গত পর্বে Debt Trap Diplomacy, চায়নার Belt and Road Initiative, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর এবং লাওসের রেলপথ নির্মাণে চীনের বরাদ্দ অর্থের পরিণাম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।
আজ দ্বিতীয় পর্বে নাইজেরিয়া এবং কেনিয়ার মোম্বাসা পোর্ট নির্মাণে চীনের আলোচিত ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং ঋণের ভবিষ্যৎ কেমন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
শুরুঃ
‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ কথাটি এখন উন্নয়ন ডিসকোর্সে একটি বহুল প্রচলিত অভিযোগ। চীন তার বিশ্ব আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রধানত মহাসড়ক, রেলপথ, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট, খনিজ আহরণ প্রকল্প ইত্যাদি ভৌত অবকাঠামোতে সহজ শর্তে যে বিপুল ঋণ প্রদান করছে, তাতে বেশির ভাগ দেশ প্রলুব্ধ হয়ে এমন সব প্রকল্পে এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করছে, যেগুলোর ‘ইকোনমিক ফিজিবিলিটি’ (Economic Feasibility) নড়বড়ে হওয়ায় প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর ওই সব প্রকল্পের আয় থেকে সুদাসলে চৈনিক ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
ফলে এসব দেশ একের পর এক চৈনিক ঋণের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়ে ওই প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃত্ব চীনকে অর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা চীনকে নিজেদের সার্বভৌমত্ববিরোধী নানা সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
Threat of Nigeria’s Sovereignty:
নাইজেরিয়াও পড়েছে তাদের এই ঋণ ফাঁদের কবলে। এখানেও খলনায়কের নাম চীনের এক্সিম ব্যাংক (EXIM= The Export-Import Bank Of China)। ২০১৮ সালে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, চীনের ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ যদি সময়মত পরিশোধ করতে সক্ষম না হয় নাইজেরিয়া তাহলে, দেশটির সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে পড়বে।
চীন বর্তমানে নাইজেরিয়ার বৃহত্তম বিদেশী বানিজ্যিক অংশীদার এবং সবচেয়ে বেশি ঋণদাতা। ওয়েষ্ট আফ্রিকান ন্যাশনস ম্যানেজমেন্ট (West African Nations Management) এর তথ্যানুযায়ী দ্বিপক্ষীয় ঋণের ৮০ শতাংশই চীন কাছ থেকে নিয়েছে নাইজেরিয়া। আফ্রিকার সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী দেশটিকে চীন এখন ঋণ দিয়ে রেলপথ নির্মাণ, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য।
ইতোমধ্যে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন নাইজেরিয়াকে। এগুলো শোধ করার তো নামগন্ধই নেই উলটো আরও নানা প্রজেক্টে এর চেয়েও বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে চীন।
Kenya’s Mombasa Port:
হাম্বানটোটার মত কাছাকাছি ঘটনা ঘটতে পারে কেনিয়াতেও। চীনের ঋণের ফাঁদে পড়েছে দেশটির সরকারও। সময়মত চীনের ঋণ যদি পরিশোধ করা না হয় তাহলে দেশটির প্রধান সমুদ্র বন্দর মোমবাসা পোর্ট (Mombasa Port) এর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
জ্বি যারা ধরতে পেরেছেন আর যারা পারেননি, এখানেও খলনায়কের নাম চায়না এক্সিম ব্যাংক; ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নব্য ভার্সন। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছরের মধ্যে কেনিয়াকে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কেনিয়ার মত অর্থনীতির দেশের জন্য ১৫ বছর কেন, পঞ্চাশ বছরেও এই বিশাল অঙ্কের ঋণ শোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে কি হবে বলুন তো?
পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে মোম্বাসা বন্দরকেও ১০০ বছরের জন্য নিজেদের জিম্মায় নিবে চীনের কোনো কোম্পানি। নিজেদের বন্দরকে কেনিয়াকে ব্যবহার করতে হবে টাকার বিনিময়ে। হাম্বানটোটার মত আরেকটি চিত্র নাট্য সেখানেও লেখা হবে খুব শীঘ্রই।
আগামীকাল তৃতীয় পর্বে জাম্বিয়ার কপার এবং গিনির বক্সাইট খনিতে চীনের নজর, চীনের অর্থসহায়তার ধরণ এবং জামানত, চীনা সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন।
লেখকের অন্যান্য (Metaverse, Paypal Mafia, Billion Dollar Company Shopify, Media Empire Disney, Nike, Story Brand By Donald Miller, Big Bazar Of CEO’s) ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
আমাদের আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
Writer
Mubtasim Itmam Bijoy
Content Writing Intern
YSSE