পাবলো পিকাসো – বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী শিল্পী। তার “লে দেমোয়াজেল দে’ভিনিয়োঁ” এবং স্পেনের গৃহ যুদ্ধের বিরুদ্ধে আঁকা “গের্নিকা” তাকে জগৎজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। বৈচিত্র্যময় তার জীবনে তিনি ভাস্কর্য নির্মাণ, পত্রিকা অলঙ্করণ, স্টেজ তৈরির কাজ করলেও মূলত চিত্রকর্মই ছিল তার নেশা।
বাল্যকাল থেকেই চিত্রকর্মের উপর তার প্রচুর আগ্রহ ছিল। আর এই আগ্রহের বশেই তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে “ক্ল্যাসিকাল অঙ্কন” শিখেন। এরপর থেকে তার চিত্রকর্মের উপর ঝোঁক ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। আর এই ঝোঁকের বশেই স্পেনে জন্ম হলেও, তরুণ বয়সে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। উদ্দেশ্য চিত্রকর্মে উচ্চতর দক্ষতা অর্জন। ফ্রান্সে পাড়ি জমালেও উনি ফ্রেঞ্চ জানতেন না, যার জন্য দারিদ্র্যের কষাঘাতে তাকে জর্জরিত হতে হয়েছিল। এই দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকলেও ভাগ্য কোনভাবেই যেন সহায় হচ্ছিল না তার। তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্যারিসে তার ভাড়া করা ছোট্ট এক রুমের ঘরে নিজের হাতেই নিজের বহু চিত্রকর্ম তিনি পুড়িয়ে ফেলেছেন; শুধুমাত্র একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায়। বোঝাই যাচ্ছে, কতোটা কষ্টে তাকে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল।
ভাগ্যক্রমে একটি ম্যাগাজিনের চিত্র অলঙ্করণের সুযোগ পেলেও সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। এরপরে উনি একটি আর্ট গ্যালারিতে যোগদান করেন। এবার মনে হয় ভাগ্য তার সহায় ছিল। এজন্য তাকে আর পিছে ফিরে তকাতে হয়নি। সামনে শুধু সফলতার এক একটি ধাপ পার করেছেন। এরপর তার পরিচয় হয় প্রভাবশালী গারট্রুড স্টেইনের সাথে। গারট্রুড স্টেইন পিকাসোর চিত্রকর্মে মুগ্ধ হয়ে মোটামুটি দামে তার ১০টি চিত্রকর্ম কিনে নেয়। স্টেইন পিকাসোর থেকে নিজের একটি পোট্রেটও করান, যা পরবর্তীতে বিখ্যাত “সেল্ফ-পোট্রেট গারট্রুড স্টেইন” হিসেবে জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করে। স্টেইন পিকাসোর চিত্রকর্মে এতোটাই মুগ্ধ ছিলেন যে, তিনি নিজের সেলুনে পিকাসোর চিত্রকর্মের এক্সিবিশন শুরু করেন।
এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পিকাসো তার বিখ্যাত “লে দেমোয়াজেল দে’ভিনিয়োঁ” আঁকেন। এই চিত্রকর্মটিকে বিংশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হয়, এই চিত্রকর্মটিই আধুনিক চিত্রকর্মের সূচনা করেছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস! সময়ের সাথে সাথে পিকাসো হয়ে উঠেন তৎকালীন সবথেকে প্রতিপত্তিশালী একজন চিত্রশিল্পী। তিনি প্লাস্টিক আর্টে বৈপ্লবীয় উন্নতি সাধনের মাধ্যমে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, প্রিন্টমেকিং এবং মৃৎশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান। ২০১৫ সালে পিকাসোর আঁকা ‘উইমেন অব আলজিয়ার্স‘ ছবিটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছিল । নিলামে চিত্রকর্মটি রেকর্ড প্রায় ১৮ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল । বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
খালি চোখে মনে হতে পারে, পিকাসো রাতারাতি সফলতার মুখ দেখেছেন। কিন্তু তার এই সফলতার পিছনে রয়েছে ২০ বছরের গভীর সাধনা এবং পরিশ্রম। তার বিখ্যাত “লে দেমোয়াজেল দে’ভিনিয়োঁ” আঁকার আগে তিনি প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিল্পকর্ম তৈরি করেছিলেন, যেগুলো খুব একটা খ্যাতি পায়নি; যদিও তিনি বাল্যকাল থেকেই ছবি আঁকার সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিল্পকর্ম! সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। উনি কিন্তু হতাশ হয়ে ছেড়ে না দিয়ে লেগেই ছিলেন। অধ্যাবসায়ী ছিলেন, তাই সফলতাও পেয়ছেন।
ইসরাত জাফরীন, ইন্টার্ন/ ওয়াইএসএসই