দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে সফল তরুণ উদ্যোক্তা। যাদের স্বপ্ন আজ তাদের সফলতা। তীব্র অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা আজ সফল। আজ এমনি এক তরুণ উদ্যোক্তা এর সফল হওয়ার গল্প জানব। চলুন জেনে নেই নওগাঁর হিরন আহমেদ এবং তার “বাঁশ বিলাসের” গল্প।
হিরন আহমেদের জন্ম নওগাঁর ধামোইরহাট থানার রাঙামাটির আলমপুর গ্রামে। শৈশব-কৈশর এবং শিক্ষাজীবন কাটান সেখানেই। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়-এ ভর্তি হলেও বিভিন্ন কারণে ডিগ্রি অর্জন করা হয়ে ওঠেনি তার। ২০১৮ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর মা-বোন সহ সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকেই। নিজের মেধা এবং সৃজনশীলতা কে কাজে লাগিয়ে কোনো রকমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন নানান রকমের জিনিস। যা ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
বরাবরই স্বাধীনচেতা মনোভাবের হিরন। নিজ ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেন তিনি। বেশ সংস্কৃতিমনা হিরনের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার টানেই নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রথম ডিজিটাল স্টুডিও “নাট্যমিডিয়া”।
সাল ২০১৪, তখন বাংলাদেশে ছিল ২জি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আর তাকে কাজে লাগিয়েই ইউটিউব থেকে ভিডিও এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় নিজের স্টুডিওকে বাঁশশিল্প দিয়ে মনের মত সাজান যা তার এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এভাবেই তার বাঁশশিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
ইউটিউব থেকে তিনি যে সকল দেশ বাঁশশিল্পে অনেক উন্নত যেমন-ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন এবং এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। নিজ এলাকায় বাঁশের পর্যাপ্ত ঝাঁড় থাকায় বাঁশ সংগ্রহে তার কোনো সমস্যা হয়নি। পর্যাপ্ত গবেষণার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বাণিজ্যিকভাবে কাজ শুরু করার। মাত্র ৩০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে চায়না থেকে মেশিন এনে শুরু করেন তার যাত্রা। এভাবে টুকটাক কাজ করতে করতে কেটে যায় কয়েক বছর। এর মাঝেই নিজেকে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলেন তিনি।
তিনি জানান, বাঁশ দিয়ে কোনো জিনিস তৈরি করতে অনুসরণ করতে হয় নানান প্রক্রিয়া। প্রথমে বাঁশগুলোকে কেটে তা ট্রিটমেন্ট এর জন্য তিনধাপে কিছু রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তিনদিনের জন্য ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর এগুলোকে রৌদ্রে শুকাতে হয় এতে বাঁশ টেকসই হয়। এরপর এর উপর গ্রাফিক্স এর কাজ করে সেগুলোকে বিক্রয় এর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
২০১৯ সালে বাণিজ্যিক ভাবে তিনি তার বাঁশের পণ্য তৈরি শুরু করেন। নিজ এলাকার বাজারের উপর ২০ফিট বাই ১০ফিট এর একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি, যার নাম দেন “বাঁশ বিলাস”। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার একটি নিজস্ব পেইজ রয়েছেন যার নাম ও “বাঁশ বিলাস”। বর্তমানে তার সাথে রয়েছেন আরো ৫ জন তরুণ সহযোদ্ধা। যাদের তিনি নিজ হাতেই কাজ শিখিয়েছেন। মাত্র ৮০টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০০টাকার পণ্য রয়েছে তার বাঁশ বিলাসে। বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব জিনিসের মূল্য খুব বেশি নয়। যেমন, ল্যাম্প ৮৫০-১৭০০টাকা, শোপিস ১৫০-৩০০টাকা, পানির বোতল ৩৫০-৮৫০টাকা, জগ ৫০০-১০০০টাকা ইত্যাদি।
প্রতিনিয়ত ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করছে বাঁশ বিলাস। বাঁশের ফার্নিচার তৈরি করেও ব্যপক সাড়া পেয়েছে। রাজধানী ঢাকাতে ইতোমধ্যেই ৩টি ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছেন হিরন আহমেদ।
তার এই স্বপ্নের বাঁশ বিলাস নিয়ে তিনি আরো এগিয়ে যেতে চান। এলাকার তরুণদের নিয়ে তার শিল্প কে আরো বিস্তৃত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার প্রত্যাশা একদিন শুধু তার নিজের এলাকা কিংবা নিজের দেশ নয়,বিদেশেও তার পণ্যের প্রচার হবে,দখল করবেন বিদেশের বাজারও। সরকারি প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা পেলে তিনি আরো একনিষ্ঠতার সাথে কাজ করবেন।
দেশের শিক্ষিত বেকার এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে হিরন আহমেদ বলেন-“প্রায় তরুণদের মধ্যেই ছোট কাজের প্রতি অনীহা দেখা যায়। কাজ ছোট নাকি বড় তা বিবেচনা না করে সব ধরণের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান,তারা অবশ্যই যেটি নিয়ে কাজ করতে চান সে বিষয়ে প্রচুর জানতে হবে,শিখতে হবে এবং গবেষণা করতে হবে। কাজের প্রতি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে তবেই সফলতা আসবে”।
আমাদের আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ফাহমিদা ইসলাম তাসমী
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE