মাথা ও ঘাড় বরাবর ব্যথাই মাথা ব্যাথা নামে পরিচিত। ব্রেইন ও হাড়ের আবরণ, তার চারপাশের রক্তনালী, নার্ভ, তাদের আবরণ, মাথার চামড়ার নিচের মাংসপেশি,চোখ, সাইনস, কানের ও ঘাড়ের মাংসপেশির ইত্যাদির প্রদাহ এবং টানই মাথা ব্যথার প্রধান কারণ।
* ব্রেন টিউমার বা এই ধরনের গুরুতর রোগের জন্য মাথা ব্যথার সম্পর্ক কী?
সাধারণ মাথা ব্যথা রোগের সঙ্গে ব্রেন টিউমার মাথা ব্যথা রোগের অনেক পার্থক্য। যে মাথা ব্যথা রোগের সঙ্গে বমি হচ্ছে, চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা হচ্ছে, খিঁচুনি হচ্ছে, স্নায়ু বৈকল্য থাকছে (যেখানে হাত বা এক পাশ অবশ হয়ে গেলে) তা ব্রেন টিউমার এর মাথা ব্যথার লক্ষণ।
মাথাব্যথার ধরন দেখে নির্ণয় করা সম্ভব কেন এই সমস্যা হচ্ছে। খুব পরিচিত দুটি কারন হচ্ছে:
১.চিন্তার জন্য মাথা ব্যথা
২. মাইগ্রেন এর জন্য মাথা ব্যাথা
এর মধ্যে ৭০ শতাংশই চিন্তার জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকে। ১১ শতাংশের জন্য মাইগ্রেন দায়ী। ধূমপান, মাদকাসক্তি,অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, অতিরিক্ত শারীরিক, মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথাব্যথার কারণ।
* চিন্তার জন্য মাথা ব্যথার লক্ষণ:
আমরা যে জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত সেখানে চিন্তার জন্য মাথাব্যথা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। যেখানে রোগীদের সর্বাধিক লক্ষণ দেখা যায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ বোধ করে কিন্তু যখন দৈনন্দিন কাজে লেগে যাচ্ছে তখন চিনচিন করে মাথা ব্যাথা শুরু হয়। সমস্ত মাথাজুড়ে ব্যথা হয়। এটা মারাত্মক না হলেও খুবই অস্বস্তিকর। যার প্রভাব মনোদৈহিক সমস্যা তৈরি হয়। যেখানে চিকিৎসার চেয়ে কাউন্সিলিং বেশি প্রয়োজন। যেন জীবনযাত্রাকে সহজতর করা যায়। যদিও জীবনযাত্রাকে সহজ করা কঠিন, তবুও চেষ্টা করতে হবে।
*মাইগ্রেন এর জন্য মাথা ব্যথার লক্ষণ:
নারীরাই মাইগ্রেনে বেশি ভোগে ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যারা চাপ নিতে পছন্দ করে, খুঁতখুঁতে স্বভাবের তাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। এটি বংশগতভাবে হতে পারে। এ সমস্যায় সাধারণত পুরো মাথা ব্যাথা না করে মাথার একটি অংশ ব্যথা হয়। মাথা দপদপ করে এর সঙ্গে ফটোফোবিয়া থাকে । আলো এবং শব্দে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। মাথার দুই পাশে রক্তনালী এবং রগ টনটন করছে বলে মনে হতে পারে।
মাইগ্রেনের রোগীর ক্ষেত্রেও ঔষধের চেয়ে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করা জুরুরি। যেমন, রাত না জাগা, খালি পেটে বেশিক্ষণ না থাকা, চিৎকার হুলস্থুল এমন জায়গায় না যাওয়া।
নারী রোগীদের ওরাল বা জন্মনিয়ন্ত্রক ঔষধ সেবন না করা। পনির, আইসক্রিম, চকলেট ইত্যাদি খাবার বেশি না খেলে এবং মানসিক চাপ কম নিলে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা যায়।
এছাড়াও আরও কয়েক ধরনের মাথাব্যথা আছে ।
১.ক্লাস্টার হেডেক:
চোখের পিছনে যদি আপনি অনুভব করেন যে চোখের পেছন থেকে কোন কিছু খোঁচা দিচ্ছে তাহলে তা ক্লাস্টার হেডেক। ক্লাস্টার হেডেক এ চোখ লাল হয় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখের দৃষ্টিশক্তিতেও সামান্য ব্যাঘাত ঘটে। দিনে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ব্যাথা হয়ে থাকে।
