মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু না খেয়েও দিন দিন রক্তে সুগার লেভেল বেড়েই চলেছে- আপনিও কি এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া মানেই ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কবলে একবার পড়লে সেখান থেকে রেহাই পাওয়া অসম্ভব। এক্ষেত্রে সুস্থ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে সব থেকে বড় শত্রু হচ্ছে মিষ্টি। সাধারণত আমরা মনে করি মিষ্টি জাতীয় খাবার না খেলেই রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু আসলেই কি আমাদের এই ধারণাটি ঠিক?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য নিষিদ্ধ বললেই চলে। তবে মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিলেই যে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য থেকে বিরত থাকলে তা আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও পুরোপুরি সুগারের মাত্রা ঠিক রাখবে না। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর সঠিক কারণ সম্পর্কে আমরা কেউই অবগত নই। এর ফলে দেখা যায়, মিষ্টি না খাওয়ার পরও রক্তে সুগার কখন এবং কীভাবে বেড়ে যায় আমরা জানতেও পারি না। তাহলে দেরি কেনো? চলুন আজ জেনে নেই মিষ্টি না খেয়েও রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়ার কারণসমূহ-
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন না করা
ডাক্তাররা যখন ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট চার্ট তৈরি করেন সেখানে শুরুতেই উল্লেখ থাকে, মিষ্টি, স্টার্চ ও শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু আমরা আমাদের অজান্তেই নানান ধরনের খাবার খেয়ে থাকি যেখানে চিনি, স্টার্চ ও শর্করা প্রচুর পরিমাণে থাকে। হয়তো সরাসরি দেখলে বা খেলে বোঝা যায় না কিন্তু থাকে। যেমন – দুধ, লাল মাংস, ব্রেড, ভাত, কলা, তরমুজ, ফলের রস বা জুস, কেক, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ব্লেন্ডেড কফি, কোল্ড ড্রিংকস, ফাস্টফুড, চাইনিজ এবং নানান ধরনের মুখরোচক খাদ্য। এইসব খাদ্য রক্তে শর্করা ও সুগারের পরিমাণ তীব্র গতিতে বাড়ায়। তাছাড়া পর্যাপ্ত পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন হলে রক্তে সুগার লেভেল কমে যায়।
- সাদা চালের ভাত খেলে
সাধারণ আমরা যে সাদা চালের ভাত খেয়ে থাকি তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কেননা সাদা চালের ভাত খেলে রক্তে সুগার ও শর্করার পরিমাণ অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০১২ সালের এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, সাদা চালের ভাত বা এর দ্বারা তৈরিকৃত কোনো খাবার খেলে রক্তে সুগার লেভেল ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। কেননা এই ধরনের খাবার রক্তে চিনির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
- ইনসুলিনের ভুল ডোজ
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিনের ডোজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু যদি এই ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অসাবধানতা বা ডোজ সামান্য কমবেশি হয়ে যায় তাহলে মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। কারণ এই সামন্য ইনসুলিনের ভুল ডোজ আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা কখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিবে তা আপনি জানতেও পারবেন না।
- একসাথে অতিরিক্ত খাবার খেলে
ডায়াবেটিস রোগীদের সকল ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। এমনকি খাবারও শৃঙ্খলা মেনেই খেতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের কখনই অতিরিক্ত খাবার একসাথে খাওয়া উচিত নয়। আপনি যদি সারাদিন না খেয়ে দিনের শেষে একসাথে বেশি করে খাবার খেতে থাকেন তাহলে উপকার তোহ কিছুই হবে না বরং রক্তে সুগার বেড়ে যাবে।
- ধূমপান ও মদ্যপান করলে
ধূমপান ও মদ্যপান রক্তে সুগারের পরিমাণ তীব্র গতিতে কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগী হোক বা সুস্থ মানুষ এটি সকলের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পরও ধূমপান ও মদ্যপান করতে থাকেন তাহলে আপনার রক্তে সুগার ও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
- পর্যাপ্ত ঘুম না হলে
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম না হলে তা রক্তে সুগার ও শর্করার মাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম সকলের জন্যই প্রয়োজন। আর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তো অনেক বেশিই প্রয়োজন। কেননা রাতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় তাহলে রক্তে সুগার বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা শরীরে শর্করা ও সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম মূল কারণ। আর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সবথেকে বড় শত্রু বলতে পারেন। কেননা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে রক্তে সুগারের মাত্রাও অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা না করা
রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়ার এটি অন্যতম মূল কারণ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকাল ও বিকাল নিয়ম করে এক ঘণ্টা হাঁটাচলা ও হালকা ব্যায়াম করা আবশ্যক। কিন্তু সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীরা এক বেলা বা কয়েক মিনিট হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করেই ভেবে নেন কাজ শেষ। কিন্তু তারা হয়তো এটা ভুলে যান যে, শুধু হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করলেই হবে না শরীর থেকে ঘামও ঝরাতে হবে। যদি নিয়মিত সঠিক নিয়মে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করা না হয় তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
চিকিৎসকরাও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে মিষ্টি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জানি এতো নিয়ম মেনে ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কিন্তু কথায় আছে না, “কষ্ট করলেই কেষ্ট মিলে”। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে এতটুকু কষ্ট তোহ করতেই হবে। শুধু মিষ্টি খেলেই যে রক্তে সুগার বেড়ে যায় এই ধারণা থেকে যত তাড়াতাড়ি পারুন বেরিয়ে আসুন। আর রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলো ভালোভাবে জানুন। কেননা সঠিক কারণ না জানলে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা আস্তে আস্তে এতটাই বেড়ে যাবে যে তা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগও পাবেন না। তবে শুধু নিজে জেনে সচেতন হলেই চলবে না অন্যদেরও জানিয়ে সচেতন করুন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
কাজী সায়মা সিমরান
ইন্টার্ন অফ কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ওয়াইএসএসই।
আমাদের অন্য ব্লগগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন।