পার্সোনাল ফিন্যান্স মানে হচ্ছে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়ের অর্থ ব্যবস্থাপনা। ব্যক্তি বা পারিবারিক পর্যায়ে ‘অর্থ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছেই অতটা পরিচিত না, কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই নিজের জীবনে যদি কিছুটা হলেও আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের মধ্য দিয়ে যাই তবে তাও পার্সোনাল ফিন্যান্সেরই ধারণা বহন করে। তাই বলে ভেবে নেওয়া যাবে না এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না বা এর তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
১৯২০ সালে হ্যাজেল কির্ক প্রথম পার্সোনাল ফিন্যান্স নিয়ে গবেষণা করেন। পার্সোনাল ফিন্যান্স বিষয়টি বেশ বিস্তৃত। জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলোর পিছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে অর্থ। একজন মানুষের নিজস্ব বা তার পরিবারের সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থাপনা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ নাহলে অর্থ নামক সম্পদটির অপচয় হওয়া অবশ্যম্ভাবী, অথচ যা মোটেই কাম্য নয়। কোনো ব্যক্তি যতই উন্নতির পিছনে ছুটুক না কেন উন্নতি নামক সোনার হরিণ তাঁর নিকট তখনই ধরা দেবে যখন তিনি পার্সোনাল ফিন্যান্স বিষয়টি সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে অবহিত হবেন এবং নিজের জীবনে তা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। পার্সোনাল ফিন্যান্সের অনেকগুলি দিক থাকলেও যে পাঁচটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হল- আয়, ব্যয়, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা (অবসর পরিকল্পনা এবং বীমা কভারেজ)। ব্যক্তির অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে এ সব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
পার্সোনাল ফিন্যান্স আপনার দৈনন্দিন আর্থিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। চলুন এটি কতটুকু দরকারি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
পরিমিত ব্যয় ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে
বেশিরভাগ মানুষ টাকা আয় করে তা কিভাবে ব্যয় করবে সেই চিন্তা করে। অপরিকল্পিত ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনের সময় তাদের সঞ্চয় তেমন একটা থাকে না। অর্থ উপার্জন কেবল ব্যয়ের জন্যই নয়, আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ততটুকু ব্যয় করতে হবে যাতে প্রতি মাসে ব্যয়ের আগে কিছু সঞ্চয়ও করা যায়। এই প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে পার্সোনাল ফিন্যান্স।
আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়
পার্সোনাল ফিন্যান্স শিক্ষা আমাদের উন্নত অর্থ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হয়। এতে করে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক সুন্দর সমন্বয় সৃষ্টি হয় যাতে ক্যাশ-ফ্লো বৃদ্ধি পায়। সঠিক বাজেট ও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যয় আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
অর্থের ইতিবাচক ব্যবহার বাড়ায়
একটি প্রবাদ আছে, ‘অর্থই অনর্থের মূল’। অনেক মানুষেরই হাতে টাকা থাকা অবস্থায় যেখানে সেখানে টাকা খরচ করা ও টাকা না থাকলে ঋণ নেয়ার স্বভাব রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত ঋণ নেয়ার কারণে তা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না, ঋণের সুদ বেড়ে চলে যা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। পার্সোনাল ফিন্যান্স শিক্ষা অর্থের এই নেতিবাচক ব্যয়কে রোধ করতে সহায়তা করে।
বিনিয়োগে সহায়তা করে
আর্থিক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান যথাযথভাবে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে। পার্সোনাল ফিন্যান্স সম্পর্কে জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা কোনো সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে ও তার পুনঃবিক্রয়মূল্য সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে সক্ষম হই। ফলে আমাদের সঞ্চয়ের সঠিক বিনিয়োগ ঘটে এবং সম্পদও কার্যকরভাবে বৃদ্ধি পায়।
দুশ্চিন্তামুক্ত অবসর জীবন নিশ্চিত করে
অবসরের পর আর্থিক দুশ্চিন্তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই আপনার উচিত অবসরের আগে পর্যাপ্ত সঞ্চয় করে রাখা যাতে আপনাকে বা আপনার পরিবারকে অবসর পরবর্তী আর্থিক সমস্যায় ভুগতে না হয়। আজকাল বেশ কিছু চাকরিতে বাধ্যতামুলক অবসর দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, তাই ব্যবসার মত চাকরিতেও exit plan রাখা উচিত যাতে অন্যের দয়ায় বাকি জীবন কাটাতে না হয়। পার্সোনাল ফিন্যান্সের এই শিক্ষা যেমন আপনার সারা জীবনের পরিশ্রম বৃথা যেতে দেয় না তেমনই অবসর পরবর্তী নিরাপত্তা ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন নিশ্চিত করে।
সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়তা করে
আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ছে যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে বাড়ছে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধের খরচ। আর এইসব খরচ মেটানোর জন্য বিভিন্ন বীমা কোম্পানী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা চালু করেছে যার মাধ্যমে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের মানুষও ব্যক্তিগত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা ঘটিয়ে চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে সক্ষম হয় ও নিশ্চিন্ত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পার্সোনাল ফিন্যান্স সম্পর্কে জানা আমাদের অন্যান্য জীবন-দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Shuvabrata Ghosh
Intern, Content Writing Department,
YSSE