গত পর্বে Big Bazaar Of CEO’s এ দ্বিতীয় ফ্যাক্টর হিসেবে Adaptability, সত্য নাদেলার জীবনে এর বাস্তব প্রতিফলন এবং তৃতীয় ফ্যাক্টর Obedience ও সান্তুনু নারায়ণের জীবনের চুম্বক অংশের বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম।
আজকের পর্বে ফোর্থ ফ্যাক্টর হিসেবে Communication Skill এর গুরুত্ব, ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আইআইটির অবদান, ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা, আইআইটিয়ানদের শিক্ষার বাইরের বিস্তৃতি ও ভারতীয় রাজনীতিবিদদের অবদানের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো।
তো চলুন শুরু করা যাক।
The Fourth Factor: Communication Skill
ভারতীয়দের CEO হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যেই ফ্যাক্টর কাজ করে তা হলো, তাদের যোগাযোগ দক্ষতা বা Communication Skill.
পৃথিবীতে ভারতীয়দের মত চমৎকার কমিউনিকেশন স্কিলের দেখা খুব কমই পাওয়া যাবে। জার্মান বা ফ্রেঞ্চ নাগরিকরা বেশিরভাগ সময় ইংরেজিতে খুব একটা বেশি পারদর্শী হন না। জাপানি কিংবা চীনা নাগরিকেরা তো নিজের ভাষার বাইরে কথা বলতেই ইতস্তত বোধ করেন।
অন্যদিকে দেশের বাইরে পড়াশুনা বা চাকরীর জন্য আসা শিক্ষিত ভারতীয়রা ইংরেজী বলেন native language মতো করে। তাদের শিক্ষা কারিকুলামটাতেই ইংরেজী ভাষার ওপর বাড়তি জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয়রা তো ইংরেজী ভাষাটাকেও মাতৃভাষার মতন বলেন।
English Speaking As Native Language:
চীন, জাপান বা অন্যান্য দেশের মেধার কমতি নেই, পরিশ্রমও সব অঞ্চলের মানুষ কম-বেশি করেন। কিন্তু কমিউনিকেশন স্কিলে পিছিয়ে পড়েন তারা। অন্যদিকে সিইও বেছে নেয়ার অনেকগুলো প্যারামিটারের মধ্যে কমিউনিকেশন স্কিলে বরাবরই ছক্কা হাঁকান ভারতীয়রা। তারা তাদের আইডিয়া, তাদের প্ল্যান যতোটা সহজ করে উপস্থাপন করতে পারেন অন্যদেশের নাগরিকেরা সেটা পারেন না বা করেন না।
নতুন একটা দেশে গিয়ে সেই দেশের ভাষাটা গড়গড় করে বলতে পারাটা আত্নবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ কারণে সিলিকন ভ্যালিতে ভারতীয়দের বলা হয় সব থেকে Confident Employee.
The Importance Of Educational Institution:
ভারতীয়দের এই যে প্রযুক্তি বিপ্লব তার মূলে কিন্তু সেদেশের একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাপক ভূমিকা আছে। যেই তিনজন সিইওর কথা আপনারা শুনলেন, তাদের সবাই ভারতে স্নাতক শেষ করে উচ্চতর পড়াশুনার জন্য এসেছিলেন আমেরিকায়। সাফল্য পাওয়া বেশিরভাগ ভারতীয়রা এই ফর্মুলাই ফলো করেছেন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সক্ষমতা ও শিক্ষার মান মোটামুটি ঈর্ষণীয়। এমনই একটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আইআইটি বা Indian Institute Of Technology. আর বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে কর্মরত ভারতীয়দের একটি বড় অংশই গ্রাজুয়েশন করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
The Institution: IIT
আমাদের দেশে যেমন বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট আছে তেমনি ভারতে আছে আইআইটি। অনেকগুলো শাখা আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। খড়গপুর, কানপুর, দিল্লি, বোম্বে এসব ইন্সটিটিউট এর প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভাবে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় থাকে প্রতিবছরই। দুনিয়ার সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটরা বের হয় আইআইটি থেকে; তারপর তারা ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে।
Google এর সুন্দর পিচাই, Adobe-র সান্তুনু নারায়ণ, IBM কম্পিউটারর্স এর সিইও অরবিন্দ কৃষ্ণা, Twitter এর চিফ টেকনোলজি অফিসার পরাগ আগারওয়াল, Netapp এর সিইও জর্জ কুরিয়ান, এনারা সবাই আইআইটি গ্রাজুয়েট।
