ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের একদল গবেষক সম্প্রতি স্বল্প শক্তি ও ওজনের ওয়ারলেস ক্যামেরা সিস্টেম উদ্ভাবন করেছে, যা উঠবে বিটল বা বাংলায় আমরা যেতি গুবরে পোকা নামে চিনি, সেটির পিঠে। হ্যা, ঠিক শুনেছেন। গবেষকদের এই নতুন উদ্ভাবিত ক্যামেরা এতই হালকা আর সরু, যা অনায়াসেই পিঠে বয়ে চলতে পারবে জীবন্ত পোকা। হাই রেজ্যুলেশনের প্রায় ওজনহীন এই ক্যামেরাগুলো সেকেন্ডে প্রায় ৫টি ফ্রেম স্ট্রিম বা ধারণ করতে সক্ষম, যা তৎক্ষনাৎ নির্ধারিত সীমানায় থাকা স্মার্ট ফোন বা ডিভাইসগুলোতে দিবে সাদা-কালো ফুটেজ।
সম্প্রতি সাইন্স রোবটিক্স জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
শুনলে অবাক হতে হয় যে, ক্যামেরাগুলোর ওজন মাত্র ২৫০ মিলিগ্রাম, অর্থাৎ তা একটি তাসের কার্ডের ১০ ভাগের এক ভাগ ওজনের সমান! সাদা কালো ফুটেজ নিতে সক্ষম এই ক্যামেরাটি ১৬০/১২০ পিক্সেলে ছবি ধারণ করতে পারবে। যান্ত্রিক একটা হাত ক্যামেরার সম্পূর্ণ অংশকে বহন করে এবং পাশাপাশি এংগেলে এটি নড়াচড়াও করানো যাবে কন্ট্রোলের মাধ্যমে। যান্ত্রিক এই হাতটি প্রায় ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত নিজেকে ঘুরাতে পারে।
ফলে ধরুণ, আপনি এডভেঞ্চারে বের হয়েছেন আর সামনে পড়েছে এক গহীন জঙ্গল। ভয় না পেয়ে পোকার শরীরে এই ক্যামেরাটি বসিয়ে দিয়ে দেখতে থাকুন ভেতরের পরিস্থিতি। পেতে থাকবেন চারিদিকের প্যানোরোমা-চিত্র। ক্যামেরাটির আরেকটি ফিচার হলো এটি চারিদিকের পরিবেশ স্ক্যান করতে সক্ষম।
বিটল চলতে শুরু করলে কিছুসময় পর পর এটি ফুটেজ নিতে থাকবে। ব্যাটারির দশা উন্নত করার জন্য সিস্টেমে লাগানো হয়েছে এক্সেলোমিটার। যার ফলে এটি একবার চার্জে প্রায় ছয় ঘন্টা সার্ভিস দিতে পারবে।
স্মার্ট ফোনগুলোতে যেধরনের ক্ষুদ্র ক্যামেরা সাধারণত ব্যবহৃত হয়, সেগুলোতে ওয়াইড এংগেল ভিউ, হাই রেজ্যুলেশনের ছবি ধারণে প্রচুর পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন পড়ে। সেদিক থেকে বিটল-ক্যাম রীতিমত এক অনন্য উদাহরণ।
বিটল-ক্যাম সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের সহযোগী অধ্যাপক ও লেখক শ্যাম গোলাকোটা বলেন, “আমরা এমন একটি নিম্ন-শক্তিসম্পন্ন, হালকা ওজনের ওয়ারলেস ক্যামেরা সিস্টেম বানিয়েছি যা খুব সহজে গভীরের বা গহীনের বাস্তবিক চিত্রটা ফুঁটিয়ে তুলবে আর পোকার দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ দেখার সুযোগ করে দিবে,পাশাপাশি ক্ষুদ্র রোবটের ক্ষেত্রেও এটি ভালো পদক্ষেপ।”
আশার কথা, প্রায় এক বছরের জীবনীশক্তির এই পোকাগুলোর দেহে কোনরকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, এই বিটল-ক্যাম- এমনটাই ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। শুধু তা-ই নয়, এধরনের ক্যামেরা তারা বসাবে রোবটের উপরও। তবে ধারণাগত বিরাট রোবট নয়, বরং সেগুলোও বানানো হয়েছে পোকার আয়তনে।
রোবটের চেয়ে পোকার পিঠে ক্যামেরা চাপানো অধিক শ্রেয় হওয়ার অন্যতম দিক হলো, পৃথিবীর এমন অনেক প্রতিকূল জায়গা রয়েছে যেখানে রোবট-চালনা করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং বিপদের কারণও হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াহীন এই বিটল-ক্যাম বেশ জুতসই। এর ফলে সম্ভব হবে অজানা এবং প্রতিকূল স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া এবং পাড়ি দেয়া যাবে কঠিন অঞ্চলে।
আল-আমিন ইফতি/ ইন্টার্ন , ওয়াইএসএসই