আমরা প্রত্যেকে ইন্টারনেটের কল্যাণে ঝাপসা ও খন্ডায়িত ছবি এবং গোলমেলে প্রেরিত শব্দের সাথে পরিচিত । হলোমিটার প্রকৃতি কর্তৃক আরোপিত কম্পাংকের এইরুপ সমতুল্য শব্দ নির্ণয়ের জন্য খোঁজ চালাবে যা পাওয়া গেলে আমাদের মহাবিশ্ব মরীচিকার মত এক প্রকার ভ্রম ব্যতীত কিছুই হবে না । এটি স্থানকালের অন্তঃস্থায়ী আওয়াজকে সনাক্ত করবে যা প্রকৃতি কর্তৃক আরোপিত চূড়ান্ত সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক আমাদের দৃষ্টিগোচর করবে । হোগানের দল যন্ত্রটির একটি এক মিটার লম্বা প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে । তারা পুরো ৪০ মিটার লম্বা হলোমিটারটি তৈরি করছেন এবং তারা আশা করছেন যে, পরবর্তী বছর থেকে এটি তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে ।
হলোগ্রাফিক মূলনীতি নিয়ে একটা ক্ষুদ্র উদাহরন দেই । ধরুন একটা বালতিতে কিছু পানি আছে । বালতিটি যতটুকু পানি ধারণ করতে পারে তা সাধারনভাবে আমরা বালতির আয়তন হিসেবে ধরে নেই । কিন্তু হলোগ্রাফিক মূলনীতি বলে যে, বালতির ধারণক্ষমতা তার আয়তনের চেয়ে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের উপর বেশী নির্ভরশীল । অর্থাৎ কোন একটি নক্ষত্র যে পরিমান শক্তি বিকিরন করবে তা এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভরশীল । একটি সাধারন হলোগ্রামের কাজের প্রকৃতি এই ব্যাপারটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । আর যেকোনো ক্ষেত্র দ্বিমাত্রিক তা সবাই জানেন । আর আমরা ত্রিমাত্রিক কোন দৃশ্য দেখার জন্য দ্বিমাত্রিক কোন পৃষ্ঠের দিকেই তাকাই ।
হলোমিটার নামটি এসেছে হলোগ্রাফিক ইন্টারফেরোমিটার থেকে। এটি দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ইন্টারফেরোমিটার নিয়ে গঠিত । এই দুটির একটির উপর আরেকটা বসানো । প্রতিটা ইন্টারফেরোমিটারে আলোক তরঙ্গ দুভাগে ভাগ হয়ে ভিন্ন পথে ভ্রমণ করে । অতঃপর একটি আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে । তখন তাদের দশাপার্থক্য পরিমাপ করা হয় । যদি কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কম্পনও আলোক তরঙ্গকে বাধাগ্রস্থ করে অর্থাৎ কম্পনাংকের খুব সামান্য হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে তাও ইহা পরিমাপ করবে।
প্রায় ১০০ বছর ধরে ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহৃত হয়ে আসছে । কিন্তু হলোমিটার এদের মধ্যে সবচেয়ে নিখুঁত । এটি পারমানবিক ঘড়ির চেয়েও নিখুঁতভাবে সময় পরিমাপ করতে পারে । উচ্চ কম্পনাংকের শব্দের কম্পাংক নির্ণয়ে এটি খুবই পারদর্শী । হলমিটারের বাইরে বিজ্ঞানীরা কিছু সেন্সর লাগাবেন যাতে সাধারন কম্পনগুলো বাদ দেয়া যায় । প্রশ্ন করতে পারেন যে, মহাবিশ্বের এত আওয়াজের মধ্যে হলগ্রাফিক আওয়াজকে পৃথক করা যাবে কিভাবে? কারণ যেকোনো কম্পাংকের জন্য এর মান ধ্রুবক । নির্মাণাধীন হলোমিটারটির বাহু যেহেতু ৪০ মিটার লম্বা সেহেতু হলগ্রাফিক আওয়াজের কম্পাংক হবে ৩.৭৫ মেগাহার্জ ।
হলোগ্রাফিক আওয়াজকে হোয়াইট নয়েজ বা শ্বেত আওয়াজও বলা হয় । যদি গবেষণাটিতে হলগ্রাফিক আওয়াজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের ত্রিমাত্রিক ধারণার বাইরে মহাবিশ্বের দ্বিমাত্রিক প্রকৃতির প্রমাণ মিলবে অতি ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্ক স্কেলে ।
কাজী রিয়াজুল হাসান,
কন্টেন্ট রাইটিং ইন্টার্ন
YSSE