২.সাইনাস:
মুখমন্ডলে নাকের দু-পাশে হাড়ে ও কপালের হাড়ের ভিতর ছোট কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। এগুলোকে সাইনাস বলে। এতে বাতাস থাকে যা ব্রেইনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
হাড়ের ভিতরে এসব সাইনাসের আবরনে প্রদাহ হলে বাতাস এবং সর্দি জমে থাকে। এর ফলে সাইনাসগুলো বরাবর তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। এ ব্যথার সঙ্গে হাঁচি-কাশি থাকে।
৩. এয়ারপ্লেন হেডেক:
আকাশপথে ভ্রমণের সময় কপাল বা মাথার একপাশে কোন কিছু বৃদ্ধ হওয়া বা খোঁচা মারা প্রকৃতির ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। যাকে এয়ারপ্লেন হেডেক বলে। গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রতি ১২ জনে একজন লোক এই হেডেক এ ভুগেন । এ ব্যথার ঝুঁকি কমাতে হলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪. ক্রনিক ডেইলি হেডেক:
মাসের প্রতিদিনই চিন চিন করে মাথা ব্যাথা হওয়াকে ক্রনিক ডেইলি হেডেক বলে।
৫. হরমোনাল হেডেক:
মেয়েদের শরীরে হরমোনের মানের তারতম্যের জন্য প্রায়ই মাথাব্যথা হয়। একে হরমোনাল হেডেক বলে। সাধারণত মাসিকের সময় বা আগে পড়ে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
৬.সেক্সুয়াল হেডেক:
স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময়,কিংবা আগে পরে মাথাব্যথা হতে পারে। একে সেক্সুয়াল হেডেক বলে। সাধারণত এক্সারশনে ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের ব্যথা হয় । এ ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না কিছুক্ষণের মধ্যেই সেরে যায়।
#আসুন এখন আমরা জানি কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে মাথা ব্যাথা মুক্ত হবেন।
১. আদা:
আদার অ্যান্টিইনফ্লামেটারি উপাদান মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদার উপকারি উপাদানসমূহ রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখায় মাথাব্যথায় দ্রুত আরাম দেয়। মাথাব্যথা শুরুর সাথে সাথে আদা চা বা টাটকা এক টুকরো আদা খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।
২.পানি:
পানি পান করলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়। আমাদের শরীর যখন ধীরে ধীরে আদ্র হতে থাকে তখন মাথা ব্যাথা কমে যায়।
৩.লেবু:
গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে বা লেবু পেস্ট করে কপালে দিলে মাথা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।
৪.লবঙ্গ:
কিছু লবঙ্গ তাওয়ার মধ্যে গরম করে রুমালের মধ্যে নিয়ে এর ঘ্রাণ নিলে মাথা ব্যথা চলে যাবে।
৫.মিষ্টি কুমড়ার বিচি এবং কাঠবাদাম:
মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট রয়েছে যা মাথা ব্যাথা উপশমে কাজ করে। কাঠবাদামে রয়েছে স্যালিসিন যা দ্রুত মাথা ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে।
৬.লবণযুক্ত আপেল:
ব্যথা যদি তীব্র হয় তাহলে এই ঘরোয়া উপায়টি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক টুকরো আপেলে লবণ মিশিয়ে খেলে দ্রুত মাথা ব্যথা কমে।
৭.হাসি খুশি মন:
মনকে ইতিবাচক এবং ভালো বিষয়ের দিকে নিয়ে যান দেখবেন মাথা ব্যাথা অনেক খানি দূর হয়ে যাবে।
তানিয়া আক্তার
ইনর্টান/ওয়াইএসএসই