যাকে নিয়েই আজকের লিখাটি, তিনি হচ্ছেন তানিয়া। আর তার অনন্য উদ্যোগ ‘বিরাজবৌ‘।
‘বিরাজবৌ’ তানিয়ার পরিচয়ঃ
পুরো নাম তানিয়া সুলতানা। বেড়ে উঠেছেন ময়মনসিংহে। ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করেন এরপর বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে পড়াশোনাতে কিছুটা গ্যাপ তৈরি হলেও পড়াশোনা বন্ধ করেন নি। বর্তমানে তিনি বিএসএস পরীক্ষার জন্য অধ্যয়নরত আছেন। তার উদ্যোক্তা জীবনের পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ উই’র ”উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম” ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ প্রজেক্ট ‘এসএমই ডিপি টু’ ময়মনসিংহ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্পঃ
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি জানান তাঁর এই উদ্যোগ শুরুর গল্প। ২০২০ সালের জুন মাসে উইতে যুক্ত হয়ে দীর্ঘ দেড় মাস জামদানি শাড়ি সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে জেনে নেন জামদানির আদ্যপান্ত। আরো জানান মূলত তাঁর স্বামীর পরামর্শেই জামদানি নিয়ে কাজ শুরু করেন। শুরুতে, ময়মনসিংহ থেকে নারায়ণগঞ্জের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তবে, জেলা ভিন্ন হওয়ায় মুখোমুখি হন নানা চ্যালেঞ্জ এর। প্রথমে, এটা নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হলেও বর্তমানে বেশ সফল তিনি এমন টাই জানা যায় উদ্যোক্তা বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ ‘উই’ এ তার সেল আপডেট থেকে।
পাশাপাশি উদ্যোগের নামে ওয়েবসাইট নিয়েও কাজ করছেন এবং শীগ্রই ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে ‘বিরাজবৌ’ এর অনন্য জামদানি।
‘বিরাজবৌ’ এর সফলতা ও এর পিছনে আছেন যারাঃ
সফলতা তো কখনো একা একা পাওয়া যায় না। কেউ তো থাকেই পর্দার আড়ালে আমাদেরকে বলার জন্য যে, আমরা আছি সাথে। ঠিক তেমনি এখানেও, তানিয়া সবচেয়ে বড় সাপোর্ট পেয়েছেন তাঁর স্বামীর থেকে এমন টাই জানান তিনি। তাছাড়াও সহযোগিতা পান বাবা ও শ্বশুর বাড়ির থেকেও। প্রত্যেকটা কাজে উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন ভাসুর ও জা। এবং নিজের বাবা-মা ও ভাই-ভাবিকেও স্বপ্ন পূরণে পাশে পেয়েছেন সবসময়। আর যার কথা না বললেই নয়, উই’র প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা। যার কারনেই মূলত আজ বাংলাদেশের অসংখ্য নারী উদ্যেক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
বিরাজবৌ এর পথচলা ও ভবিষ্যৎঃ
ইতিমধ্যেই, তানিয়া দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তার বিরাজবৌ নিয়ে। উদ্যোগ এর প্রথম ১০ মাসেই জামদানি শাড়ির মোট বিক্রি হয় প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা তার মধ্যে বাদ যায় নি বিদেশি ক্রেতারাও। বিশ্বের ৮ টি দেশেও পাঠান তাঁর জামদানি শাড়ি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁর।
জামদানি কে দেশে বিদেশে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াতেই থেমে থাকতে চান না তিনি বরং দেশীয় এই অনন্য শিল্প কে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দিতে চান।
সবশেষে, আমরাও আশাবাদী তানিয়ার বিরাজবৌ এর মত এমন অনেক সফল উদ্যোক্তার হাত ধরেই আমাদের দেশীয় শিল্পগুলি একদিন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।
আমাদের অন্য ব্লগগুলো পড়ুন এখানে
জ্যানিসা আফরোজ,
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।
ওয়াইএসএসই (https://ysseglobal.org/blog/)