শাওমি বলতে গেলে গরিবের আইফোন। কথাটা ভুল না ঠিক তা যদি বিচার করতে হয় তাহলে বলবো যে শাওমিই প্রথম কোম্পানি যারা কিনা কম দামে স্মার্টফোন তৈরি শুরু করলো। এবং তাদের এই কম দামের ফোন জনগণের কাছে ভালোই সাড়া পেয়েছিলো। এই শাওমির কল্যাণেই অন্য কোম্পানিগুলো তাদের ফোনের দাম কমিয়ে ক্রেতাদের হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে।
চাইনিজ ব্র্যান্ড হলেও এই শাওমি ওয়ার্ল্ডওয়াইড পলুলার। বিশ্বের প্রথম সারির ৫টি লিডিং ব্রান্ডের মধ্যে এর অবস্থান রয়েছে। জনপ্রিয় এই কোম্পানি তারা নিজেদের আরো একধাপ এগিয়ে নিতে এই সপ্তাহে তারা তাদের লোগোকে রিডিজাইন করে একটি রিফ্রেশিং লুক দিয়েছে। তিন বছর সময় নিয়ে এবং তিন লাখ ডলার (২.৫ কোটি টাকার বেশী) খরচ করে চায়নিজ ব্র্যান্ড শাওমি তাদের নতুন লোগো তৈরি করেছে। এত চড়াই মূল্যে জাপানিজ ডিজাইনার কেনিয়া হারা আসলে শাওমির কাছে লোগো বিক্রি করে নাই; গল্প বিক্রি করছে। এই গল্প বিক্রির পিছনে রয়েছে এক সুগভীর ম্যাথমেটিকাল, সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট।
শাওমি তাদের নতুন লোগো উন্মোচন করেছে যা অতীতের ব্র্যান্ড লোগো ব্যবহারের ঐতিহ্যবাহী নিয়মকে বিঘ্নিত করছে বলে বলা হচ্ছে। নতুন লোগোটি পূর্ববর্তী বর্গক্ষেত্র লোগোর কোণে একটি নরম, রাউন্ডার কনট্যুর গ্রহণ করে, সাথে পুনঃডিজাইন করা “এমআই” টাইপোগ্রাফি। এর আইকনিক ব্র্যান্ড রঙ কমলা, জীবনযাত্রা এবং তারুণ্য প্রকাশ করে । হাই-এন্ড পণ্য লাইন অ্যাপ্লিকেশন সমন্বয় করতে সম্পূরক রঙ হিসাবে কালো এবং সিলভার রং ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন গতিশীল লোগো দার্শনিক চিন্তাকে আরো আলিঙ্গন করে, লোগোটিকে সত্যিকার অর্থে আরো “জীবিত”(এলাইভ) করে তোলে।
এই রিব্র্যান্ডিং এবং “জীবিত”(এলাইভ) ধারণাটি বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনার, মুসাশিনো আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং নিপ্পন ডিজাইন সেন্টারের প্রেসিডেন্ট কেনিয়া হারার এর সহযোগিতায় করা হয়েছে। শাওমি একটি ব্লগ পোস্টে ব্যাখ্যা করেছে যে শাওমির লোগো ডিজাইন করার সময় কেনিয়া হারা “সুপারএলিপস” গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করেছে। একটি বর্গ এবং একটি নিখুঁত বৃত্তের মধ্যে অসীম বিকল্প আছে, ডিজাইনার সূত্র চলক সমন্বয় করে একটি দৃষ্টিনন্দন গতিশীল ভারসাম্য অর্জন করেছেন। n=3 ব্যবহার একটি বর্গক্ষেত্র এবং একটি বৃত্তের মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য আঘাত করে, ‘জীবিত‘ (এলাইভ) মূল দিকচিহ্নিত করে, যার ফলে নতুন শাওমি লোগো তৈরি হয়। যাদের শেপ সাইকোলোজি নিয়ে আইডিয়া আছে, তারা জানেন যে রাউন্ডনেস আসলে ন্যাচারাল অবজেক্ট এবং বন্ধুত্বের প্রতীক। এই লোগো তাই একসাথে যেমন শাওমি একটা সফিসটেকেটেড টেক কোম্পানি, তার গল্প বলে। তেমন ভাবে শাওমি যে শুধুমাত্র বাক্স বানায় তা না, তারা “Alive”; সেই গল্পও বলে। এই রিব্র্যান্ডিং এর ডিজাইনার সেই গল্পটাকে বিক্রি করেছেন।
