পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক উন্নত হবার ফলেই মানুষ উন্নত চিন্তা করতে পারে, ভালো ভালো কাজ করে পুরো পৃথিবীটাকেই পরিবর্তন করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। অসীম ক্ষমতার অধিকারী এই মস্তিষ্ক। তবে বলা হয়ে থাকে, মানব মস্তিষ্ক পূর্ণরূপে বিকাশিত হতে প্রায় ২৫ বছর লেগে যায়! অর্থাৎ, গঠন সম্পন্ন হলেও ২৫ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্ক তার বিকাশের ধারা বজায় রাখে। দেহের অন্যান্য অঙ্গের মত মস্তিষ্কও একটি অঙ্গ। এবং এটি প্রধানতম অঙ্গ। তাই এর কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে আমাদের উচিত যত্নবান হওয়া। কিন্তু কিভাবে তা করা যায়। দেখে নেয়া যাকঃ
১. মেমোরি টেকনিকঃ মস্তিষ্ককে সচল রাখতে এবং স্মৃতিশক্তিকে শাণ দিতে দরকার প্রতিনিয়ত এর ব্যবহার। সেজন্য যেকোন কাজ মনোযোগ দিয়ে করার পাশাপাশি আমাদেরকে শেখা বিষয় স্মরণ করতে হবে বার বার। যেমন, কিছু নতুন ভাষার শব্দ বা কোন বিষয় পড়বার কয়েক ঘণ্টা পর তা কতখানি মনে আছে তা মনে করার অভ্যাস করা যেতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলে নিউরনের সংযোগ তৎপরতা বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তি প্রতিনিয়ত মজবুত হতে থাকে।
২. নতুন কিছু শেখাঃ
বাদ্যযন্ত্র, নতুন ভাষা, নতুন কোনো দক্ষতা আয়ত্তে আনার চেষ্টা মস্তিষ্কে নতুন নতুন কোষ সৃষ্টি করে এবং নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের আরও দক্ষ করে তোলে।
৩. সঠিক খাদ্য নির্বাচনঃ
আমরা যা খাই তা দেহে শোষিত হয়। মস্তিষ্কের পুষ্টি হচ্ছে এই শোষিত খাদ্য ও অক্সিজেন। তাই খাদ্য গ্রহণের সময় সতর্ক হওয়া উচিত। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো, সকল প্রকার তেলেভাজা ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলা। এগুলো দেহের জন্য তো বটেই, মস্তিষ্কের জন্যও ক্ষতিকর। যে সকল খাদ্য মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তার মধ্যে রয়েছে সকল প্রকার শাক (বিশেষ করে পালং শাক), লাল ও সবুজ সবজি, সামুদ্রিক মাছ (ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ), লাল আটা ও ময়দা ইত্যাদি। কম তেলে রান্না করা কিংবা পুরো সিদ্ধ খাবার দেহের আত্তীকরণ প্রক্রিয়া ঠিক রাখে।
৪. ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমঃ
পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে এবং ১-২ ঘণ্টা আগে থেকে ডিজিটাল স্ক্রিন বন্ধ রাখতে হবে। ঘুমানোর আগে বই পড়লে মস্তিষ্কের কোষগুলো ঘুমোনোর আগে উত্তেজিত হয় না। ফলে ঘুম ভালো হয়।
৫. পর্যাপ্ত ব্যায়ামঃ
ব্যায়াম বলতে শারীরিক কসরতই শুধু নয়, বরং হাঁটাচলা, দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি কিছু দৈনন্দিন ব্যাপারের সাথে ভালোভাবে যুক্ত থাকলে দেহের নড়াচড়া বাড়ে। বর্তমানে আমাদের শারীরিক সক্ষমতা কমে যাবার প্রধান কারণ এই ব্যায়ামের অভাব। প্রযুক্তিগত উন্নতি ও আধুনিক জীবন শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়ে আমাদের পূর্বের সুস্থ জীবনকে নষ্ট করেছে। সেই সাথে মস্তিষ্ককেও অলস করে দিয়েছে।
৬. সামাজিকতাঃ
সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আমাদের চিন্তাভাবনাকে আরও বিস্তৃত করতে সাহায্য করে। ইন্ট্রোভার্ট মানুষকে তাই সামাজিক কাজে এগিয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পরিবার ও নিকট বন্ধুদের সাথে নিয়মিত সময় কাটাতে হবে। সুস্থ ও গভীর চিন্তাভাবনার জন্য সামাজিকতার বিকল্প নেই।
৭. ক্রসওয়ার্ড মেলানোঃ
ক্রসওয়ার্ড মেলালে তা আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তার সীমানায় প্রেশার প্রদান করে যা তাকে আরো মজবুত করে বলে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে।
৮. রুটিন ও রিওয়ার্ডঃ
দৈনিক কর্মতালিকা তৈরি করে সেটি সম্পন্ন করা সাপেক্ষে ছোট ছোট পুরস্কার বা রিওয়ার্ড প্রদান করলে মস্তিষ্ক আরও কাজ করতে উৎসাহী হয় এবং তার কর্মক্ষমতাও বিস্তৃত হয়।
সব মিলিয়ে সাধারণ জীবনযাপন ও উন্নত চিন্তা- এই হলো মস্তিষ্কের উপযুক্ত পরিচর্যা।
পলাশ দেব রায়/ ওয়াইএসএসই