ওয়ার্কপ্লেসে উইজার্ড হয়ে ওঠার গত পর্বের দশটি টিপস এর পরে এবার আরো ৯টি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হবে। কর্মক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ইনফরমেশন প্রাপ্তির উত্থান হলেও ইমেইল এখনও একটি প্রয়োজনীয় জিনিস। আধুনিক কর্মক্ষেত্রে কর্মদক্ষতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি এটি। তবে গড়ে একজন অফিস কর্মী দিনে ১২০টিরও বেশি ইমেল পান, থাকে অসংখ্য ড্রাইভের ও সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের কাজ। ফলে ম্যানুয়ালি কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক রক্ষা করা হয়ে পরে অসম্ভব।
তো এখন কি করা প্রয়োজন? কিছু উপায়ের সাহয্যে আপনি আপনার সংস্থার একটি ভাল ব্যবসায়িক যোগাযোগের মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন এবং এর ইমেল অভ্যাস উন্নত করতে পারেন!
১. আপনার “comms” অনুসারে আপনার চ্যানেলগুলিকে সাজান:
কর্মক্ষেত্রের সকল সদস্যকে পুরস্কৃত করে একটি অভ্যন্তরীণ প্রকল্পের তথ্য পেতে চান? বা একটি কৌতুক শেয়ার করতে চান? ইমেইল করবেন না! বরং ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং প্রোজেক্ট গ্রুপ সেট আপ করুন যাতে করে সময়ক্ষেপণ কমে আসবে।
২. ইমেইলের উত্তর দেওয়ার জন্য দিনের একটি সময় নির্ধারণ করুন:
ইমেইলের সাথে ডিল করার একটি উপায় হল শুধুমাত্র দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলো দেখা। সাধারণত, প্রথমে সকালে এবং তারপর দুপুরের খাবারের পরে তা দেখা যেতে পারে। দিনে দেরিতে আসা ইমেইলগুলি একপাশে রেখে পরের দিন উত্তর দেওয়া যেতে পারে। এইভাবে আপনার ইমেইল প্রতিক্রিয়া ক্যাচ আপ করা আপনাকে বাঁধা ছাড়াই কাজ করার জন্য আরও সময় দেবে। এবং সত্যিই আমাদের ইনবক্স নিয়ন্ত্রণে পেতে ইমেল পাওয়ার জন্য সময় তা সেট আপ করা দরকার।
৩. আপনার প্রয়োজন না হলে নোটিফিকেশন বন্ধ করুন:
আপনি যদি জানেন যে, আপনাকে কিছু নিরবচ্ছিন্ন কাজে নামতে হবে- তবে কয়েক ঘন্টার জন্য আপনার সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। এর অর্থ হল আপনি হয়তো অফিসের কাজে আছেন এবং লোকেরা আপনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করবে। টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হয়ে গেলে অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়।
৪. আপনার ইনবক্সকে গুছিয়ে নিন:
বিভিন্ন ইনবক্সে মেসেজ রিডাইরেক্ট করুন। এটি আপনাকে যে মেসেজগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা বাছাই করতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ, লেবেলিং করে বিষয়াদি ভাগ করে নিন।উদাহরণস্বরূপ – বিক্রয় এবং বিপণন সংক্রান্ত মেসেজ আপনার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হলে আপনি সময় বের করে পরে তা দেখে নিতে পারেন।
৫. পরিপাটি করে বার্তা লিখুন:
আপনি যেভাবে একটি বার্তা পেতে চান সেভাবেই নিজের বার্তা কম্পোজ করুন। সর্বদা একটি সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করুন, সংক্ষিপ্ত করে লিখুন এবং শুরুতেই স্পষ্ট করে দিন যে আপনি কি কি কাজ চাচ্ছেন।
৬. একটি কাট অফ সময় নির্বাচন করুন:
আপনি যদি ক্রমাগত ওভারটাইম করতে থাকেন, তবে কাজগুলো এসেম্বল করা অসম্ভব হয়ে যায়। এটি বন্ধ করতে নিজেকে একটি কাট-অফ পয়েন্টে সেট করতে হবে। নিজেকে শিথীল করে কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে।
৭.দীর্ঘ ফর্দ বানাবেন না:
আপনি যদি কোনো কাজের লিস্ট করে কর্মক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য ইনস্ট্রাকশন তৈরি করতে যান, তবে তা তাৎক্ষণিক হলে এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়। স্বল্প সময়ব্যাপী কাজের ক্ষেত্রে বিস্তারিত কাজের ফর্দ লেখা সময়ের অপচয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি অনুচ্ছেদের বেশি লিখতে হবে মনে হলে এর পরিবর্তে ফোন বা ভিডিও কল দেয়া সহজ হতে পারে। আপনি শুধু আপনার বার্তা আরও দ্রুত ডেলিভার করবেন না, আপনি যাকে কল করছেন তিনি তখনই সাড়া দিতে পারবেন! ফলে আপনি সবার সময় বাঁচাতে পারবেন।
৮. কর্মক্ষেত্রের জরুরী বার্তাগুলো ম্যানেজ করুন:
যখন কেউ আপনাকে একটি জরুরী প্রতিক্রিয়া চাইতে যোগাযোগ করে, কিন্তু বিষয়টি চিন্তা করার জন্য আপনার আরও সময় প্রয়োজন – তখন একটি হোল্ডিং ইমেইল বা বার্তা পাঠান এবং তাদের বলুন আপনি কখন তাদের কাছে একটি সম্পূর্ণ উত্তর পাঠাবেন। ফলে এটি আপনাকে ও তাদেরকে আশ্বস্ত হবার জায়গা দেবে।
৯. আপনার পরিচিত কনট্যাক্টগুলো একত্রিত করুন:
আপনার প্রাপ্ত সমস্ত নিউজলেটার এবং মার্কেটিং ইমেইলগুলি দেখুন। তারপর আপনি যেগুলো নিয়ে আর কাজ আগাতে চান না সেগুলি থেকে অব্যাহতি দিন।
১০. দৈনিক কর্মদক্ষতা পরিমাপের জ্ঞান:
কর্মদক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকারী সফ্টওয়্যারের কাজ জানা প্রয়োজন। এটি আপনাকে অনেক ধরনের দক্ষতার সাথে পরিচিত হতে সহায়তা করে, যার মধ্যে সময়সীমা সেট করা এবং কাজ বরাদ্দ করা সহ অনেক কিছুই রয়েছে। আপনার দলীয় কাজগুলো সারিবদ্ধ থাকতে, সহযোগিতামূলক পরিবেশে কাজ করতে এবং পরিকল্পনাকারী অ্যাপগুলো কাজ করার সময়কে ম্যানেজ করতে সাহায্য করতে পারে। আপনি আরও সহজে, দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে আপনার লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে যেন এগিয়ে যেতে পারেন সেজন্য “প্ল্যানিং সফটওয়্যার” আবশ্যক। একটি ভালো ড্যাশবোর্ড তৈরি করার কাজেই মূলত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহৃত হয়।
ড্যাশবোর্ডে যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকা প্রয়োজন –
- কোন দলের সদস্যরা কোন কাজে কাজ করছেন ।
- প্রতিটি ব্যক্তির একটি কাজের জন্য কতক্ষণ ব্যয় করা উচিত।
- আপনি কিভাবে প্রতিটি কাজ পরিমাপ করবেন তা জানা উচিত।
- কাজ সাইন অফ করার জন্য কে দায়ী তা নজরে রাখা দরকার।
- কোন কাজগুলি পাইপলাইনে রয়েছে, কোনগুলো প্রক্রিয়ারত রয়েছে এবং যেগুলো সম্পূর্ণ হয়েছে তার হিসাব রাখা প্রয়োজন।
- প্রতিটি কাজের সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ডেটা এবং ফাইলগুলি সংরক্ষণ করার জন্যও একটি জায়গা থাকা উচিত।
সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার দলের প্রত্যেকেরই ড্যাশবোর্ডে অ্যাক্সেস থাকা উচিত, যাতে প্রত্যেকের কাছে প্রকল্পের সম্পূর্ণ ওভারভিউ থাকে।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা টিপস গুলো মানার ক্ষেত্রে স্মরণে রাখা প্রয়োজন –
- কাজে যুক্ত হবার পরের দিন- ই ঝটপট কাজ শুরু করার জন্য প্রতিদিনের শেষে পরবর্তী কাজগুলি বরাদ্দ করে ফেলুন। দিনের শেষে, আপনার কর্মপ্রবাহে প্রতিটি কাজের অগ্রগতি দেখুন এবং পরের দিন সকালে শুরু করার জন্য আপনার টিমের বরাদ্দকৃত কাজ নিয়ে ধারণা রাখুন। এভাবে প্রত্যেকের একটি পরিষ্কার, কর্মযোগ্য পরিকল্পনা প্রয়োজন।
- প্রতিটি কাজের বিপরীতে সময় ট্র্যাক করুন। আপনাকে জানতে হবে প্রতিটি কাজে প্রতিটি ব্যক্তি কতটা সময় ব্যয় করছে। এটি করার একটি উপায় হল টাইমশিট সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে লোকেদের নিজস্ব সময় ট্র্যাক করতে সক্ষম করা। কাজটি করার জন্য লোকেদের সৎ হতে হবে, তাই সফটওয়্যার এর ব্যবহার এক্ষেত্রে অধিক ভরসাপূর্ণ। ফলে, আপনি কেবল কাজগুলো কত সময় নেয় সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
- কর্মক্ষেত্রে লোকেদের কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু রয়েছে কিনা তা দেখে নেয়া দরকার। কিছু কর্মদক্ষতা পরিকল্পনাকারী অ্যাপ রয়েছে যা আপনাকে প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্টে নথি সংযুক্ত করতে সহায়তা দেয়। এটি লোকেদের কাজ শুরু করতে সাহায্য করবে এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস করা থেকে বাঁধা দেবে।
- আপনার দল কোন কাজগুলি শেষ করেছে এবং কত সময় নেয় তার সঠিক গণনা রাখা অপরিহার্য। টাইম ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার আপনাকে একটি কাজ সময়মতো সম্পন্ন হয়েছে কিনা, এটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় নিয়েছে কিনা বা দলটি আরও দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা যায় কিনা তা ঠিক করতে সহায়তা করবে।
- আপনি কাজ অপ্টিমাইজ করতে যা শিখেছেন তা ব্যবহার করতে এসকল বিষয় মাথায় রাখা আবশ্যক। একবার আপনি আপনার কর্মপ্রবাহের একটি পরিষ্কার ওভারভিউ পেয়ে গেলে কর্মদক্ষতা উন্নত করার সুযোগগুলি খুঁজে পাওয়া সহজ পাওয়া যাবে। কোন কাজগুলো সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয় তা আবিষ্কার করার পর আপনি প্রযুক্তিতে আরও প্রশিক্ষণ বা বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে পাবেন। আপনি নেতৃত্বের ফাঁকগুলিও লক্ষ্য করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কর্মীরা নিয়মিতভাবে মনে করেন যে তাদের কাছে একটি কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই, তবে আপনার প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। কর্মদক্ষতা বাড়ানোর প্রথম ধাপ হল আপনাকে কোন কাজগুলি অপ্টিমাইজ করতে হবে তা জেনে নেয়া যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুটো পর্বের ২০টি টিপস ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করলে খুব সহজেই ওয়ার্কিং উইজার্ড হয়ে ওঠা সম্ভব!
আমার ব্লগের পূর্বের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Writer
Nusanta Samayel Audri
Content Writing Intern
YSSE