শাওমি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, হারা শাওমির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নকশা ধারণা প্রস্তাব করেছে তা হচ্ছে ‘Alive’ (জীবিত)। তিনি বিশ্বাস করেন যে শাওমির উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সুবিধা নিয়ে এসেছে এবং মানুষকে তাদের জীবনের সর্বোত্তম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রদান করে, এবং পরিবেশের যে কোন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ‘Alive’(জীবিত) শাওমির দর্শনকে একটি চাক্ষুষ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে, ব্র্যান্ডকে একটি দৃশ্যমান ভাবমূর্তি প্রদান করে: মানুষ বেঁচে আছে- প্রযুক্তি মানুষ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে- প্রযুক্তিও বেঁচে আছে। প্রযুক্তি সবসময় জীবনের চাহিদা পূরণ করবে। মূলত এইসকল দিক থেকেই তাদের এই নতুন লোগো তৈরি বা আমরা যেটাকে রিব্র্যান্ডিং বলতে পারি।
তাদের এই লোগো দেখে মানুষ প্রথমে এপ্রিল ফুল ভেবে থাকবে সহজেই। কারন খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে এই রিব্র্যান্ডিং আপনি সহজে দেখবেন না। একজন সাধারণ কঞ্জুমার হিসেবে আপনি ভেবে থাকবেন যে চারকোণার এই পুরাতন লোগোকেই তারা রিশেইপ করে একটু কার্ভেচার আকার দিয়ে নতুন লোগো বলে চালিয়ে দিচ্ছে। একটা ব্র্যান্ড যখনই নতুন লোগো উন্মোচন করে থাকে তখন তারা অনেক দিক বিবেচনা করেই করে থাকে। বেশির ভাগ ব্র্যান্ডই এখন মূলত ন্যাচারাল বা সাধারন বা সিম্পল এর দিকে যাচ্ছে। আমরা বড় বড় কোম্পানিগুলোর লোগো রিব্র্যান্ডিং এ মূলত এই জিনিসটাই দেখে থাকি। তারা এই রিব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে এই গল্প শেয়ার করতে চায়। যা কিনা মানুষের মনে একটি বিরাট ইমপ্যাক্ট না ফেলালেও নতুনভাবে নিজেদের পরিচয় ফুটিয়ে তোলার জন্য এই কাজ করে থাকে।
একজন সাধারণ কাস্টমার হিসেবে আমরা বেশিরভাগ সময়ই হয়তো এই স্টোরি বুঝতে পারি না। যখন কোম্পানি বা ব্র্যান্ড থেকে একটা এক্সপ্ল্যানেশন বা এমন কিছু দিয়ে থাকে তখনই মূলত পুরো ব্যাপারটি আমজনতার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে। বেশকিছু ধরেই কম বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে শাওমি তাদের নতুন লোগো উন্মোচন এর পর। কেউ কেউ বলছে এতো টাকা দিয়ে চতুষ্কার থেকে হালকা রাউন্ড শেইপ করতে এতো টাকা খরচ ঠিক হয় নি। অনেকেই বলছে, সাধারণ মানুষ এইসব লোগো দেখে ফোন কিনে না বরং তারা ফোনের কনফিগার দেখে ফোন কিনে।
তবে যে যাই বলুক, আমাদের সবারই সাধুবাদ জানানো উচিত এবং নতুন ভাবে এই লোগোকে গ্রহণ করা উচিত। আশা করা যাচ্ছে বেশ বড়সড় ভাবেই মাঠে নেমেছে শাওমি তাদের ফিউচার প্রোডাক্ট লাইনআপ নিয়ে। দেখা যাক সামনে ার কি কি নতুন কিছু নিয়ে আসে আমদের মাঝে।
বি.দ্র: তথ্যউপাত্ত এবং ইনফরমেশন ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এরকম আরও ফিচারফুল ব্লগ পড়তে আমাদের সাইট ভিজিট করুন। YSSE blog
Tonmoy Dash/ YSSE intern