রিভার্স সাইকোলজি? ব্যাখ্যা করার জন্য আমি আমার জীবনের কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে দেখুন ! আমি আপনাকে পড়তে নিষেধ করার পরেও আপনি কিন্তু পড়ছেন! ব্যাপারটা একটু পড়েই বুঝতে পারবেন। যাই হোক, চলুন আমার বাস্তব জীবনের গল্পে ফিরে যাই।
একদিন আমার আব্বু আমাকে বলছিলো এখানে (মশা মারার ব্যাট দেখিয়ে) হাত দিও না, ছোট খাটো একটা শক খাবে। সেটা শুনে আমার আরো বেশি করে ওই ব্যাটে হাত দিতে ইচ্ছা করছিলো। কিছু না ভেবে দিয়েই ফেললাম আর সাথে সাথে ছোট্ট একটা শক খেলাম!
আবার আরেকদিন আমার আম্মু বললো, তুমি এত (একটু বড় জগ দেখিয়ে) পানি খেতেই পারবে না। আমি তো শুনে বলি, কে বলেছে পারবো না! তারপর সব পানি খেয়ে তাকে দেখিয়ে দিলাম যে তার ধারণা ভুল। এখানে কিন্তু আম্মু চাচ্ছিল যাতে আমি পুরো পানিটা শেষ করি।
এখানে আমি যেগুলো করলাম, সেটা হলো রিভার্স সাইকোলজি (reverse psychology)।
মানে আপনাকে যা বলা হবে, আপনি তার বিপরীত টাই করতে চাইবেন। আচ্ছা আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি।
রিভার্স (reverse) মানে কী? সোজা বাংলায় বলতে গেলে এর অর্থ হচ্ছে বিপরীত। আর সাইকোলজি মানে তো মনোবিজ্ঞান সেটা আমরা সবাই জানি।
তাহলে, রিভার্স সাইকোলজি হলো এমন একটি মনের সেই কৌশল যেখানে আপনাকে যেটা করতে নিষেধ করা হবে, আপনার সেটা করার প্রতিই বেশি ঝোঁক বাড়বে।
এখন আপনাকে বলছি, আপনি আর ব্লগটি পড়বেন না। নিচে যা যা লেখা আছে আপনি বুঝবেন না।
নিশ্চই তবুও পড়ছেন! কারণ আপনার কৌতূহল জন্মেছে যে, কি এমন আছে যেটা আপনি বুঝবেন না। তার মানে আপনিও রিভার্স সাইকোলজি ক্যাটাগরিতে পড়লেন।
আবার ধরুন, কোথাও সাইনবোর্ড দেওয়া যে “এখানে পার্কিং নিষেধ।“ ঠিক সেখানেই দেখবেন সারি সারি গাড়ি পার্ক করা আছে। আরেকটা একদম পরিচিত ঘটনা হলো, যেখানেই লেখা দেখবে ফুল ছেঁড়া নিষেধ, সেখানেই মানুষজন ফুল ছিঁড়ে বসে আছে! আবার সিগারেট এর প্যাকাটে লেখা “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” সেটা লেখা দেখেও হাজার হাজার মানুষ ধূমপান করছে।এরকম মনোবৃত্তির নামই ‘রিভার্স সাইকোলজি (Reverse Psychology)’|
হিউম্যান ব্রেইন বড়ই অদ্ভুত! আসলে আমাদের ব্রেইন চায় স্বাধীনতা। এর মধ্যে যখন হস্তক্ষেপ আসে তখন আমাদের স্বাধীনতার চিন্তাটা হুমকির মুখে পড়ে। তাই আমরা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাই বিদ্রোহ । তাই নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে প্রমাণ করতেই হয়তোবা নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই। যেটা করতে মানা করা হচ্ছে তার প্রতি উল্টো আগ্রহী হয়ে উঠি। এটাকে বলা যায় আপনার ব্রেইন বিদ্রোহী আচরণ (rebellious behavior)।
According to Reactance Theory, মানুষ যখন চিন্তা করে তার কোন অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন সে চেষ্টা করে সেটার প্রতিরোধ করতে। এ কারনেই তখন ব্যক্তিকে যা করতে বলা হয় তখন সে সেটা না করে তার বিপরীত কাজটি করে।
তবে ‘রিভার্স সাইকোলজি’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক অনুসরণ করতে হয়। কারণ, যার উপর ব্যবহার করছেন সেই যদি বুঝে যায় যে আপনি ‘রিভার্স সাইকোলজি’ ব্যবহার করছেন তাহলে তো সব চেষ্টাই বৃথা। সেজন্য বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে টেকনিকটি খাটাতে হবে।
আবার মানুষভেদে আচার-আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়। তাই ‘রিভার্স সাইকোলজি’ সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য না।
আমাদের মধ্যেই অনেকেই আছে যারা ভীষণ জেদি তাদের উপর ‘রিভার্স সাইকোলজি’ অনেক ভালো খাটে। কিন্তু যারা ভদ্র, শান্ত, চুপচাপ, সবসময়ে সবার কথা শুনতে রাজি তাদের উপর ‘রিভার্স সাইকোলজি’ খাটানো একটু মুশকিল।
তাহলে এখন আপনি নিজেকে নিয়ে ভেবে দেখুন তো, আপনার উপর ‘রিভার্স সাইকোলজি’ কতটা প্রভাব ফেলে?