ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

একজন ডিজাইনার শুধু একজন শিল্পীই নন বরং একজন জাদুকরও বটে! তাকে শিল্পের জাদুকরও বলা যায়। চিত্রশিল্পীরা যেমন রঙতুলির আঁচড়ে বিচিত্র ও অপূর্ব সব শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ঠিক একইভাবে ডিজাইনাররাও কিছু সফটওয়্যার ও তাঁর মননশীলতা কাজে লাগিয়ে বৈচিত্র্যময় সব ডিজাইন করে থাকেন।

বিভিন্ন লাইন, শেইপ, ইমেজ, টাইপোগ্রাফি, ফন্ট প্রভৃতি মিলেমিশে একটি ডিজাইন পরিপূর্ণতা পায়। তবে এক্ষেত্রে একজন ডিজাইনারকে অবশ্যই ডিজাইনের কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়। চাইলেই যেমন কেউ একজন চিত্রশিল্পী হতে পারে না, তেমনি কেউ শুধু ইচ্ছা করলেই ডিজাইনার হতে পারবে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডিজাইনের মূল বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি সারাবিশ্বের নিত্যনৈমিত্তিক ডিজাইন ট্রেন্ড, ক্লায়েন্টদের চাহিদা, টার্গেট অডিয়েন্সের রুচিবোধ, কোম্পানি বা পণ্যের মূল তথ্য প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।

ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

কিংবদন্তি পণ্য ডিজাইনার ডিয়েটার র‌্যামস এর ডিজাইনের নীতিগুলির ভিত্তিতে ১৯৭০ দশকের ব্রাউন থেকে শুরু করে অ্যাপল কোম্পানি ডিজাইনকেও প্রভাবিত করেছে।

“খুব বড় ছবির থেকে ছোট ছবির বিস্তারিত তথ্যকে আমি বেশি প্রাধান্য দেই। কারণ একটা জিনিসের মান নির্ভর করে জিনিসটার বিস্তারিত তথ্যের উপরে অর্থাৎ কি বুঝাতে চাওয়া হচ্ছে তার উপর” – ডিয়েটার র‌্যামস

আজ আমি ডিজাইনের দশটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১.পণ্যের প্রয়োজনীয়তাঃ-

একটি পণ্য কেনা হয় প্রথমত তার প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে। এছাড়া পণ্যের সৌন্দর্য, কেনার পর মানসিক তৃপ্তি এসবকিছু নির্ভর করে পণ্যের ডিজাইনের উপর। ডিজাইনারকে পণ্যের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে হবে।

ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

২.পয়েন্ট, লাইন ও শেইপঃ-

যেকোনো ডিজাইনের মূল ভিত্তি এই পয়েন্ট, লাইন ও শেইপের উপর নির্ভর করে। আর এগুলোর মাধ্যমেই আপনি আপনার মনের মাধুরী মিশিয়ে ডিজাইন করতে সক্ষম হন। দুইটি পয়েন্ট একত্রিত করলে একটি লাইন তৈরি হয়। আবার এই দুটির সাথে আরেকটি পয়েন্ট যুক্ত করলে একটি ত্রিভুজাকার শেইপ তৈরি হবে। ঠিক একইভাবে অনেকগুলো লাইনের সমন্বয়ে একটি ডিজাইন সম্পূর্ণতা পায়। 2D আর 3D আকারের মডেলগুলোও ঠিক একইভাবে একটি প্রাথমিক পর্যায় থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করে।

৩.নান্দনিকতাঃ-

একটা পণ্যের সৌন্দর্যের উপর এর গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে। রুচিশীল ও মানসম্মত জিনিস সবসময়ই প্রাধান্য পায়। গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখে ডিজাইনকে হতে হবে নান্দনিক।

ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

৪.বোধগম্যতাঃ-

ডিজাইন হতে হবে সহজ, সাবলীল ও বোধগম্য। প্রতিটি ডিজাইনের একটি নিজস্ব সত্ত্বা থাকতে হবে যাতে করে ডিজাইন নিজেই তার বর্ণনা দিয়ে নিজস্বতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

৫.দীর্ঘস্থায়ীঃ–

ভালো ডিজাইন সবসময়ই দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমান ফ্যাশনের কথা চিন্তা করে ডিজাইন করা হয়না। কারণ আজকে যেটা বর্তমান কালকে সেটা অতীত।

৬.টেক্সচার ও প্যাটার্নঃ-

বিভিন্ন টেক্সচার ও প্যাটার্ন যেকোনো ডিজাইনের একটি অত্যাবশকীয় অংশের মতো। হয়তো এগুলো কোনো ডিজাইনের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে থাকবে না, কিন্তু বেশ ভাল একটা ভূমিকা রাখবে। অনেকে ডিজাইনে টেক্সচারকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও এটা আপনার ডিজাইনে যে ভিন্নমাত্রা দিবে তা সত্যিই আকর্ষণীয়।

ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

৭.বিস্তারিতঃ–

একটা পণ্যের খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে বিস্তর উপস্থাপনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মান ও রুচির প্রকাশ ঘটে। তাই ডিজাইনকে সকল খুঁটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত তথ্যের সূচনা ঘটাতে সক্ষম থাকতে হবে।

৮.ইনোভেটিভঃ-

ভালো ডিজাইন সর্বদা সম্ভাবনাময়ী এবং গতিশীল। ভালো কিছুর গতি কখনো থেমে থাকেনা। প্রযুক্তিগত বিকাশ সবসময় উদ্ভাবনী ডিজাইনের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে। সম্ভাবনাময়ী ভালো ডিজাইন একা কখনোই প্রযুক্তিগত বিকাশ ছাড়া তার যাত্রা শুরু করতে পারেনা। কিন্তু ভাল ডিজাইন কখনোই ট্রেন্ড ফলো করে না, নতুন একটি ট্রেন্ডের জন্ম দেয়।

৯.পরিবেশ বান্ধবঃ-

ডিজাইনকে পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে হবে। অর্থাৎ কোনো প্রকার ডিজাইন যাতে পরিবেশের ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ভালো ডিজাইনের ১০ টি মূলনীতি!

১০.ভিজুয়াল কনসেপ্টঃ-

প্রত্যেকটা ডিজাইনের ভেতরের খবর বলে দেয় এই ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট। এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত যাতে ডিজাইনে থাকা প্রত্যেকটা জিনিস একে অপরের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত হতে পারে। এভাবে আপনি খুব সহজেই আপনার ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী সফলতা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়া একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের মনে জায়গা করে থাকে।

“একটা ভালো ডিজাইন কখনোই ট্রেন্ড ফলো করেনা, নতুন ট্রেন্ডের জন্ম দেয়”।

আর এই নীতিগুলোর সঠিক ব্যবহার একটি ডিজাইনকে প্রফেশনাল রুপ দিতে সাহায্য করে। প্রত্যেক ডিজাইনারকে অবশ্যই এই নীতিগুলো মেনে চলা উচিত।

আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Writer 

Akhi Akter  

Intern, Content Writing Department

YSSE