ভূমিকম্প প্রবণতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বরাবরই একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আমাদের দেশের স্থাপত্য অবকাঠামো বেশ দূর্বল যেকোনো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প মোকাবেলা করার জন্যও।বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে আসলে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূঅভ্যন্তরের দুটি ভূচ্যুতির প্রভাবে আন্দোলিত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মায়ানমারের টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। কোনো স্থানের ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইন এবং টেকনিক স্ট্রেস ফিল্ড গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত, বড় ধরনের ভূকম্পন হয়ে থাকে প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে। যদিও বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে নয়, তাও ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান বাংলাদেশকে ভূমিকম্প মণ্ডলের আশপাশেই ফেলেছে।
ভূমিকম্প সংঘটনে ভূগাঠনিক–ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার দুর্বোধ্যতার কারণে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা প্রদানে কার্যকর কোনো পন্থা এখনো বের হয়নি। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে। তাছাড়া নিকট অতীতের ভূমিকম্পগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আতঙ্কে ভবনগুলো থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে অনেকে হতাহত হয়েছেন, হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্বন্ধে সচেতনতা এমন হতাহতের পরিমাণ কমাতে পারে। কারণ, ভূমিকম্পের পর্যায়ভিত্তিক, অর্থাৎ ভূমিকম্প–পূর্বকালীন ও পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানসম্মত ও ব্যাপক স্বীকৃত করণীয় রয়েছে। এ ছাড়া ভূমিকম্প–পূর্ব স্বাভাবিক সময়ে ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণকালে নির্মাণ বিধিমালার কঠোর অনুসরণ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে প্রধানতম করণীয়।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, দেশের উত্তরের ডাউকি চ্যুতি ও প্লেটবাউন্ডারি–সংশ্লিষ্ট এলাকা ভবিষ্যতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উৎস হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে মাঝেমধ্যে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয় সেগুলোর উৎস, বৈশিষ্ট্য ও ক্ষতির বিষয়ে জানা প্রয়োজন।ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য ও সম্ভাবনা এবং পলিমাটি–শিলায় এসবের সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যার ফলাফল ভবন নির্মাণ নীতিমালা বা বিল্ডিং কোড পরিমার্জনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথা ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমে সহায়ক। আর এ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত দ্রুত।
আমরা যদি কখনো পুরান ঢাকা দিয়ে হেঁটে যাই, তবেই বুঝতে পারবো আমাদের দেশের ভবন নির্মাণ নীতিমালার কতটা সেখানে প্রয়োগ এখানে রয়েছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো সাধারনত ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় থাকে। এখন পুরানো ভবন সব ধ্বংস করে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নতুন ভবন বানানো অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ একটা ব্যাপার। তাই এখন যেসব ভবন বানানো হচ্ছে সেখানে যাতে ঠিকভাবে নীতিমালার প্রয়োগ হয় সেটা নিশ্চিত করা প্রধান কাজ ।
ভূতাত্ত্বিক গবেষণা বলে, কোনো স্থানে ভূমিকম্প সুদূর অতীতকাল থেকে ফিরে ফিরে এসেছে। কারণ, ওই এলাকায় ক্রমাগত শক্তি সঞ্চিত হয়ে পরবর্তীকালে বিমুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি হয়। জ্ঞানবিজ্ঞানে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই প্রস্তুতির জন্য দেশে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ ও পরীক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধিতে বহুবিষয়ক গবেষণায় জোর দেওয়া প্রয়োজন।
কাজী রিয়াজুল হাসান
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE