Mediterranean এ অবস্থিত ছোট্ট তবে অসাধারণ সুন্দর একটি বদ্বীপ মাল্টা। আয়তনে এবং জনসংখ্যায় খুব ছোট হলেও এটি সারা বিশ্বের বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের একটি স্থান। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সেরা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে মাল্টায়। মাল্টার শিক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এতটাই অনকূলে যে, UK, USA, India, Canada এবং Australia এর মত বড় বড় দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য এই ছোট্ট বদ্বীপে আসে।
মাল্টা এত সুন্দর আর স্নিগ্ধ একটা দেশ যে এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে মাল্টার বাসিন্দা হয়য়ে যায়। এই ছোট্ট বদ্বীপ মূলত ব্লকচেইন, AI and gaming এর মত উদ্ভাবনী সব প্রযুক্তির জন্য বেশ পরিচিত। এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মাল্টাকে বেছে নেয় উচ্চশিক্ষার জন্য।
চলুন দেখে নেয়া যাক যেসব কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মাল্টাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেয়
স্থায়ীভাবে রেসিডেন্সিঃ
Schengen ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে, মাল্টায় খুব সহজেই শিক্ষার্থীরা স্থায়ী রেসিডেন্সি পেয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা চাইলেই এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে এবং এর জন্য টেম্পোরারি রেসিডেন্সির জন্য যাবতীয় কাগজপত্র এবং অনুমতি খুব সহজেই পেয়ে যায় । এছাড়া স্থায়ী ভাবে রেসিডেন্সি করা শিক্ষার্থীকে নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য সকল ধরনের সহায়তা করে থাকে মাল্টিজ সরকার।
দ্বীপ জীবন , মনোরম আবহাওয়া ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতিঃ
মাল্টা এবং একটি দেশ যা চারপাশ দিয়ে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এবং এখানে সারা বছর খুব মনোরম আবহাওয়া থাকে। Malta খুব ছোট্ট একটি দেশ যেখানে অসাধারণ সব বদ্বীপ, সমুদ্র- সূর্য ও বালির সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমাহার রয়েছে। এছাড়া এখানে প্রায় সারাবছরই অস্যংখ্য প্রাণবন্ত সব উৎসব, নিয়মত খোলা আকাশে বিভিন্ন নাটক ও কনসার্ট আয়োজিত হয়ে থাকে। তাই মনোরম সমুদ্র তীর দর্শন থেকে সমুদ্র তীরে অসাধারণ বিনোদনময় রাত্রি যাপনের জন্য অনেকেই মাল্টায় পড়াশোনা করতে আসে।
মাল্টায় কিছুটা শীত থাকে শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসে এছাড়া প্রায় সারাবছরই মাঝারি ধরনের আবহাওয়া থাকে। সেখানে কখনোই অতি গরম বা অতি শীত পড়ে না । এছারা মাল্টার ল্যাটিন-ইউরপিয় সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক সংস্কৃতির পাশাপাশি বিখ্যাত সব মাল্টিজ রান্না শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ।
বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনঃ
বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান মাল্টায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের কাফারেন্স এর আয়োজন করে থাকে । তাই এখানে থেকে এসব প্রভাবশালী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ খুব সহজেই করা যায়। তাছাড়া ডিজিটাল স্টার্ট আপ ও প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী সব অর্জনের জন্য মাল্টার বেশ সুনাম রয়েছে যা বরাবরই ই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষিত করে। এর পাশাপাশি ইউরোপের সবচেয়ে ফাস্ট গ্রোয়িং অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে পরিচিত ও এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীদের মূখ্য আকর্ষণ।
