ব্লগ লিখে সহজ উপায়ে আপনি কিভাবে আয় করতে পারেন?

ইন্টারনেট এর আগে এক সময় মানুষের জন্য  নিজের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ছিল বেশ কঠিন। বড় কোনো পত্রিকায় লেখা ছাপানোর সুযোগ পেতেন খুব কমসংখ্যক মানুষ যার ফলে সকলের ভরশা হতো মাসিক পত্রিকা কিংবা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনগুলোতে। যদিও লেখা ছাপানো যেতো, সেটি যাই–ই হোক না কেনো তা থেকে আয় করা যেনো ভাগ্যবানদের হতো।

কিন্তু ইন্টারনেট এর ব্যবহার সকল জায়গায় ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে এর হাত ধরেই এসে পড়ে ব্লগিং যুগ। নিজের কথা, মতামত, গল্প, কবিতা কিংবা প্রবন্ধ সবকিছুই মানুষের কাছে পৌছে দিতে সহজ উপায় হচ্ছে ব্লগ।

আজকের এই লিখাটিতে আমরা আলোচনা করবো ব্লগ কিভাবে লিখতে হয় এবং ব্লগ লিখে অর্থ উপার্জন করা যেভাবে সম্ভব।  

ব্লগ বলতে কি বুঝায়?

এক কথায় যদি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই তবে বলতে হবে, ব্লগ হলো একটি প্রতিদিনের ন্যায় ডায়েরী লেখা আর তা একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। সেটা হতে পারে যেকোনো ওয়েবসাইটে। তবে সকল ওয়েবসাইটে যে লিখতে পারবেন, তা নয় কিন্তু। কারণ বিভিন্ন প্রকারের ওয়েবসাইট রয়েছে। কিন্তু আপনি এমন ওয়েবসাইটে লিখতে পারেন যারা সেল্ফ পাবলিশ করবে আপনার লেখা, মিডিয়া কিংবা ওয়েব রিসোর্স যার কোনো প্রকার স্বত্ব অধিকার কোনো মালিকানার অধীনে নেই। কিংবা আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইটেই ব্লগ পাবলিশ করতে পারেন।

বর্তমান এ আধুনিক যুগটি হলো প্রযুক্তির যুগ। ব্লগ লিখে অনেক উপায়ে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

আপনি আপনার নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে ব্লগ আকারে নির্দিষ্ট কোনো টপিকের ওপর লিখতে পারবেন এজন্য আপনার যা লাগবে তা হলো লেখার জন্য ভালোবাসা, লিখতে আগ্রহী এবং সৃজনশীলতা।

বর্তমান সময়ে প্রায় বলা হয়ে থাকে শুধু ব্লগিং করেই অনেক উদ্যোগক্তারা ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম পেশা হিসেবে নিয়ে বেছে নিয়েছেন এবং জীবন নিবার্হ করছেন।

ব্লগ থেকে আয় করতে চাইলে আপনাকে একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে আর এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ডোমেইন (আপনার ব্লগের নাম) ও হোস্টিং রেজিষ্ট্রেশন করা।

আপনি যেকোনো ভাষায় দক্ষ হলে সে ভাষাতেই একটি ব্লগ খুলে ফেলতে পারেন এবং আপনার নিজস্ব অডিয়েন্সের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারেন। 

এখন ভাবছেন কিভাবে ব্লগ খুলবেন এবং সেটা থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?

আপনি ফ্রি ডোমেইন ব্যবহার করেও কিন্তু ব্লগ খুলতে পারেন এবং সেখানে আপনার পছন্দ অনুযায়ী টপিকের উপর লিখতে পারেন। এজন্য একটি বিষয় আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি কি লিখতে চাচ্ছেন কাদের জন্য লিখতে চাচ্ছেন এবং কেনো লিখতে চাচ্ছেন? 

কারণ ব্লগ শুরু করার পর মাঝপথে এসে যদি আপনি লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার ব্লগটি পড়ে থাকবে শুধু শুধু।

তাই, নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কোন বিষয় ভালো বুঝতে পারেন এবং লিখতে পারবেন? ধীরে ধীরে সে বিষয়ে লেখা শুরু করলেও একটি সময় পরে অন্যান্য বিষয়ও যোগ করতে পারবেন।

এবার চলুন ব্লগ থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়–

সর্বপ্রথম আপনাকে একটি বাজেট ফিক্সড করতে হবে।আর এতে আপনার ডোমেইন খরচ, হোস্টিং ফি, লগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট মেইনটেইন এবং ইন্টারনেট চার্জ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এরপর আপনি কতটুকু অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করতে পারবেন ব্লগ ব্র্যান্ডিং এবং ব্লগটির বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যয় করতে তা হিসেব করুন। কারণ এরপরই এটি আপনাকে ROI (return of investment) হিসেব করতে সাহায্য করবে।

ব্লগ তৈরির জন্য খুব বেশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন নেই। আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করতে না পারলে চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট করে ফেলতে পারেন। এরপর নিজেই ব্লগ লেখা শুরু করে দিন আপনার পছন্দ টপিকটির ওপর।

২০ থেকে ৩০টি পোস্ট লিখে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে আপনার ভিজিটরদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অর্থ উপর্জন করতে পারেন। এক্ষেত্রে কত টাকা পাবেন?

প্রতি ক্লিকে ০.০১ সেন্ট থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে আর এটি নির্ভর করে কি ধরণের টপিক নিয়ে লেখা হবে এবং সেটি কেন্দ্র করেই বিজ্ঞাপণ অনুযায়ী আয় করা সম্ভব।

জনপ্রিয় কিছু এডস প্ল্যাটফর্ম হলোঃ গুগুল এডসেন্স, ইজোইক, এডস্ট্রা।

এছাড়াও পেইড মার্কেটিং না করে আপনি আপনার ব্লগটির সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করে সকল সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে প্রথমে পেইজে আনতে পারেন আপনার পোস্ট। আর তাতে আপনি ভিজিটর বেশি পাওয়ার ফলে এড রেভিনিউ বেড়ে যাবে।

সর্বোপুরি ব্লগিং করে অর্থ উর্পাজনের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো সার্চইঞ্জিন অপ্টিমাইজড করে ভিজিটরের মাধ্যমে মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে  উপার্জন করা। এছাড়াও ব্লগে পণ্য বিক্রি করে, এফিলিয়েট লিঙ্ক সংযুক্ত করে আয় করতে পারেন আপনার ব্লগ থেকে। 

ব্লগ থেকে আয় করা যতটা সহজ মনে হয় আবার তেমন কোনো রকেট সায়েন্স-ও নয়। ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে খুবই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যেমন, মার্জিত ভাষায় লেখা এবং কোনো কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য না করা। এছাড়াও, এমন কোনো কিছু লেখা উচিত নয় যা পাঠকদের বিভ্রান্ত করে এবং ভুল তথ্য দেয়। যত বেশি সংখ্যক নিয়মিত পাঠক পাবেন তত বেশি আয় করা সম্ভব।

Md. Shourov Hasan

Intern, Content Writing Department,

YSSE.