মহাকাশে এক নতুন ধরনের প্রতিযোগিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাই না?!
টেক জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন।
এবার বেজোস উন্মোচন করলেন তাঁর নতুন পরিকল্পনা। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে চান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। বাণিজ্যিক এই স্পেস স্টেশনটির নাম হচ্ছে অরবিটাল রিফ যা চলতি দশকের শেষে স্থাপন করা হবে এবং এই মহাকাশ স্টেশন তৈরিতে ব্লু অরিজিনের সাথে অংশীদার হবে সিয়েরা স্পেস ও বোয়িং।
কি কি থাকছে বেজোসের অরবিটাল রিফ নামক এই মহাকাশ স্টেশনে?
ব্লু অরিজিন একটি প্রেস নোটে বলেছে যে, অরবিটাল রিফ ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়বে যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সামান্য ওপরে এবং ৮৩০ ঘনমিটার আয়তনের এই মহাকাশ স্টেশন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের চেয়ে খানিকটা ছোট যা ১০ জন মানুষের জন্য বাসযোগ্য হবে। এটি মহাকাশে একটি মিশ্র ব্যবহারের ”ব্যবসায়িক পার্ক” হিসেবে স্থাপিত হবে। অর্থাৎ, যে কেউ এর আউটপোস্টে অ্যাক্সেস করতে এবং প্রতিদিন পৃথিবীর ৩২ টি প্রাণবন্ত সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক এই মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১১ সালে এবং এটি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মহাকাশ সহযোগিতায় চলছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এটি নিরাপদ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেই নাসা বাণিজ্যিকভাবে এই খাতকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছে।
ব্লু অরিজিনের তথ্যমতে, ৩২০০০ বর্গফুট মহাকাশ স্টেশনটিতে গ্রাহকদের “মাইক্রোগ্রাভিটিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ” এবং সাথে “অত্যাধুনিক গবেষণা পরিচালনা” করার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি একটি “স্পেস হোটেল”ও অন্তর্ভুক্ত করবে বলেও বেজোস জানিয়েছেন।
এই বড় বড় লক্ষ্যগুলিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য, ব্লু অরিজিন বহুমুখী এই স্টেশনের উন্নয়নের লক্ষ্যে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং রেডওয়্যার স্পেস সহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করছে।
জেনেসিস ইঞ্জিনিয়ারিং নামে আরেকটি ফার্ম, একটি “সিঙ্গেল পারসন স্পেসক্রাফট” তৈরি করছে যা স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীদের একটি ছোট পরিসরে “স্পেসওয়াক” করার অনুমতি দেবে এবং এক্ষেত্রে তাদের স্পেসস্যুট পরার প্রয়োজন হবে না।
সম্প্রতি ব্লু অরিজিন, রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাক্টিকের সাথে তার মহাকাশ পর্যটনের সার্ভিসগুলো শুরু করেছে৷ বেজোসের ফার্মে বেজোস নিজে এবং পাশাপাশি স্টার ট্রেকের উইলিয়াম শ্যাটনার দুটি পৃথক ভ্রমণে মহাকাশে যান।
তবে ব্লু অরিজিন এখনও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে প্রবর্তন করতে পারেনি যে কক্ষপথে এর আউটপোস্টটি স্থাপন করা হবে।
ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেট এবং ক্যাপসুল কারমান লাইনের উপর যাত্রীদের লঞ্চ করবে যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৬২ মাইল (১০০ কিমি) উপরে। যদিও এটি কক্ষপথে পৌঁছায় না। সুতরাং বলা যায় স্পেস ফার্মের “এই দশকের দ্বিতীয়ার্ধে অপারেটিং” শুরুর আগে অনেক কাজ এখনো বাকি আছে।
এই প্রকল্পের খরচ কত হবে?
অরবিটাল রিফ প্রকল্পে কত খরচ হবে তা এখনো প্রকাশ করেনি ব্লু অরিজিন। তবে প্রকল্পের বড় অংশেরই খরচ দেবেন বেজোস এবং ব্লু ওরিজিনের পেছনে বছরে ১০০ কোটি ডলার খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি, এমনটাই জানা যায় BBC এর সংবাদমাধ্যম থেকে।
এইদিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্র আইএসএস মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পথে থাকায় ২০ বছর বয়সী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে অবসরে পাঠাবেন নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি ২০৩০ সাল পর্যন্ত আইএসএসের জন্য তহবিল দিয়ে যাবে বলেও নিশ্চিত করেছে। আইএসএসের বিভিন্ন অংশের জরুরি মেরামত প্রয়োজন।
অন্যদিকে রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রের কারণে বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই ২০২৫ সালের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছেড়ে দেবেন তারা।
তবে চলতি বছরের শুরুতেই আইএসএস প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয় নাসা। তাই নাসা আইকনিক অরবিটাল স্টেশন প্রতিস্থাপন করার জন্য প্রাইভেট স্পেস কোম্পানিগুলিকে $৪০০ মিলিয়ন পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। উচ্চাভিলাষী এই প্রকল্পের অংশ হতে তুমুল প্রতিযোগিতায় নেমেছে বেজোসের ব্লু ওরিজিন ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে নাসার সাথে খুব একটা ভালো সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়নি বেজোসের। কারণ, গত মাসে নাসার সাথে একটি চুক্তিতে ব্যর্থ হয় ব্লু অরিজিন এবং ২৯০ কোটি ডলারের সেই চু্ক্তি হয় বাণিজ্যিক মহাকাশ প্রতিযোগিতায় ব্লু অরিজিনের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইলন মাস্কের স্পেস এক্সের সাথে।
তাছাড়াও ইতিমধ্যেই ব্লু অরিজিন শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। সম্প্রতি লকহিড মার্টিন এবং ন্যানোরাক্স স্টারল্যাব নামে একটি বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে এবং মাত্র গত সপ্তাহে তারা ২০২৭ সালের মধ্যে স্টারল্যাব নামে “প্রথমবারের মতো মুক্ত-উড়ন্ত বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন” চালু করতে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
আবার এই দুটি কোম্পানি পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি অরবিটাল স্টেশন তৈরিতে নাসার সাথে কাজ করছে।
বলা যায় স্পেস ট্যুরিজম রেস ইতিমধ্যেই বেশ প্রবলভাবেই শুরু হয়েছে এবং মনে হচ্ছে আমরা হয়তো স্পেস স্টেশন রেসের শুরুটা দেখতে পাচ্ছি।
ব্লু অরিজিনের অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রেন্ট শেরউড বলেছেন যে, নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিটাল স্পেস ফ্লাইট এবং মহাকাশে বাসস্থান তৈরিতে কাজ করেছে যা আমাদেরকে এই দশকে বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ ভ্রমণের পথ তৈরি করে দিয়েছে”।
শেরউড আরও বলেন, “আমরা এর অ্যাক্সেস প্রসারিত করব, খরচ কমিয়ে আনব এবং মহাকাশ ফ্লাইট স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করব।’’
সর্বোপরি, একটি প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক ইকোসিস্টেম পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে গড়ে উঠবে এবং নতুন আবিষ্কার, নতুন পণ্য, নতুন বিনোদন এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করবে, এমনটাই বলেছেন শেরউড।
আমাদের আরো ব্লগ পড়ুন এখানে।
Writer
Janisha Afrose
Intern, Content writing Department
YSSE.