বই মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। বিশ্বের সকল সফল ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের সফলতার পেছনে বইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। কেননা বই পড়ে জ্ঞানার্জন করে তা কাজে লাগিয়েছে বলেই আজ তারা সফল। অর্থাৎ বই মানুষকে সফলতার পথে পরিচালিত করে। এজন্যই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, “একেকটা বই একেকটা জানালার মতো। ঘরের জানালা দিয়ে যেমন বাইরে সব কিছু দেখা যায়, তেমনি বই পড়লেও আগামীটা দেখা যায়।”

বিল গেটস প্রতি বছর ৫০টি বই পড়েন; Source: Time
বিখ্যাত ব্যক্তি Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা বই নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি বই পড়েন। অর্থাৎ তাঁঁরা এতোটা সফল হওয়ার সত্ত্বেও নিয়মিত জ্ঞানার্জন করেই যাচ্ছে। জ্ঞান অর্জন ছাড়াও, শারীরিক সুস্থতার জন্য দৈনিক অন্তত ১ ঘন্টা বই পড়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বই পড়ার এরুপ নানান সুবিধার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো।
১. জ্ঞান অর্জন
বই পড়ার সবচেয়ে মৌলিক উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানার্জন। জ্ঞানপিপাসু মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের পেছনে ছোটে৷ যারা নিয়মিত বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করে এবং সঠিক জ্ঞানটুকু তাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে, তাঁরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের কাতারে জায়গা করে নেয়।

বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বাড়ে; Source: Tufts Now – Tufts University
নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। যার ফলে তারা জীবনের যেকোনো সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা তা মোকাবিলা করতে পারে। অর্থাৎ সংকটপূর্ণ সময়ে আপনার অর্থ সম্পদের ঘাটতি থাকলেও, অর্জিত জ্ঞানের কোনো ঘাটতি থাকবে না। সুতরাং যার জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাবে সে তত সহজে যেকোনো চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে পারবে।
২. মানসিক উদ্দীপনা
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যেসব রোগে অতি মাত্রায় ভুগছে তার বেশিরভাগের সাথে সরাসরি মানসিক চাপের যোগাযোগ রয়েছে। যেমন হতাশা বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি বড় আতঙ্কের নাম। তারা যদি হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে, জ্ঞানার্জনে সচেষ্ট থাকতে পারতো, তাহলে হতাশা শব্দটি আজকে মহামারী আকার ধারণ করতে পারতো না।
বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে এক ধরণের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। যতোক্ষণ জ্ঞানার্জনে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যায়, ঠিক ততক্ষণ মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকার ফলে এসব রোগের প্রবণতা কমে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অধ্যয়ন করা Dementia এবং Alzheimer’s নামের এই রোগ দুটোকে হ্রাস, এমনকি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
৩. মনোযোগ ক্ষমতার উন্নয়ন

যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করলে সহজে সফল হওয়া যায়; Source: Lifehack
বই পড়া মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধির অত্যন্ত উপকারী একটি কৌশল। কর্মক্ষেত্রেই হোক কিংবা পড়াশোনায়, যে কাজ পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করা হয় না সেই কাজে খুব সহজে সফলতা আসে না। তাই যেকোন কাজ মনোযোগ সহকারে করতে হলে অবশ্যই মনোযোগ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর মনোযোগ ক্ষমতা বাড়াতে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, যারা অ্যাটেনশান ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রমে ভুগছে তাদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করা উচিত। এতে তাদের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৪. শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি
একজন বই পড়ুয়া মানুষ যত বেশি শব্দ সম্পর্কে অবগত, সেই তুলনায় একজন সাধারণ মানুষ কয়েকগুণ পিছিয়ে। বই মানুষের শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির এক অনবদ্য শৈলী। যে ব্যক্তি যত বেশি বই পড়ে তার শব্দভাণ্ডার ততবেশি সমৃদ্ধ।
৫. মানসিক প্রশান্তি
বই মানুষকে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রচুর মানসিক প্রশান্তিও দিয়ে থাকে। সাধারণত আমরা বই পড়ার সময় একটি শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ খুঁজি। কেননা শান্ত পরিবেশে বই পড়লে খুব সহজেই মনোযোগ দেওয়া যায়। তাছাড়া সেই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস আমাদের চিন্তা শক্তিকে আরও বেশি প্রসারিত করে। যার ফলে সেই সময়টাতে আমাদের মস্তিষ্ক বইয়ের নির্দিষ্ট বিষয় ব্যতীত, সমস্ত চিন্তা চেতনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। যার ফলে এক ধরণের মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।

নিরিবিলি পরিবেশে বই পড়লে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়; Source: nbcnews.com