“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
যেকোন দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অনস্বীকার্য। আর বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা সেটাই দেখতে পাই। প্রতিনিয়ত নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, বিমান চালকসহ যেকোন পেশাতে নারীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা নেহাতই কম নয় কিন্তু, তাইনা?
তবে এবার যে তথ্যটি আমাদের চমকে দিচ্ছে তা হল,
আসন্ন অলিম্পিকে বাস্কেটবল খেলায় এবার রেফারি হিসেবে দেখা যাবে সারাহ গামাল নামে একজন আরব ও আফ্রিকান নারীকে। কোভিডের কারণে পিছিয়ে এবছরের অলিম্পিকের তারিখ ঘোষিত হয়েছে ২৩ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট। আর ‘টোকিও ২০২০’ অলিম্পিকের বাস্কেটবল রেফারির দায়িত্ব হিসেবেই থাকছেন সারাহ। হিজাব পরিহিতা এই নারী পূর্বেও মিশরের বাস্কেটবলে নামকরা আলেকজান্দ্রিয়া ইউনাইটেড ক্লাবের খেলা পরিচালনা করেছেন রেফারি হিসেবে।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল সারাহ গামালের। পড়াশুনা করেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। এএফপিকে দেওয়া এক ইন্টারভিউ তে তিনি বলেন, “পাঁচ বছর বয়সে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ জন্মে আমার। আর এই আগ্রহ থেকে আমি আমার নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা সময় বের করে নিতাম। এর জন্য সব ধন্যবাদ আমার মায়ের প্রাপ্য। তাঁর কারণেই আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পেরেছি। এটা খুব কঠিন ছিল। কারণ, এই বিষয়ে পড়তে গিয়ে প্রচুর পড়াশোনার চাপ ছিল। এমনকি মানসিক চাপও ছিল।”
পরিবারের সাপোর্ট পেলে অনেক বেশি প্রেশারে থেকেও নিজের প্যাশন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং বিশ্বকে সুন্দর কাজ উপহার দেওয়ার যায় এর দৃষ্টান্ত বোধহয় সারাহ গামাল নিজেই। পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক ভাবেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। আমাদের সমাজে মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে সেটা প্রায় ছিলনা বললেই চলে। খেলার এই পুরুষ জগতের মাঝে নারী হয়েও নিজের কাজ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন তিনি।
এ এফ পি কে তিনি আরো বলেন, “রেফারি হিসেবে আমার যাত্রা শুরুর পর থেকে এখনো কোনো নেতিবাচক শব্দ শুনিনি। অথবা কোনো ধরনের বাধার মুখোমুখি হইনি। হিজাব আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক পোশাক। এর কারণে কোনো সমস্যায়ও পড়িনি।”
বিভিন্ন দেশেই নারীদের হিজাব পরা নিষেধ থাকলেও এধরনের সমস্যায় পরতে হয়নি সারাহ গামালকে। বরং
আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল ফেডারেশন ২০১৭ সাল থেকে তাদের নিয়মে পরিবর্তন করেছে এ ব্যাপারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের জন্য হিজাব পরার অনুমতিও দিয়েছে।
ছোটবেলা থেকে খেলার প্রতি আগ্রহী সারাহ গামালের অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম হলো ২০১৮ সালে বেলারুশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল ফেডারেশন ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ কাপ ও ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্সশিপ প্রতিযোগিতায় ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা। তবে এবার অলিম্পিকে নিজের দক্ষতা দেখানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ৩২ বছর বয়সী এই নারী। অলিম্পিকের আসরে রেফারি নির্বাচিত হওয়ায় তিনি ও তার পরিববারের সদস্যরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছেন। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হলেও তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে পরিবারের।
আমাদের দেশের নারীরাও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন পেশায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তবুও ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এর মত গৎবাঁধা কিছু পেশার বাইরে কাজ করা এখনো অনেক পরিবারই মেনে নিতে পারেনা। নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে ঘরে বন্দী করে রাখা হয় কিংবা জোর করে বাবা মায়ের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া হয় আমাদের উপর। চলুন আমরা দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তন করি। সব পেশার মানুষই সমান গুরুত্বপূর্ণ এটাই সবসময় মেনে চলি আর নারী হলেও তার নিজের পছন্দের কাজ যেন করতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করে দেই। তাহলে আমাদের দেশেও অনেক সারাহ গামাল তৈরি হবে।
আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
হোমায়রা জাহান,
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।