লোকাল ভাষা জানার অপ্রয়োজনীয়তাঃ
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা হলো ভাষা। ইংরেজি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় এ ভাষায় সবারই বেশ ভালো আয়ত্ত রয়েছে। তবে এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় লোকাল ভাষা গুলোর ক্ষেত্রে। শতকরা ৯০ শতাংশ মাল্টিজ নাগরিক ইংরেজি ভাষায় বেশ পটু এবং এটি মাল্টায় অফিশিয়াল ভাষা হিসেবেও স্বীকৃত। এছাড়া মাল্টার প্রায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সসমূহ ইংরেজিতেই নেয়া হয়ে থাকে। আর এ সুবিধার জন্যই শিক্ষার্থীরা মাল্টাকে বেছে নেয় তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য।
সাশ্রয়ী মূল্যে জীবনযাপনঃ
জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিঘ্নিত করে। মাল্টায় সুলভ মূল্যে খুব ভালো মানের জীবন কাটানো যায় যা ইউরোপের অন্যান্য স্টেটের তুলনায় খুবই কম। খাবার খরচ থেকে শুরু করে থাকার খরচ সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ, টিউশন খরচ একদম হাতের নাগালে। এছাড়া মাল্টায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত খরচ ও খুব কম আর মেডিকেল খরচ তো একদমই নেই।
শুধু খরচ কম তাই নয় – এখানে শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র ইংরেজি দক্ষতা থাকলে খুব সহজে পার্টটাইম জব করতে পারে যা তাদের আর্থিক উন্নয়নের অন্যতম সহায়ক। স্টুডেন্ট ভিসা অনুযায়ী সেসিস্টার চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে প্রায় ১৫ ঘন্টা এবং ছুটির সময় প্রায় ৪০ ঘন্টা পার্টটাইম জব করতে পারে। এছাড়া যেহেতু সারাবছর মাল্টায় ট্যুরিস্ট আসা যাওয়া করে তাই একজন শিক্ষার্থী খুব সহজে ট্যুরিস্ট গাইডলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে। এসকল সুবিধার জন্যই শিক্ষার্থীরা মাল্টাকে তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেয়।
একজন ট্যুরিস্ট এবং শিক্ষার্থী হিসেবে অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা অর্জনঃ
মাল্টার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া সম্পর্কে তো আমাদের আগেই জানা আছে। এছাড়া ঐতিহাসিক সব স্থানের দিক দিয়েও মাল্টা বেশ সমৃদ্ধ। মাল্টায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসা একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই এসব ট্যুরিস্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
সুরক্ষা ও উষ্ণ অভ্যর্থনাঃ
মাল্টা তার সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত। মাল্টায় পড়াশোনা করতে আসলে তাই অভিভাবকরা বেশ নিশ্চিন্তে থাকেন। এছাড়া মাল্টিজ লোকালরা এততাই উষ্ণভাবে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানায় যে, তারা মাল্টিজের নাগরিক নয় সেটা তারা কখনোই বুঝতে পারে না ।
মাল্টার শিক্ষা প্রক্রিয়াঃ
মাল্টা ইউরোপের একটি অংশ। ইউরোপে সাধারণ Bologna Process এ শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন মানসম্মত পড়াশোনা সরবরাহ করে সেটা এ Bologna Process নিশ্চিত করে।
চলুন জেনে নেয়া যাক Bologna প্রসেস সম্পর্কে
Bologna Process সাধারণত তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে আর এ অংশগুলো সাইকেল নামে পরিচিত। অংশ তিনটি হলো ফার্স্ট সাইকেল, সেকেন্ড সাইকেল ও তৃতীয় সাইকেল।
- ফার্স্ট সাইকেল – এটি হলো স্নাতক চক্র। এই ফার্স্ট সাইকেলে যযে কোনো সাবজেক্টের স্নাতক প্রোগ্রাম গুলো সাধারণত ৩ বছরের হয়ে থাকে।
- সেকেন্ড সাইকেল – এটি হলো স্নাতকোত্তর চক্র। এ চক্রে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য সাধারণত ২ বছর সময় লাগে যদিও কিছু বিশেষ সাবজেক্টের মাস্টার্স ডিগ্রি গুলো ১ বছরেই শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম প্রতি ২ বছরে একবার শুরু হয়। আর সেটা অবশ্যই আগের রাউন্ড শেষ হওয়ার পর পরের টা শুরু হয়।
