যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, জীবনের সফলতা বলতে আপনি আসলে কী বোঝেন? মারাত্মক রকমের একটা এচিভমেন্ট ওরিয়েন্টেড জীবন, নাকি ইনার পিস? ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া আত্মজীবনীমুলক “সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট” একজন সেল্ফ সেন্ট্রিক পর্বতারোহীর স্পিরিচুয়াল জার্নিকে তুলে ধরেছে। ইগো সেন্ট্রিক, এচিভমেন্ট ওরিয়েন্টেড হেনরিক হারারের দীর্ঘ ৭ বছরের তিব্বতে থাকা এবং দালাই লামার সংস্পর্শে এসে যে অভুতপূর্ণ আত্মিক পরিবর্তন এসেছিলে, তাই নিয়েই এই মুভির গল্প।

“সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট” মুভির একটি পোস্টার
দৈর্ঘ্য-১৩৯ মিনিট IMDB: ৭.১/১০
Rotten Tomatoes: ৬০% ফ্রেশ Metacentric: ৫৫%
মুল চরিত্র হেনরিক হ্যারার এর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ব্র্যাড পিট। তার সহকর্মী “পিটারের” চরিত্রে ডেভিড থেউইলস এবং দালাই লামা চরিত্রে ছিলেন জেমিয়েং ওয়াংচুক।
অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ব্র্যাড পিট র্যামব্র্যান্ট এওয়ার্ড লাভ করেন।
১৯৩৯ সালের পটভূমিতে শুরু হওয়া মুভিতে আমরা দেখি হেনরিক তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীকে ফেলে রেখে তিব্বতে নাঙ্গা পর্বত জয়ের অভিযানে বের হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুরু হওয়ায় তাদের “জার্মান” জাতিসত্বার জন্য ব্রিটিশ সরকার দেরাদুন প্রিজন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখে।
একা অনেকবার চেষ্টা করলেও হেনরিক পালাতে সফল হয় না। কিন্তু ইগোর জন্য সে তার বন্ধুদের সহায়তাও নেবে না। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সকলে মিলেই একসাথে পালাতে সক্ষম হয়। এদিকে প্রিজন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায়ই হেনরিক তার স্ত্রীর ডিভোর্স লেটার পায় আর জানতে পারে তার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে।তার স্ত্রী তাকে কখনো তাদের সাথে যোগাযোগ করতে না করে।
অনেক চড়াই উৎড়াই শেষে হেনরিক আর পিটার তিব্বতের রাজধানী নিষিদ্ধ “লাসা” তে গিয়ে পৌঁছে। যাত্রাপথে একদিন সে পিটারকে তার ছেলে সন্তান ও স্ত্রীর ডিভোর্সের কথা জানালে পিটার মানসিকভাবে ভেংগে পরা হেনরিককে পরামর্শ দেয় তার ছোট্ট ছেলের কাছে বাবা পরিচয় দিয়ে চিঠি লিখতে।

মুল চরিত্র হেনরিক হ্যারার এর বিপরীতে ব্র্যাড পিট
এদিকে লাসায় পৌঁছে তারা প্রমাণ করতে সমর্থ হয় তারা কোন ক্ষতি করতে চাচ্ছে না। তখন টিবেটান ডিপ্লোমেট সারোং এর সুপারিশে তারা সেখানে বসবাস করার অনুমতি পায়। তাদেরকে সার্ভে করার কাজ দেওয়া হয়। কিছুদিন থাকার পর পিটার এক স্থানীয় রমণীকে বিয়ে করে থিতু হলেও হেনরিক তার ইগোয়িস্টিক স্বভাবের জন্য কারো সাথেই ভাব জমাতে পারে না। সে সিদ্ধান্ত নেয় সে ফিরে যাবে। তখনি সে তার ছেলের চিঠি পায় যেখানে সে লিখেছে সে তার স্বার্থপর বাবাকে কতটা ঘৃণা করে। মানসিকভাবে ভেংগে পরা হেনরিক ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে।
ঘটনাক্রমে লাসায় আসার পর থেকেই কিশোর দালাই লামার কৌতূহলী চোখে পরে সদা কর্মঠ এবং অস্থির ব্যক্তিত্বের হেনরিক। দালাই লামার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় হেনরিককে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয় হিজ ম্যাজেস্টির শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার। এছাড়াও দালাই লামার অনেক ব্যক্তিগত প্রজেক্ট আর প্ল্যানেরও সে পারসোনাল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে থাকে।
ঠিক এই সময়টাতেই ঘটে আসল ম্যাজিক। ক্লান্ত বিধ্বস্ত ভেঙে পরা ইগোম্যানিয়াক হেনরিক, শান্ত সৌম্যে ভরপুর দালাই লামার সংস্পর্শে এসে কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। ট্রেডিশনাল কারণে হিজ ম্যাজেস্টির সাথে অনেক দুরত্ব মেনে চললেও মনে মনে সে দালাই লামাকে নিজের হারানো সন্তানের মতই স্নেহ করতে থাকে।

দালাই লামা চরিত্রে জেমিয়েং ওয়াংচুক
এদিকে বাম শাসিত চাইনিজরা তিব্বত দখল করার পরিকল্পনা আঁটছিল। তিব্বতীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও যুদ্ধে প্রচন্ডভাবে মার খায় এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরই সেই ডিপ্লোম্যাট সারোং এর বিশ্বাসঘাতক্তায় তিব্বতের পতন ঠেকাতে পারে না।
মুভির একদম শেষে দালাই লামার হায়েস্ট স্পিরিচুয়াল লিডার হিসেবে অরিয়েন্টেশন এর দৃশ্য দেখানো হয়। তার আগে সে হেনরিকের সাথে দেখা করতে চায়, যে কিনা তিব্বত ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিল কেননা তিব্বত এখন চাইনিজদের দখলে। এই দৃশ্যে দালাই লামার আসল স্পিরিচুয়ালিটি প্রকাশ পায়। সে প্রচন্ড ম্যাচিউরের মত হেনরিককে ব্যখ্যা করে কেন তার ফিরে যাওয়া উচিত। “আমি তোমার সন্তান নই হেনরিক, আমি তোমার বন্ধু”। এতদিনে বুকে জমে থাকা সব অভিমানে হেনরিক কান্নায় ভেঙে পরে এবং বিদায় নিয়ে সম্পূর্ণ এক অন্য মানুষে পরিণত হয়ে ফিরে যায়।
মুভির শেষে দেখা যায় পরিবর্তিত হেনরিক তার সন্তানের সাথে উপহার দিয়ে ভাব জমাতে চাচ্ছে।কিন্তু তারপরেও তার ছেলে তাকে গ্রহণ করে না কিন্তু হেনরিকের অনন্ত প্রচেষ্টায় একসময় সে তার বাবাকে ক্ষমা করে দেয় এবং একদম শেষ দৃশ্যে দেখা যায় হেনরিক ও তার ছেলে একসাথে পাহাড়ে উঠছে।
আসল বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে। চমৎকার স্ক্রিনপ্লের মাধ্যমে বইটিকে মুভিতে প্রানসঞ্চার করা হয়েছে। “সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট” যেকোন দর্শকের মনে একটি অন্যমাত্রার প্রশান্তি এবং জীবনমুখী সৌম্য আনতে বাধ্য করবে।
আরো মুভি রিভিউ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
Written by:
Md. Shafkat Imon
Intern, YSSE