দিন দিন শরীরের এনার্জি কমে যাচ্ছে সাথেই পাল্লা দিয়ে কমছে কর্মক্ষমতা আর ভর করছে অলসতা- আপনারও কি একই অবস্থা?
শরীরে এনার্জি কমে যাওয়া নিয়ে কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে এই দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে তো অত্যন্ত বেশি ভুগছেন। এই লকডাউনে আমাদের অলসতা যেন দিন দিন তীব্র গতিতে বাড়ছে আর কমছে কর্মদক্ষতা। এর একমাত্র কারণ হলো শরীরে এনার্জি কম থাকা। অনেকেই সারাদিনের পরিশ্রমের পর এতটাই ক্লান্ত হয়ে যায় যে ঠিক মতো হাঁটতেও পারে না। কিন্তু যদি শরীরে এনার্জি থাকে তাহলে কখনোই সহজে ক্লান্তি ভর করতে পারতো না।
শরীরে এনার্জি কমে যাওয়া অস্বাভাবিক বিষয় না। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়। যেমন- অতিরিক্ত কাজের চাপ, অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, দীর্ঘ সময় অবসর, রাতে দেরিতে ঘুমালে বা ঘুম কম হলে, সকালে নাস্তা না করা বা পুষ্টিকর নাস্তা না করা, শরীরে হাইড্রেশনের ঘাটতি, নিয়মিত মেডিটেশন ও ব্যায়াম না করা এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করাসহ আরও নানান কারণে শরীরে এনার্জি ও কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। এই কারণগুলো স্বাভাবিক মনে হলেও এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শরীরে এনার্জির ঘাটতির জন্য কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
শরীরে এনার্জি কমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সকলেরই আছে। এমন কেউই নেই যারা এর হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। তবে আমাদের মূল সমস্যা হল শরীরে এনার্জির কমে গেলে আমরা শুরুতেই তা ধরতে পারি না। নিজেদের মতোই ভেবে নেই অসুস্থ বা ক্লান্তির জন্য শরীর খারাপ করছে। এই কারণে আমরা শুরুতেই শরীরে এনার্জি বাড়ানোর জন্য কিছুই করি না ফলস্বরূপ শরীরে এনার্জির প্রচুর পরিমাণে ঘাটতি হয়ে থাকে। আর এর পেছনে মূল কারণ হলো শরীরে এনার্জি কমে যাওয়ায় যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে অবগত নই। চলুন তাহলে জেনে নেই সেগুলো-
- অলসতা বাড়তে থাকে
- প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভূত হয়
- কাজ করার ইচ্ছে হারিয়ে যায়
- সারাদিন চোখে ঘুম ঘুম ভাব থাকে
- কোনো কাজে মনোযোগ আসে না
- মস্তিষ্কে একটু চাপ পড়তেই মাথা ব্যথা হয়
- হাঁটার সময় শরীরে ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হয়
- সবকিছুতেই অনীহা কাজ করে
- অত্যন্ত অসুস্থতা অনুভব হয়
এই লক্ষণসমূহের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু কখনোই কোনো গুরুত্ব দেই না। আর এখানেই আমরা ভুল করে ফেলি। কেননা এর কারণে এনার্জি যেমন দিন দিন কমতে থাকে তেমনি কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে এবং শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে এনার্জি বুস্ট করবো?
সাধারণত আমাদের শরীরে যদি এনার্জির ঘাটতি দেখে দেয় তাহলে তা বাড়ানোর জন্য ঔষধ সেবন করি, এনার্জি ড্রিংক পান করি এবং ঘন্টায় ঘন্টায় চা বা কফি পান করি। তবে এগুলো কি আমাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত?
এনার্জি ড্রিংকস, চা ও কফি কিছু সময়ের জন্য আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে এনার্জি বাড়ায়। কিন্তু পরবর্তীতে আরও দ্বিগুণ ক্লান্তি অনুভব হয়, শরীর যেন ছেড়ে দেয়। তাছাড়া এনার্জি ড্রিংক আমাদের শরীরের কোনো উপকার তোহ করেই না বরং ক্ষতি বেশি করে থাকে। আর অতিরিক্ত ঔষধ সেবন করা শরীরের জন্য কখনোই ভালো নয়। অনেক ডাক্তাররাও আজকাল পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, ঔষধ যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। তাছাড়া যদি কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে এনার্জি বাড়ানো যায় তাহলে শুধু শুধু তেতো ঔষধ খাওয়ার কোনো মানেই হয় না। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই শরীরে এনার্জি বাড়ানোর ৮টি প্রাকৃতিক উপায় ও টিপস-
- সকালে যেমন তেমন নাস্তা না করে অবশ্যই সকল পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ নাস্তা করে এনার্জি লেভেল বাড়ান।
- সকালে এবং কাজের ফাকে অবশ্যই মেডিটেশন ও ব্যায়াম করে শরীর ও মন সতেজ রাখুন।
- প্রতি দিনে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করে শরীর হাইড্রেট রাখুন।
- রাতে তাড়াতাড়ি এবং অবশ্যই ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- কাজের ফাঁকে বা যে কোনো সময় বাদাম খেয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর এবং এনার্জি বৃদ্ধি করুন।
- পজিটিভ এবং প্রাণবন্ত মানুষদের সাথে বেশি করে মিশে নিজেকেও সেভাবে গড়ে তুলুন।
- অতিরিক্ত কাজের চাপে একটানা কাজ না করে কিছু সময় বিরতি নিন এবং মন ভালো হয়ে যায় এমন কাজ করুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহলসহ যেকোনো খারাপ অভ্যাস থেকে শত হাত দূরে থাকুন।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, মানবদেহে এনার্জির ঘাটতে থাকলে কোনো ধরণের রোগ ছাড়াই প্রচন্ড অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শরীরে এনার্জির ঘাটতি দেখা দিলে শুরুতেই এর কারণ ও লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন এবং প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে এনার্জি বাড়িয়ে এর ঘাটতি পুরণ করুন। তবে যদি অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, শরীরে এনার্জির বাড়ানোর স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলুন, সুস্থ থাকুন।
কাজী সায়মা সিমরান
ইন্টার্ন অফ কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ওয়াইএসএসই।
আমাদের অন্য ব্লগগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন।