প্রত্যেকেই ২৪ ঘণ্টা সময় পেয়ে থাকে দিন রাত মিলিয়ে। কিন্তু ক্রমাগত জটিল জীবন যাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা প্রায়ই সময়কে কাজে লাগাতে পারছি না। অর্থাৎ, সব দিক সামলিয়ে নিজের মধ্যে সন্তুষ্টি থাকা যেন দিন দিন দূরে চলে যাচ্ছে। এজন্য আমরা কিছু বিষয় ভেবে দেখতে পারিঃ
১. সময় বেঁধে দেয়াঃ
যেকোন কাজ সম্পন্ন করতে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে আমরা টাইম ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশি ফলাফল পেতে পারি। এক্ষেত্রে কতটুকু সময় দেয়া হবে তা পরিস্থিতির ওপর। যদি বাহ্যিক কোন বাধ্যবাধকতা না থাকে তবে নিজেই লিমিট ঠিক করতে হবে।
২. পূর্বপরিকল্পনাঃ
পেশাদার কর্মক্ষেত্র কিংবা দৈনন্দিন জীবন, আমাদের উচিত পরবর্তী দিনের একটা পরিকল্পনা আগেই করে রাখা। অফিস থেকে বের হবার আগে পরের দিনের কাজের একটা টু ডু লিস্ট করে রাখতে হবে প্রায়োরিটি অনুসারে। এতে করে সারাদিনের কাজের একটা হিসাব থাকবে এবং কোন কাজ যদি করা সম্ভব না হয় তবে পরবর্তী দিনে তা শেষ করার তাগিদ তৈরি হবে।
৩. অল্প পরিশ্রমে বেশি কাজঃ
যদি অল্প পরিশ্রমে অধিক কাজ করা যায় তবে ক্ষতি কি। একটা বিশাল সময় কোন কাজের পেছনে খরচ না করে অল্প সময়ে তা করে ফেলার মানসিকতা থাকতে হবে। যদি তা না হয় তবে বড় কোন কাজের ক্ষেত্রে তা ভেঙে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে করতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফোকাস করতে পারলে কম সময়ে অধিক ফল পাওয়া যায়।
৪. প্যারেটো নীতি (Pareto principle):
এই নীতি অনুসারে আমাদের সারা দিনের সর্বোচ্চ কাজ হয় ২০ ভাগ সময়ে। এই ২০ ভাগ সময়ের কাজের ফলেই ৮০ ভাগ আউটপুট আমরা পাই। ব্যবসার ক্ষেত্রে এই নীতি অনেক ফলপ্রসূ। বেশির ভাগ ব্যবসাতেই ৮০ ভাগ অর্থ আসে বা লাভ হয় ২০ ভাগ ক্রেতার থেকে। এই ২০ ভাগ ক্রেতাকে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখলে ব্যবসায় উন্নতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. পোমোডোরো টেকনিকঃ
এটি একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক পদ্ধতি। এই টেকনিক অনুসারে, আমাদের মস্তিষ্ক একটানা কোন কিছুতে বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারে না। প্রতি ২৫ মিনিট পর ৫ মিনিটের বিরতি নিলে কাজের মধ্যে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে ও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। প্লে স্টোরে Pomodoro timer app ব্যবহার করতে পারেন।
৬. পারফেকশনের চিন্তা না করাঃ
সব কাজ পারফেক্টলি করতে গেলে হতাশ হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই পারফেকশনিস্ট না হয়ে বরং কাজটা করার সময় সাধ্যমতো চেষ্টা করুন। ভুল করার মাধ্যমেই আপনি আরো এগিয়ে যাবেন তাদের থেকে যারা চেষ্টাই করেনি। অভিজ্ঞতাও হবে সমৃদ্ধ।
৭. গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়ে দিন শুরু করুনঃ
আপনার টু ডু লিস্টে যে কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি করার মাধ্যমে দিন শুরু করুন। কারণ দিনের শুরুতে আপনার প্রাণশক্তি থাকে পূর্ণ। তাই তখন অধিকাংশ কাজ করে ফেললে সারাদিনে মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকবেন।
৮. কিছু মোবাইল এপ্লিকেশনঃ
Calendar, Rescue Time, Stay focus ইত্যাদি বিভিন্ন এপ্লিকেশন মোবাইলে ইন্সটল থাকলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা যে সকল সাইট আপনার অনেকটা সময় নষ্ট করে সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক করে দিতে পারবেন।
৯. পুরস্কার পদ্ধতিঃ
যেকোন কাজ শেষ করার সাথে সাথে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। হতে পারে তা এক কাপ চা খাওয়া কিংবা গান শোনা। কিংবা নিয়মিত খাবার খাওয়া। আমাদের মস্তিষ্ক সে কাজের প্রতিই বেশি আগ্রহী হয় যেখানে তার পুরস্কার বা রিওয়ার্ড পাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থেকে স্মার্টলি মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় যত বেশি আয়ত্ত করবেন ততই আপনি চাপমুক্ত হয়ে নির্বিঘ্নে জীবন কাটাতে পারবেন।
পলাশ দেব রায়/ ওয়াইএসএসই