আপনি কি প্রথমবার হেরে গেলেই হাল ছেড়ে দেন? আপনি কি মনে করেন যে, মাইন্ডসেট একটি জীনগত বৈশিষ্ট্য? তাহলে বলবো, আপনি ভুল ভাবছেন। আজকে সেই বিষয়টাই বোঝার চেষ্টা করব।
Carol Dweck মানুষের মোটিভেশন বা প্রেরণা সংক্রান্ত গবেষণার একজন পথিকৃৎ। যুক্তরাষ্ট্রের কলোম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বর্তমানে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে “ব্যর্থতা”র প্রতি তার ছাত্রছাত্রীদের আচরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, কিছু শিক্ষার্থী যেখানে অনেক বড় কোন কাজে বিফল হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আবার চেষ্টা করে, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী আবার সামান্য বাঁধার সম্মুখীন হলেই হাল ছেড়ে দেয়।
হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এমন আচরণ নিয়ে গবেষণা করে তিনি ২০০৬ সালে Mindset: The New Psychology of Success নামের এই বইটি প্রকাশ করেন। যার মধ্য তিনি কোনো সমস্যা বা ঘটনাকে দেখার দুই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি বা মাইন্ডসেট এর কথা উল্লেখ করেছেন। ১) ফিক্সড মাইন্ডসেট ২) গ্রোথ মাইন্ডসেট।
যারা মনে করে যে, অনেকের মাইন্ডসেট জীন এর উপর নির্ভর করে, জন্ম থেকেই মানুষের মাইন্ডসেট ফিক্সড করা বা সবার মাইন্ডসেট অপরিবর্তনশীল তারা ফিক্সড মাইন্ডসেট ক্যাটাগরির আওতায় পরে।
আবার যারা ভাবে, মানুষের মাইন্ডসেট যখন তখন পরিবর্তন হতে পারবে, চেষ্টার ফলে মাইন্ডসেট পরিবর্তন করা যায়, উন্নত করা যায় তারা গ্রোথ মাইন্ডসেটের অন্তর্ভুক্ত।
ফিক্সড মাইন্ডসেট এর মানুষেরা সফল হতে পারে না। কারণ তারা একবার হেরে গেলেই হাল ছেড়ে দেয়। তাদের চিন্তাভাবনা অনেকটা সীমাবদ্ধ। তাদের সাথে কেউ মিশতে গেলেও সীমাবদ্ধতা অনুভব করে। তারা মনে করে চেষ্টা করে লাভ নেই তাদের ব্রেইন পরিবর্তন হবে না।
আর যারা গ্রোথ মাইন্ডসেটের তারা কখনো হাল ছেড়ে দেয় না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের মাইন্ডসেট ও ব্রেইনকে আরও উন্নত করে।
কোনো কাজ মন প্রাণ দিয়ে করলেও যদি বিফল হই, তাহলে কি ভাববো? আমাদের সব পরিশ্রম নষ্ট হলো? কখোনই না। কোনো কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করলে তা থেকে অনেক কিছু শেখা যায় এবং অভিজ্ঞাতা লাভ করা যায়। আর সেই শিক্ষা এবং অভিজ্ঞাতার মূল্য কিন্তু সফলতার চেয়ে কম নয়।
মাত্র সাড়ে তিন-চার বছর বয়স থেকেই কিন্ত বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি মাইন্ডসেট গঠন হওয়া শুরু করে। আর এর পিছনে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আচরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। তারা যদি শিশুর কাজের সফলতার, বুদ্ধিমত্তার উপর জোর না দিয়ে শিশুর চেষ্টা, পরিশ্রমের প্রশংসা করে, তাহলে তার মধ্যে গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে উঠবে। তবে কতটুকু কাজের জন্য কি ধরণের প্রশংসা করা হচ্ছে, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
কারণ, যদি শিশুর সামান্য চেষ্টাতেই সে অনেক পরিশ্রম করেছে এ ধরণের কিছু বলা হয়, তাহলে শিশু খুশি হবার পরিবর্তে উলটো তার মনে হতে পারে যে, এরচেয়ে বেশি ভালো করা তার পক্ষে সম্ভব না কিংবা প্রশংসাটা আসলে তার প্রতি সান্ত্বনা পুরষ্কার। ঠিকমত না বুঝেই গ্রোথ মাইন্ডসেটের এমন ঢালাও ব্যবহারকে Carol Dweck বলেছেন “False Growth Mindset”।
তবে ছোটবেলায় যদি কেউ অন্যের ফিক্সড মাইন্ডসেট বা ফলস গ্রোথ মাইন্ডসেট দ্বারা প্রভাবিত হয়েও থাকে, তাতেও চিন্তার কোন কারণ নেই, পরবর্তী জীবনেও মাইন্ডসেটের পরিবর্তন করা সম্ভব। কারণ আমাদের ব্রেইন আসলে সারাজীবনই নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরি করতে পারে যাকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বা ব্রেন প্লাস্টিসিটি বলা হয়।
আর এ কানেকশন কিন্ত আমাদের চিন্তাভাবনা বা মানসিক অভিজ্ঞতার ফলেই তৈরি হয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিকল্পনা, কৌশল এসবে পরিবর্তন আনলে তা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনের মাঝেও নতুন সংযোগ তৈরি করবে, যা আমাদের কাজকর্মে প্রভাব ফেলবে।
Click here to get more blogs
Author
Sayyeda Porna
Intern, Content Writing Department
YSSE