একটি শিশুর বেড়ে ওঠা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। চার হাত-পা দিয়ে হামাগুড়ি থেকে শুরু করে দুই পায়ে হাঁটা, কথা বলা, আচার-ব্যবহার সব কিছু পরিবার থেকেই শেখা হয়। একজন মানুষ কেমন ব্যবহার করবে, কিভাবে কথা বলবে সবকিছুই সে তার পরিবার থেকে শেখে।
এবার আসি আসল কথায়, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন হবে এর অর্ধাংশেরও বেশি নির্ভর করে পরিবারের উপর। ব্যাপার টা যদি বুঝিয়ে বলি, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কারণ তাঁর উন্নত মস্তিষ্ক। আর আমাদের আশেপাশের ঘটে যাওয়া সবকিছুই আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।
মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ এবং অশান্তি থাকে সে সকল পরিবারের সন্তান-রা প্রায় সময়-ই ডিপ্রেশন এবং হতাশায় ভোগে। যে সকল পরিবারে বাবা-মা এর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকে সে সকল পরিবারের সন্তান রা একাকীত্বে ভোগে; ফলে ডিপ্রেশন এবং হতাশায় জড়িয়ে পরে।
মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ পরিবারের কলহ-
আশেপাশে যদি লক্ষ করি, আজ আমাদের তরুণ সমাজ ভয়াবহ ভাবে মাদকে আসক্ত। এর পিছনে কারণ কি জানেন? এর পিছনের প্রধান কারণ তীব্র হতাশা এবং একাকীত্ব। মানুষ যখন পরিবারে একা হয়ে যায় ঠিক তখন-ই সে বাইরের পরিবেশে সঙ্গ খোজে। জড়িয়ে পরে অসৎ সঙ্গে। মাদকাসক্ত-দের এক বিরাট অংশ আসে ব্রোকেন ফ্যামিলি থেকে। পারিবারিক কলহ তাদের মাদকের মত ভয়াবহ জালে আবদ্ধ করেছে।
আত্নহত্যার পিছনে পরিবারের প্রভাব কতটুকু?
একজন মানুষ ঠিক কখন আত্নহত্যা করেন জানেন? যখন তার কাছে তার হতাশা এবং ডিপ্রেশন অসহনীয় হয়ে ওঠে, চরম একাকীত্ব ঠেলে দেয় তাকে আত্নহত্যার দিকে। পরিবার থাকা সত্বেও কেন এই একাকীত্ব?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, “ভালো রেজাল্ট না করায়, জিপিএ ৫ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা”।
সমাজে সকল বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালো রেজাল্ট করুক, এই চাওয়া একসময় অতিরিক্ত প্রেশারে পরিণত হয়। অতঃপর সন্তান যদি তথাকথিত ভালো রেজাল্ট করতে ব্যর্থ হয়, তখন শুরু হয় নানান শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার। এবং তুলনার দাড়িপাল্লা। এসব কিছু যখন অসহনীয় হয়ে যায়, তখনই আত্নহত্যার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার্থী-রা।
এবার আরো ডিটেইলস এ দেখা যাক। করোনাকালীন গত এক বছরে সারা দেশে আত্নহত্যাকারীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। এছাড়াও তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্নহত্যা বেড়েছে ৪৪.৩৬%।
অর্থাৎ করোনাকালীন গৃহবন্দীর সময়টা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে।
গেল এই এক বছরে গৃহবন্দী থাকায় পারিবারিক কলহ বেড়েছে, দাম্পত্যকলহ বেড়েছে, অশান্তি বেড়েছে যার কারণে মানুষ চরম হতাশা এবং ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েছে,বেছে নিয়েছে আত্নহত্যার মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত।
একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, ডিপ্রেশন এবং হতাশা থেকে বের করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য তার পরিবার-ই করে থাকে। আমাদের সমাজে আজও মানসিক স্বাস্থ্য কে প্রাধান্য দেয়া হয়না, সচেতনতা গড়া হয়না, কেউ যদি তার মানসিক সমস্যা আলোচনা করতে চায় তাকে নিয়েও হাসা-হাসি এবং বিদ্রূপ করা হয়। এর পরিণাম যে ভয়াবহ তা আমরা সবাই বুঝি।
ভালো থাকতে শুধু শারীরিক ভাবে সুস্থতাকেই বুঝায় না, মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হয়। আর পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে এই সচেতনতা। পরিবারের সবাইকে একে অপরের আপদে-বিপদে পাশে থাকতে হবে, একে অপরের অবস্থা বুঝতে হবে, কথা শুনতে হবে। বাবা-মার তার সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে একই সাথে সন্তান কেও তার বাবা-মার অবস্থা বুঝতে হবে। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর পরিবারই পারে মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ফাহমিদা ইসলাম তাসমী
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটার ডিপার্টমেন্ট
YSSE