নারী শব্দটি শুনলেই সবার প্রথমে কোন বৈশিষ্ট্য গুলো আপনার মাথায় আসে? ঘরের কাজ করবে, বাইরে বের হবেনা, তাদের নিজেদের কোনো আয়ের উৎস থাকবেনা এরকম কিছু? সত্যি বলতে গেলে, কিছু বছর আগেও আমাদের সবার মাথায় এসব বৈশিষ্ট্যেই সবার আগে জায়গা দখল করে নিতো।
কিন্তু আজকের বিশ্বে এরকম খুব কমই দেখা যায়। নারীরা চাকরি করছে, নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছে এবং মজবুত করছে তার অর্থনৈতিক অবস্থা। কিন্ত হতাশাজনক বিষয় কি জানেন? আজকে ২০২১ সালে এসেও নারীরা ঠিক আগের মতোই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হচ্ছে। শুধু যে চাকরি ক্ষেত্রে তা নয়, নিজের উদ্যোগে যদি কোনো নারী ব্যবসা দাঁড় করাতে চায়, সেক্ষেত্রেও তাকে মুখোমুখি হতে হয় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ এর। করোনার এই ভয়াবহ থাবায় যেন আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে এসব প্রতিবন্ধকতাগুলো।
আজকে আমরা আলোচনা এমন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে, যেগুলো একজন নারী উদ্যোক্তার প্রতিনিয়তই ফেস করতে হয়।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা:
আমাদের সমাজে নারীদের একটি গন্ডির ভেতরে কল্পনা করা হয়। সমাজের প্রায় সকলেই ধারণা করে নারী মানে হচ্ছে, যারা তাদের সম্পূর্ণ সময় পরিবারের পেছনে ব্যয় করবে। কিন্তু একজন নারী পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি নিজের বিজনেসও সুন্দর ভাবে চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া আরো বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো, কোনো নারী বিজনের দাঁড় করানোর পর, গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে তার বেশ সময় লাগে, যা পুরুষের ক্ষেত্রে একদমই হয়না। এটির পেছনের কারণটিও হলো আমাদের একচোখা চিন্তাভাবনা।
মূলধনের অভাব:
আমাদের শরীরের জন্য খাদ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি একটি ব্যবসা দাঁড় করাতেও মূলধন ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হতাশাজনক হচ্ছে, আজকের এই দিনে, যখন নারীরা সবদিক থেকে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। তবুও একদল মানুষ তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেনা, তাদের উদ্যোগে ইনভেস্ট করতে চাচ্ছেনা। এছাড়া ব্যাংকও নারীদের লোন দিতে নারাজ, কারণ তারা মনে করে নারীরা তাদের বিজনেস খুব বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা। এছাড়া নারীদের নিজস্ব কোনো সেভিংস ও থাকেনা।
সাপোর্ট এর অভাব:
যেহেতু নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা বেশি, সেহেতু দেশে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও কম। আর যে কারণেই যে সকল নারীরা নতুন বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছে তাদের মেনটর বা এডভাইসরের সখ্যাও কম। এক সার্ভেয় তে দেখা গিয়েছে, ৪৮% নারী বিশ্বাস করে প্রয়োজনীয় মেন্টরশীপ এর অভাবে তাদের বিজনেস ভালো ভাবে গ্রো করছেনা।
বিজনেস নেটওয়ার্ক এর অভাব:
এক সার্ভেতে দেখা যায়, অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তারাই সেইসকল নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত নয় যেখানে তারা বেশি বেশি গ্রাহক, পার্টনার, সাপ্লায়ার পাবে।
আত্নবিশ্বাসের অভাব:
বেশিরভাগ নারীরাই তাদের আত্নবিশ্বাস নিয়ে স্ট্রাগল করে৷ যেহেতু তাদের সাপোর্ট অনেক কম থাকে তাই তারা নিজেরদের স্কিলগুলো বুঝতে পারেনা। তারা সমাজের জন্য কোন জিনিসগুলো করতে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারেনা। তাই খুব সহজেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন এর ভারসাম্যতা বজায় রাখা:
আমাদের সমাজের নিয়ম হচ্ছে নারীরা শুধুমাত্র পরিবারের খেয়াল রাখবে, এর বাইরে সে তার ক্যারিয়ার নিয়ে অতটা ভাবতে পারবেনা। ঠিক এ কারণেই তারা পরিবারের কাছ থেকে সাপোর্ট কম পায়। যার ফলে ঠিক কোন উপায় তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন একসাথে সুন্দরভাবে চালানো যায়, তা খুঁজে বের করা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
মার্কেট একসেস বৃদ্ধি করা:
প্রত্যেক উদ্যোক্তার জন্যই এটি একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষকরে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ কারণ এমনিতেই তাদের নেটওয়ার্ক অনেক কম থাকে, যার ফলে তাদের মার্কেট একসেস ও কম থাকে।
আমি মনে করি, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য দেশে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মধ্যে যদি সৃজনশীলতা থাকে এবং উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি নারী নাকি পুরুষ সেই ভেদাভেদ একদমই আসা উচিত না। তাই নারীদের এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত করতে আমারের সদা প্রস্তুত থাকা চাই।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
শাহানা তামান্না সাথী
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ওয়াইএসএসই