জীবনযুদ্ধে জয়ী এক সৈনিকের নাম সইচিরো হোন্ডা- যিনি বারংবার ব্যার্থতার পর ও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ছোটবেলা থেকে কলকব্জা নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসতেন তিনি। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে বের হয় যান হোন্ডা অথচ তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। চলে যান রাজধানী শহর টোকিওতে এবং কাজ নেন একটি গ্যারেজে যেখানে কলকব্জা পরিষ্কার ও মালিকের বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন তিনি।
হোন্ডার ইচ্ছে ছিল টয়োটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করবে কিন্তু সাক্ষাতকারের পর চাকরিটা আর কপালে জোটেনি। তিনি তার পিস্টন রিং এর নমুনা উপস্থাপন করেন যা টয়োটা কোম্পানি শুরুতে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু তাই বলে তিনি থেমে যায়নি। দুই বছর ধরে নতুন ডিজাইন তৈরী করার পর, শেষ পর্যন্ত তিনি টয়োটা কোম্পানির সাথে একটি চুক্তি করতে সমর্থ হন।
এই চুক্তি পূরণের জন্য তিনি একটি কারখানা তৈরী করেন। কিন্তু ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুটি বোমার আঘাতে কারখানাটি ধ্বংস হয়ে যায়। উৎপাদন কারখানা পুনরায় নির্মাণ করার পর ১৯৪৫ সালে আবার মিকাওয়া ভূমিকম্পের কারণে সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু তিনি এতেও দমে যান নি।
নিজ ঘরে বসেই বানাতে শুরু করেন স্কুটার। চেষ্টার ত্রুটি না করে রাতের পর রাত নিরলস পরিশ্রম করে যান। প্রথমে সাইকেলের জন্য একটি ছোট্ট ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে তৈরি করেন মোটরচালিত সাইকেল এবং ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “হোন্ডা মোটর কোম্পানি”।
পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে হোন্ডা প্রথম পুরোপুরি নতুন ধরনের মোটরসাইকেল তৈরি করেন। ডি-টাইপের এই টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল ‘ড্রিম’ নাম দিয়ে মার্কেটে ছাড়া হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে তিনি ফোর স্ট্রোক বাইক উৎপাদন শুরু করেন এবং ‘Super Cub’ মডেলের একটি বাইক আমেরিকার বাজারে আনেন। এরপর হোন্ডা কোম্পানি বিশ্বের প্রায় দুইশ’টি বাইক উৎপাদনকারী কোম্পানি এবং জাপানের পঞ্চাশ’টি কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতার করার মাধ্যমে, প্রথম সারিতে চলে আসে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৪ সালের মধ্যেই হোন্ডা সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারারে পরিণত হয়!
এভাবেই শ্রম ও সাধনার বদৌলতে সইচিরোর এ কোম্পানিই হয়ে উঠে বিশ্ববিখ্যাত হোন্ডা কোম্পানি। সইচিরো হোন্ডার অদম্য মনোবলে গড়া স্বপ্নীল শক্তির সাফল্যময় অগ্রযাত্রা আজও বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলছে! মূলত অটোমোবাইল তৈরির ইতিহাসে এই হোন্ডা কোম্পানি যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন এই মানুষটিও তার কর্ম এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে সবার মনে চির জাগরূক হয়ে থাকবেন।
মোঃ সাইফুল ইসলাম / YSSE