- তৃতীয় সাইকেল – আর তৃতীয় অর্থাৎ শেষ চক্রটি হলো ডক্টরাল বা পিএইচডি চক্র। সাধারণত একটি পিএইচডি প্রোগ্রাম শেষ হতে ৩ বছর লাগে। এই সাইকেলে কিছু কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি টিচার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে পড়াতেও পারে।
আর স্কুল অর্থাৎ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাল্টায় বেশ ভালো সংখ্যক মান সম্মত স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্কুল হলো University of Malta এটি প্রায় ২০০ বছর আগে Msida অঞ্চলে স্থাপিত হয়েছিল এবং আজ অবধি সেরা ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন সেরা কোর্সগুলো এখানে আয়োজন করা হয়। এছাড়া Valletta অঞ্চলের European Graduate School, Paola অঞ্চলের MCAST (Malta College of Arts, Science and Technology) স্কুল এবং GBSB Global Business School এর মত মানসম্মত অনেক স্কুল রয়েছে। আপনি যে সাবজেক্টেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান না কেন, একটি রিসার্চ করলেই মাল্টায় সে সাবজেক্টের উপর বিখ্যাত কোনো না কোনো স্কুল পেয়ে যাবেন ই।
আপনি যদি EU এর বাইরে থেকে মাল্টায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চান, তাহলে সাধারণত নিমোক্ত বিষয়গুলো আপনার প্রয়োজন হতে পারেঃ
- সঠিক ভাবে সম্পন্ন একটি ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম- এই ফর্মটি আপনার দেশের যেকোনো মাল্টিজ এম্বাসি কিংবা মাল্টিজ কনস্যুলেট এ যোগাযোগ করলেই পেয়ে যাবেন।
- পাসপোর্ট ও আপনার পাসপোর্ট সাইজ দুটো ছবি।
- আপনি যে স্কুলে পড়তে যাচ্ছেন সেখানকার স্বীকৃতিপত্র – এই স্বীকৃতি পত্রে আপনার কোর্সের স্থায়িত্ব ন্যূনতম ৩ মাসের বেশি হতে হবে।
- আর্থিক অবস্থার নিশ্চয়তা- আপনাকে স্কলারশিপ এর প্রমাণ পত্র কিংবা নিজস্ব অর্থায়নে গেলে আপনি ন্যূনতম। প্রতিদিন ১৮ ইউরো খরচ করতে সক্ষম সেটার প্রমাণ দিতে হবে।
- আপনি থাকার জন্য কোথায় এবং কই ব্যবস্থা করেছেন তার প্রমাণ পত্র দেখাতে হবে।
- মিনিমাম ৩০০০০ হাজার ইউরো সমপরিমাণ হেলথ ইন্সুরেন্স এর প্রমাণ দেখাতে হবে।
- ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশীপের ক্ষেত্রে আপনার কোর্স শেষ হওয়ার পর পরই আপনি আপনার দেশে ফিরে আসবেন তার প্রমাণ যেমন ফেরত আসার প্ল্যানের টিকিট।
আপনার আবেদনপত্র এবং একসেপটেন্স লেটার এর রিসিট রাখতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো আপনার প্রতিটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই ইংরেজিতে থাকতে হবে। এছাড়া আপনার এপ্লিকেশ্ন প্রসেসের জন্য সাধারণত ৩/৪ সপ্তাহ সময় লাগে এবং আপনার ভিসার মেয়াদ কেবলমাত্র আপনার কোর্স শেষ হওয়া অবধি থাকবে। তাছাড়া আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আপনি পড়শোনার জন্য সেটা আরো ১ বছর বাড়াতে পারবেন।
মাল্টা একটি দ্রুত বর্ধনশীল দেশ এবং এর শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাপী অন্যতম শান্তিশালী দেশ হওয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টার অন্যতম সেরা পরিবেশ রয়েছে। শিক্ষা ছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সুন্দর মাল্টিশ ল্যান্ডস্কেপ, দুর্দান্ত খাবার এবং স্বল্প খরচে জীবনযাপন পছন্দ করবে। তাই আপনার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি এসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে নিজেকে সঠিক ভাবে প্রস্তুত করুন।
আমাদের আরো ব্লগ পড়ুন- এখানে
Author
Mahmuda Sultana Mim
Intern, Content Writing Department
YSSE