The Education System Of India: Kota
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানবেন আইআইটিতে সুযোগ পাওয়াটা কতটা কঠিন। কেন এখান থেকে অরবিন্দ কৃষ্ণ বা সুন্দর পিচাইরা বেড়িয়ে আসে, সেটা বোঝার জন্য আইআইটির ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেমস এর দিকে তাকালেই যথেষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
ভারতে কোটা নামের একটা শহর আছে যেটা কিনা আইআইটি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিখ্যাত। সেই শহরজুড়ে শুধু কোচিং সেন্টার এর মেলা। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার থাকতেই ছেলেমেয়েরা কোটায় চলে যায়; ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আগেভাগেই শুরু করবে বলে। এখানে শত শত কোটি টাকার কোচিং বানিজ্য হয় প্রতিবছর। তার মধ্যে যারা ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয় শুধু তারাই সুযোগ পায় পরীক্ষায় বসার।
The Best Ones:
লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী থেকে মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সুযোগ পায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার। আইআইটিতে মেধাবীদেরই সুযোগ হয়। এখানে নেই সুপারিশ বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ। প্রশ্নও হয় খুবই এনালিটিক্যাল ফরম্যাট এ। মুখস্তবিদ্যা কোনো কাজেই আসে না। আইআইটি একটি ছাঁকনির নাম যেই ছাঁকনিতে শেষমেষ টিকে থাকে সত্যিকারের মেধাবীরাই।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর চারটি বছর আইআইটিতে এই ছাত্ররা থাকে দারুন সব শিক্ষকের সংস্পর্শে। বৈশ্বিক একটা প্রতিযোগীতার মানসিকতা ঢুকিয়ে দেয়া হয় তাদের মানসিকতায়।
IITians From The Odds:
শুধু যে প্রযুক্তি খাতেই আইআইটিয়ানরা বিপ্লব করছে তা কিন্তু নয়। আপনি দিল্লিতে বিজেপির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে (Arvind Kejriwal) দেখেন, এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক চেতন ভগত এর দিকে তাকান কিংবা জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল The Viral Fever (TVF) এর ফাউন্ডার এবং সিইও অরুনাভ কুমার (Arunav Kumar) এর খোঁজ করুন, এই মানুষগুলোর সবাই আইআইটি থেকে পড়াশোনা করেছেন।
“কর্মক্ষেত্র যাই হোক না কেন সেরা হতে হবে, শ্রেষ্ঠ হতে হবে”; আই আইটি তার ছাত্রদের বুকের ভেতর এই মন্ত্র গেঁথে দেয় নিরবে। তাই আজকের সুন্দর পিচাই এর গুগলের সিইও হওয়ার পেছনে বেশ বড় একটা অবদান Indian Institute Of Technology-র ও আছে।
Indian Politicians: Chandrababu Naidu
ভারতীয় রাজনীতিবিদদেরও খানিকটা অবদান আছে ভারতীয় তরুণদের এই স্বপ যাত্রায়। অন্ধ্রপ্রদেশ এর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু (Chandrababu Naidu)। এই ভদ্রলোক চেয়েছিলেন তার প্রদেশে একটা আইটি হাব গড়ে তুলতে। প্রযুক্তিতে ভারতের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রদেশ হবে অন্ধ্রপ্রদেশ। এটাই ছিল তার স্বপ্ন। সেই লক্ষ্যে তিনি হায়দ্রাবাদ এ IT City গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। আজ সেই বেঙ্গালোর ভারতের আইটি ইন্ডাস্ট্রির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আগামী পর্বে ভারতকে একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে চিন্তা করার কারণ এবং বাংলাদেশীদের এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো। ততোদিন সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আজ এ পর্যন্তই।
লেখকের অন্যান্য (Metaverse, Paypal Mafia, Billion Dollar Company Shopify, Media Empire Disney, Nike, Story Brand By Donald Miller) ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
আমাদের আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
Writer
Mubtasim Itmam Bijoy
Content Writing Intern
YSSE